ভারতের এখানেই পা পড়েছিল যীশু খ্রিষ্টের, ইতিহাসের চরম বিতর্ক


Odd বাংলা ডেস্ক: ভারতের এই রাজ্য নিয়ে রাজনীতি চলছে প্রায় স্বাধীনতার পর থেকেই। রয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ, পাকিস্তানের সঙ্গে টানাপোড়েনও। তবুও মানুষ মুগ্ধ এই স্বর্গরাজ্য নিয়ে। কাশ্মীর মানে শুধুমাত্র ডাল লেকের রঙিন শিকারা বা মুঘল গার্ডেন নয়। তার অন্দরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পেহেলগাঁও, সোনামার্গ, বেতাব ভ্যালির মতো নানা মনকাড়া জায়গাও। তেমনই এক স্থান ইয়াশুমার্গ। শ্রীনগর থেকে দূরত্ব মোটামুটি ৪৭ কিলোমিটার। উর্দু শব্দ ‘ইউসুফ’ ও ‘মার্গ’ যুক্ত হয়েই এ জায়গার নাম হয় ইয়াশুমার্গ। প্রসঙ্গত, খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশুকেই, আরবি ভাষায় ইউসুফ নামে অভিহিত করা হয়। আর মার্গ শব্দের অর্থ মাঠ। ছোট্ট একটি জনবসতি চারারে শরিফ থেকে ১৩ কিলোমিটার গেলেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে বিস্তৃত সবুজ। পিরপঞ্জল পর্বতমালার ইয়াশুমার্গে থাকার ব্যবস্থা সে ভাবে কিছু নেই। তবে পিকনিক করতে বা সপ্তাহান্তে সময় কাটাতে স্থানীয়রা বেশ ভিড় জমান এখানে। ঝিলাম নদীর একটি শাখা, দুধগঙ্গা বয়ে গিয়েছে ইয়াশুমার্গের পাশ দিয়েই। পাহাড়ি নদীর দুধ-সাদা ফেনার রঙের জন্যই এমন নাম তার। 

 যাঁরা ট্রেকিং করতে পছন্দ করেন, তাঁরা অনায়াসেই অ্যাডভেঞ্চারের মজা নিতে পারেন। কারণ দুধগঙ্গা থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার গেলেই দেখা পাওয়া যায় সাং-এ-সাফেদ ভ্যালি, যা গরমের সময়েও বরফে ঢাকা থাকে। ইয়াশুমার্গ থেকে ফেরার পথে অবশ্যই দেখে নেওয়া যেতে পারে চারারে শরিফ। ১৯৫৫ সালে ভারতীয় সেনা ও ইসলামিক মুজাহিদিনের মধ্যে লড়াইয়ে সম্পূর্ণ শহরটিই প্রায় পুড়ে গিয়েছিল। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ৭০০ বছরের পুরনো একটি মসজিদও। শহরটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনও রয়ে গিয়েছে সেই ঘটনার প্রমাণ।


মূলধারার খ্রিস্টান সাহিত্য এই দাবি উড়িয়ে দেয় | তবে যিশু তথা খ্রিস্ট ধর্মে ভারতীয় প্রভাব নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে | তার মধ্যে অন্যতম লুই জাকোলিথের বই ‘লা বাইবেল দাঁ ল্যাঁদ’ | অর্থাৎ দ্য বাইবেল ইন দ্য ইন্ডিয়া | তবে জাকোলিথ একবারও দাবি করেননি যিশু ভারতে এসেছিলেন | তিনি তুলনা করেছেন কৃষ্ণ এবং যিশুর জীবন | ক্রাইস্ট এবং কৃষ্ণের নামের মধ্যেও মিল খুঁজে পেয়েছেন তিনি | অন্যদিকে জাকোলিথের তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছেন জার্মান পণ্ডিত ম্যাক্স মুলার | জাকোলিথের থেকে আবার আরও এক কদম এগিয়ে গেছেন নিকোলাস নোটোভিচ | এই রাশিয়ান যুদ্ধ-সাংবাদিক ১৮৮৭ সালে গিয়েছিলেন লাদাখে | সেখানে হেমিস বৌদ্ধ মঠে তিনি জানতে পারেন Life of Saint Issa, Best of the Sons of Men সম্বন্ধে | ইসলামে আরবি ভাষায় যিশুকে ইসা বলে বর্ণনা করা হয়েছে | এর উপর ভিত্তি করে নিকোলাস বই লেখেন | ১৮৯৪ সালে ফরাসি ভাষায় সেই বই প্রকাশিত হয় | নাম,’ লা ভি ইনকনিউ দ্য জেসাস ক্রাইস্ট'(Unknown Life of Jesus Christ) | ইংরেজিতে যার অনুবাদ বের হয় Life of Saint Issa বলে | এই মতের তীব্র বিরোধিতা করেছেন মার্কাস বোর্গ | তাঁর দাবি, প্রাপ্তবয়স্ক যিশু ভারত এবং মিশরে গিয়েছিলেন, এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন | এই দাবির সমর্থনে এগিয়ে এসে আরও অনেক বিদগ্ধ ব্যক্তির মত, বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে যিশুর সান্নিধ্য নিয়ে কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই | যিশুর মৃত্যু নিয়েও আছে প্রশ্ন এবং দ্বন্দ্ব | অনেক মত বলে, যিশু কাশ্মীর অথবা রোমে মারা গিয়েছিলেন | Ahmadiyyas-এর প্রতিষ্ঠাতা মির্জা গুলাম মনে করতেন, ১২০ বছর বয়সে কাশ্মীরে প্রয়াত হন যিশু | সেখানে তাঁর নাম ছিল ইউজ আসফ| অষ্টাদশ শতকের কাশ্মীরের সুফি কবি খাজা মহম্মদ আজম দিদামারিও উল্লেখ করেছেন এই ইউজ আসফের কথা | এবং এই আসফ নাকি একজন বিদেশি যুবরাজ ছিলেন | পশ্চিমের কিছু ভারতবিদ আবার বলেন, কাশ্মীর বা রোম নয় | যিশু প্রয়াত হয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধের প্রয়াণের শহর, কুশিনগরে | এসব পুরনো তত্ত্বের পাশাপাশি গত নয়ের দশকে উঠে আসে আরও বেশ কিছু তত্ত্ব | বলা হয়, জেসাস এবং জুডাস ইসক্যারিয়টকে একসঙ্গে ক্রুশবিদ্ধ করা হয় | জুডাস মারা গেলেও বেঁচে যান জেসাস | মেরি ম্যাগডালেনকে বিয়ে করে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে তিনি চলে যান রোমে | ১৯৯২-এ Man Barbara Thiering প্রচারিত এই মতের পাশাপাশি ১৯৯৫-এ Kenneth Hosking বলেন, ক্রুশবিদ্ধ জেসাস প্রাণে বেঁচে যান | তারপর কয়েক দশক বাদে তিনি ইহুদি বাহিনির নেতা হিসেবে মারা যান | এই বাহিনিই রোমানদের বিরুদ্ধে মাসাদার যুদ্ধ লড়ে পরাজিত হয় |
Blogger দ্বারা পরিচালিত.