ভারতের বুকে থাকা এক অভিশপ্ত রত্ন, যার কাছে থাকে তারই হয় মৃত্যু
Odd বাংলা ডেস্ক: রক্তমুখী নীলা নিয়ে কম-বেশি রহস্য পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই বিরাজমান। লোকবিশ্বাস— এই নীলা সকলের সহ্য হয় না। অনেক সময়েই এই নীলা তার মালিককে সম্পূর্ণ বিপর্যয়ের পথে নিয়ে যায়। এমনকী, এই নীলার প্রভাবে তার মালিকের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
রক্তমুখী নীলার এই অভিশপ্ত চরিত্রের সব থেকে উজ্জ্বল উদাহরণটি সম্ভবত ‘দিল্লি পার্পল স্যাফায়ার’ নামে পরিচিত পাথরটি। ভারতের ইতিহাসে অন্যতম অভিশপ্ত বস্তু হিসেবে পরিচিত এই পাথরটির বর্তমান ঠিকানা লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম। মিউজিয়ামের কিউরেটর পিটার ট্যান্ডি এই রত্নটি যে বাক্সে রক্ষিত রয়েছে, তাতে এক খণ্ড কাগজ দেখতে পান। এই কাগজেই নাকি লেখা ছিল এই রত্নের ‘অভিশাপ’ সম্পর্কে।
ঘটনার শুরু ১৮৫৭ সালে। তখন দেশে সিপাহি বিদ্রোহ পুরোদমে চলছে। বিদ্রোহকালীন অস্থিরতার সুযোগে ব্রিটিশ সৈন্যদের দ্বারা কানপুরের এক ইন্দ্র মন্দির লুণ্ঠিত হয়। রত্নটি এই মন্দিরের দেবতা ইন্দ্রের ভূষণ ছিল বলেই অনুমান। পরে এই রত্ন কর্নেল ডব্লিউ ফেরিস নামের জনৈক সেনানায়কের কবজায় ছিল। তিনি এটিকে ইংল্যান্ডে নিয়ে যান। ইংল্যান্ডে পা দেওয়ার পর থেকেই ফেরিস বিভিন্ন রকমের আর্থিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে থাকেন। পরিবারের অনেকের অসুখ-বিসুখও দেখা দিতে শুরু করে। ফেরিস, কেমন করে জানা নেই, ওই পাথরটিকেই তাঁর দুর্দশার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিন তাঁর এক বন্ধুকে নীলাটি দান করেন। কিন্তু সেই বন্ধু কিছুদিনের মধ্যেই আত্মহত্যা করেন।
ইন্দ্রদেব। ছবি: উইকিপিডিয়া
১৮৯০ সালে এই নীলা এডওয়ার্ড হেরন-অ্যালেন নামের জনৈক লেখকের অধিকারে আসে। অ্যালেন ছিলেন অতি প্রতিভাবান ব্যক্তি। তিনি এই নীলার কাহিনি জানতেন। কিন্তু তিনি কোনও রকম সংস্কারের দাসত্ব করতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু নীলা তাঁর কাছে আসার পর থেকেই ঘটে যেতে থাকে একের পরে এক অঘটন। তাঁকে মাঝে মাঝেই দেখা দিতে থাকে কোন হিন্দু যোগীর প্রেতাত্মা। তিনি নাকি তন্ন তন্ন করে ওই নীলাটি খুঁজতেন।
১৯০২ সালে অ্যালেন নীলাটি এক বন্ধুকে রাখতে দেন। বন্ধুটির জীবনে নেমে আসে অশান্তির কালো ছায়া। তিনি তড়িঘড়ি পাথরটি অ্যালেনকে ফেরত দিয়ে দেন। অ্যালেনের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে নানা দুর্ঘটনায়। তিনি নীলাটিকে রিজেন্ট ক্যানাল নামের এক খালের জলে নিক্ষেপ করেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই খাল সংস্কার করার সময়ে এই নীলা উঠে আসে। নীলাটিকে অ্যালেন একটি আংটিতে বসিয়েছিলেন। তাতে তাঁর নামও খোদাই করা ছিল। ফলে পাথরটি তাঁকে ফেরত দেওয়া হয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই পাথরটিকে বিদেয় করেন। এক বন্ধুকে তিনি এটি দিয়ে দেন। এই বন্ধুটির জীবনেও নেমে আসে বিরাট সব বিপর্যয়। তিনি অ্যালেনকে ফেরত দিয়ে দেন পাথরটি। অ্যালেন সেটিকে পর পর সাতটি বাক্সে বন্দি করে রাখেন। তার পরে সেটি ব্যাঙ্কের ভল্টে রেখে দেন এবং নির্দেশ দেন যে, তাঁর মৃত্যুর আগে যেন এই বাক্সগুলি না খোলা হয়।
এডওয়ার্ড হেরোন-অ্যালেন। ছবি: উইকিপিডিয়া
১৯৪৪ সালে হেরন-অ্যালেন মারা যান। তার পরেও ৩৩ বছর বাক্সগুলি খোলা হয়নি। অ্যালেনের মেয়ে রত্নটিকে ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে দান করে দেন। ১৯৭২ সালে মিউজিয়ামের কিউরেটর পিটার ট্যান্ডি বাক্স খোলেন এবং সেই কাগজটি পান, যেখানে এক খোলাচিঠির আকারে লেখা ছিল এই নীলার অভিশাপের কথা। বলাই বাহুল্য, এই চিঠিটির লেখক অ্যালেন। না, তার পরেও রত্নটিকে গিরে অঘটন ঘটা বন্ধ হয়নি। ২০০৪ সালে হেরোন-অ্যালেনের স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নীলাটি পাঠানো হয়। তীব্র ঝড়-বৃষ্টিতে সেখানে অনেকেই আহত হন। মনে রাখতে হবে, রত্নটির আদি অধিকর্তা ইন্দ্র কিন্তু বজ্র-বিদ্যুতের দেবতা।
মনে করা হয়, ‘দিল্লি পার্পল স্যাফায়ার’ দুঃখ ও দুর্দশার রত্ন। আজও লন্ডনের ন্যাচার হিস্ট্রি মিউজিয়ামে এটি প্রদর্শিত রয়েছে। আপাত নিরীহ পাথরটিকে দেখলে বোঝা যায় না, কী রহস্য একে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে।
Post a Comment