প্রতিবছর ১৭ই মার্চ আসে এই পিশাচ, নিয়ে আসে সৌভাগ্য! কীভাবে জেনে নিন
ODD বাংলা ডেস্ক: তার পরনে সবুজ পোশাক। মাথায় টুপি। এবং দেখতে বেশ গোলমেলে। হাইট মেরেকেটে দু’ফুট। তার উপরে দাড়ি-দুড়ি মিলিয়ে তার চেহারা মোটেই সুখকর নয়। অথচ বসন্তকালে সেই নাকি নিয়ে আসে সৌভাগ্য। এমনই বিশ্বাস আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দাদের।
এই আজব প্রাণীটি একটি পৈশাচিক জীব। এর নামটাও খটোমটো— ‘লেপ্রেচওন’। আয়ারল্যান্ডের লোকবিশ্বাস, লোপ্রেচওন মানুষকে সৌভাগ্য এনে দিতে পারে। তারা এমনিতে নাকি জুতো সেলাই করে। কিন্তু তাদের সন্ধানে থাকে সোনা। হ্যাঁ লেপ্রেচওন জানে লুকিয়ে রাখা সোনার হদিশ। তাদের নিজেদের কবজাতেও লুকোনো সোনা থাকে। আয়ারল্যান্ডের অসংখ্য লোক-কাহিনিতে দেখা যায়, গুপ্তধন সন্ধানকারীরা লেপ্রেচওনের খোঁজ করে। তারা তাকে ধরতে পারলে গুপ্তধন হাতানো জলের মতো সহজ। লেপ্রেচওন পাকড়ানো বেশ কঠিন। আরও কঠিন তাদের ধরে রাখা। যারা লেপ্রেচওন ধরে, তারা নাকি দিন-রাত এক করে জেগে থাকে আর সে খর্বুটে পিশাচকে পাহারা দেয়। সুযোগ পেলেই লেপ্রেচওন পালায়। সেই সঙ্গে তাকে যেরা বন্দি করেছিল তাদের বেশ খানিকটা ক্ষতিও করে দিয়ে যায় সে। আর সে পালিয়ে গেলে গুপ্তধন প্রাপ্তির কোনও সম্ভাবনা তো থাকেই না। বরং, যা ধনসম্পদ রয়েছে, তাও সে নিয়ে পালায়। লেপ্রেচওনরা সবাই পুরুষ। তারা একলা থাকতেই ভালবাসে।
১৭ মার্চ সেন্ট প্যাট্রিক’স ডে। আয়ারল্যান্ডের খ্রিস্টীয় সন্তমণ্ডলীর প্রধানতম এই সেন্ট প্যাট্রিক। এইদিন সেই সন্ন্যাসীর প্রয়াণদিবস। কথিত আছে, সেন্ট প্যাট্রিককে ১৬ বছর বয়সে জলদস্যুরা ব্রিটেন থেকে অপহরণ করে আয়ারল্যান্ডে নিয়ে আসে সপ্তম শতকে। তিনি সেখানে পশুচারণের কাজ করতেন। তার পরে তিনি সেখান থেক পালাতে সমর্থ হন এবং ব্রিটেনে পরিবারের কাছে ফিরে আসেন। একসময়ে তিনি সন্ন্যাস নেন এবং দিব্যপুরুষ হিসেবে খ্যাত হন। জন্মসূত্রে আইরিশ না হলেও তাঁকে আয়ারল্যান্ডের মানুষ তাঁদের অভিভাবক হিসেবেই মানে। ১৭ মার্চ তাঁর স্মরণে এদেশে পালিত হয় বিশাল উৎসব।
সেন্ট প্যাট্রিক’স ডে-র সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হয় লেপ্রেচওন? আইরিশ লেকবিশ্বাস, সেন্ট প্যাট্রিক’স ডে তাদের সমৃদ্ধি এনে দেয়। আসলে কিন্তু এই দিনটি আত্মচিন্তার ও আধ্যাত্মিকতার। এই দিনের প্রধান প্রতীক হলে শ্যামরক নামের এক গুল্মের পাতা। সবুজ রংয়ের ত্রিপর্ণ শ্যামরক আসলে হোলি ট্রিনিটির প্রতীক। কিন্তু পরে এই সবুজ রং চড়ে যায় লেপ্রেচওনের পোশাকে। সমাজবিদদের মতে, বসন্তের এই উৎসবের পিছনে রয়েছে সম্ভাবনা। কৃষির সম্ভাবনা, সমৃদ্ধির সম্ভাবনা। সেখান থেকেই রূপকথার লেপ্রেচওন জুড়ে যায় সেন্ট প্যাট্রিক’স ডে-তে।
সবুজ পোশাকে লেপ্রেচওন সেজে লক্ষ লক্ষ মানুষ এইদিন নেমে পড়েন রাস্তায়। সকলেই সৌভাগ্যকে খোঁজেন, পেতে চান লুকোনো সুখের হদিশ। লেপ্রেচওন সেই গুপ্ত সুখের সন্ধান জানে। সেই সুখই প্রতীকায়িত হয়ে সোনা। কিন্তু এক সাবধানবাণীও শোনায় আইরিশ কিংবদন্তি। লেপ্রেচওনের সোনা কিন্তু গোলমেলে। তাকে ভোগ করা অত সহজ নয়। সেই সোনা থাকে রামধনুর প্রান্তে। তাকে খুঁজে পেলে জীবন বদলে যায়।
Post a Comment