ওরা এখন মৃত্যুর অপেক্ষায়
Odd বাংলা ডেস্ক: দক্ষিণ আমেরিকায় পৃথিবীর সবচাইতে ঘিঞ্জি ও জনাকীর্ণ কিছু কারাগার রয়েছে। কোন কোনটিতে ছোট একটি কামরায় ডজনডজন কয়েদিকে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা এখানে অসম্ভব। চিকিৎসা ব্যবস্থাও অপ্রতুল।
যার অর্থ হচ্ছে করোনাভাইরাস যদি এখানে সংক্রমতি হয় তাহলে তা ছড়িয়ে পড়বে দাবানলের মতো।
কারাবন্দী কয়েদিদের জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেবার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। তাদের পরামর্শ - জনাকীর্ণ কারাগারগুলো স্থান সংকুলান বাড়াতে অতিরিক্ত ঝুঁকিতে থাকা কয়েদিদের সাময়িক মুক্তি দেয়া হোক।
চিলি, কলোম্বিয়া এবং নিকারাগুয়া ঘোষণা করেছে যে তারা হাজার হাজার কয়েদিকে তাদের নিজ গৃহে বন্দী করে রাখবে। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে বয়স্ক, গর্ভবতী এবং অসুস্থদের।
ব্রাজিল এরই মধ্যে ষাটোর্ধ্ব কয়েদিদের তাদের বাড়িতে স্থানান্তর করে তাদের গৃহবন্দীতে পরিণত করতে শুরু করেছে। পেরু বলছে, তারা ঝুঁকিপূর্ণ কয়েদিদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরিকল্পনা করছে।
কিন্তু আমেরিকার পর জনসংখ্যা অনুপাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারাবন্দী অধ্যুষিত দেশটি এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপই নেয়নি। এল সালভাদর দশকের পর দশক ধরে গ্যাং সহিংসতা মোকাবেলার চেষ্টা করে পেরে উঠছে না। দেশটির কারাগারগুোতে বন্দীর সংখ্যা এত যে কারাগারগুলো বিস্ফোরিত হওয়ার উপক্রম।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগে দু'বছর ধরে এল সালভাদরের কারাগারগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে ছবি তুলেছেন ফটোগ্রাফার তারিক জায়িদি।
তিনি মোট ছ'টির মতো কারাগারে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছিলেন, এবং বিরল সব দৃশ্যের ছবি তুলতে সমর্থ হয়েছেন।
জনসংখ্যার অনুপাতে কারবান্দীর সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ এল সালভাদরে খুনের হারও খুব বেশি।
২০১৫ সালে দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে ১৭.৬টি হত্যাকাণ্ড হতো। কিন্তু ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে তা বেশ কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৩.৬টিতে। এ বছরের মার্চ মাসে হত্যাকাণ্ডের হার আরো কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে দৈনিক ২.১টি।
গত বছর জুন মাসে দায়িত্ব নেয়া প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে এই উন্নতির জন্য প্রশংসা পাচ্ছেন।
গ্যাং সহিংসতার ব্যাপারে তিনি জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। কারাগারগুলোতে তিনি এতটাই কড়াকড়ি আরোপ করেছেন যে, বন্দীদের কোন দর্শণার্থীর সাক্ষাৎ অনুমোদন করা হয় না, টেলিফোন ব্যাবহারের সুযোগ দেয়া হয় না - এমনকি তাদের দিনরাত কারাকক্ষের ভেতরেই আটকে রাখা হয়।
মি. বুকেলে ক্ষমতায় আসার আগে একটি কর্মসূচি ছিল যার নাম "ইয়ো ক্যামবিও" বা "আমি বদলাই" - যেখানে বন্দীদেরকে কারাগারের ভেতরে একটি দক্ষতা অর্জনের সুযোগ দেয়া হতো, যাতে করে মুক্তি পাওয়ার পর তার কর্মসংস্থান হয়।
কিন্তু জনাকীর্ণ এই কারাগারগুলো করোনাভাইরাস সংক্রমণের হটস্পট হয়ে ওঠারও সম্ভাব্য উপযুক্ত স্থান।
দেশটির কারাগারগুলোতে ফুসফুসের রোগ হওয়ার হার এমনিতেই বেশি।
এল সালভাদরের সাধারণ এলাকার তুলনায় কারাগারগুলোতে যক্ষ্মা হওয়ার হার ৫০ গুণ বেশি, বলছে প্যান-অ্যামেরিকান জার্নাল অব পাবলিক হেলথ স্টাডি।
আর করোনাভাইরাস এবং যক্ষ্মা যেহেতু একই উপায়ে ছড়ায়, ফলে কর্তৃপক্ষ এমন এক পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যা সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ হোর্গে পানামেনোর ভাষায় বিষ্ফোরণের অপেক্ষা থাকা একটি 'টাইম বম্ব'।
Post a Comment