গোটা ভারত খায়, কিন্তু রসগোল্লার মতো এটারও জন্ম বাংলাতেই



Odd বাংলা ডেস্ক: ‘গান-বাজনা-মোতিচুর, এই তিন নিয়ে বিষ্ণুপুর।’ এমন প্রবাদ আজও সত্যি হয়ে ওঠে মল্লভূমের মাটিতে। মল্লরাজদের ইতিহাসও উঠে আসে এই প্রবাদের সূত্রে। আর উঠে আসে সুস্বাদু এই মিষ্টান্নের জন্মের কাহিনি।


সদ্য স্বীকৃতি মিলেছে বাংলার রসগোল্লার। এ বার বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের সময়ের মিষ্টি মোতিচুরও কি সেই স্বীকৃতির দাবি তুলবে? বাংলার প্রাচীন শহর বিষ্ণুপুরে আজ সেই প্রশ্ন ঘুরছে। কারণ, বিষ্ণুপুর আজও যেমন মুখরিত হয় ধ্রুপদ কিংবা খেয়ালের সুরে, তেমনই ময়রাদের দোকান থেকেও ভেসে আসে জিভে জল আনা মোতিচুর পাকের গন্ধ। মল্লরাজাদের পৃষ্ঠপোষণায় বিষ্ণুপুরে জন্ম নেয় ধ্রুপদ সঙ্গীত ঘরানা। হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের স্বতন্ত্র শৈলী হল এই ঘরানা। একে ঘিরে একের পরে এক দিকপাল শিল্পীর আবির্ভাব হয়েছে অতীতে। ভারতে তো বটেই, বিশ্বের দরবারেও ছড়িয়ে পড়ে বিষ্ণুপুরী ধ্রুপদ সংগীতের খ্যাতি।


আবার এই মল্লরাজারাই কৃষ্ণপ্রেমে পাগল হয়ে বিষ্ণুপুরে গড়ে তুলেছিলেন একের পরে এক টেরাকোটা মন্দির। কারুকাজে চোখ-ধাঁধানো সে সব মন্দিরগুলি আজও মনে করিয়ে দেয় মল্লরাজাদের প্রাচীন ইতিহাস। শোনা যায়, কোনও এক মল্লরাজা চেয়েছিলেন, তাঁদের গোবিন্দের প্রসাদে নতুন কোনও মিষ্টি নিবেদন করা হোক। শুরু হয় ভাবনা, গোবিন্দের প্রসাদে কী মিষ্টি নিবেদন করা যায়? সেই ভাবনা থেকেই রাজবাড়ির মিষ্টি কারিগর প্রস্তুত করেন মোতিচুর। সেই সময় মল্লগড়ে ছিল পিয়াল গাছের জঙ্গল। সেই পিয়াল ফলের বীজ সংগ্রহ করে তা থেকে বেসন তৈরি হত। তার পর রসের পাক তৈরি করে বিষ্ণুপুরের মারুইবাজারের কোনও এক মিষ্টি প্রস্তুতকারকের হাতে এই মোতিচুর নামক মিষ্টির জন্ম হয়। তার পর গোবিন্দর ভোগে এই মোতিচুর লাড্ডু নিবেদন করা হয় বলে কথিত রয়েছে। সেই থেকে বিষ্ণুপুরে মোতিচুরের চল। শুধু গোবিন্দের প্রসাদ হিসেবে নয়। সেই সময়ে গান-বাজনার চর্চার সঙ্গেও জলযোগ হিসেবে থাকত এই মোতিচুরের লাড্ডু। মোতিচুর দিয়ে গুণী শিল্পীদের আপ্যায়নের চলও ছিল। তাই বিষ্ণুপুরে সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে মোতিচুরও জনপ্রিয়তা লাভ করে। কাজেই এহেন মিষ্টান্নটির স্বীকৃতির দাবিতে বিষ্ণুপুরের মানুষ সোচ্চার হলে তবেই হয়তো তার জনপ্রিয়তার বৃত্তটি সম্পূর্ণ হবে।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.