মহাপ্লাবন থেকে ভূমির গঠন, জানতেন না বিজ্ঞানীরা
Odd বাংলা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যের ভূমিগঠন নিয়ে বিজ্ঞানীরা কখনও মাথা ঘামাননি। এরকম আজব ও বিচিত্র গঠন কেন হয়েছে এ বিষয়ে গবেষণার চিন্তা করেননি তারা। কিন্তু বিদ্যালয়ের শিক্ষক খুঁজে পেলেন এর কারণ। পূর্ব ওয়াশিংটনের ঠিক মাঝখানে মরুভূমির মধ্যে এক প্রাচীন জলপ্রপাত দাঁড়িয়ে আছে। এককালে এটা ছিলো পৃথিবীর বৃহত্তম জলপ্রপাত। তিন মাইল চওড়া ও ৪০০ ফুট উঁচু এ জলপ্রপাত নায়াগ্রার দশগুণ। প্রচন্ড বেগে এ জলপ্রপাত দিয়ে পানি আছড়ে পড়তো নিচের পানির আধারে। কিন্তু এখন সেখানে কোনও পানি বয়ে যায় না। সম্পূর্ণ জলপ্রপাত শুকিয়ে গেছে। কলম্বিয়া মালভূমি বলে পরিচিত এ স্থানে শুধু এই একটি জলপ্রপাত নয় শয়ে শয়ে জলপ্রপাত ছিলো। ১৬ হাজার বর্গফুটের এ ভূমিতে নদীর কোনও চিহ্ন নেই।
উঁচু দালানের সমান নুড়ির ঢিবি রয়েছে। বড় বড় অসংখ্য পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পানির অস্তিত্বের ঘোষণা করছে যেন। কিন্তু যত দূর চোখ যায় এখানে নদীর কোনও চিহ্ন নেই। তাহলে এত জলপ্রপাত এখানে কিভাবে তৈরি হলো। বিজ্ঞানীরা এ প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেননি। এ অঞ্চলের ভূমিরূপ দেখলে মনে হয় কোনও এক কালে সারা এলাকাকে কেটে আবার জোড়া লাগানো হয়েছে। এই আজব ভূমিরূপের কারণ জানতে সিয়াটলের উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক হারলে ব্রেটজ ১৯০৯ সালে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। ইউএস জিওলজিকাল সার্ভের কুয়েন্সি অববাহিকার মানচিত্র নিয়ে গবেষণা করেন। তখন তার বয়স ছিলো ২৭। ভূতত্ত্ব নিয়ে তার কোনও প্রশিক্ষণ বা কোর্স করা ছিলো না। তিনি মানচিত্রে খেয়াল করেন এ অববাহকার পশ্চিম দিকে জলপ্রপাতের চিহ্ন রয়েছে। কুয়েন্সি অববাহিকা থেকে এ জলপ্রপাত কলম্বিয়া নদীতে যেয়ে পড়েছে। কিন্তু এর আশেপাশে কোনও নদী বা পানির কোনও উৎস তিনি খুঁজে পাননি যার কারণে এককালে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছিলো।
তিনি ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপকের কাছে এই ভূমিতে তৈরি হওয়া গিরিখাত ও গর্ত সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনও উত্তর দিকে পারেনি। এরপর ব্রেটজ ভূতত্ত্ববিদ হওয়ার চিন্ত করেন। তিনি চার বছর পর শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূতত্ত্বের ওপর পিএইচডি করেন। ১৯২২ সালে তিনি আবার ওয়াশিংটনের পূর্বাঞ্চলে যান। সম্পূর্ণ অববাহিকা ও পাথুরে অঞ্চল ঘুরে ঘরে দেখেন। দুইবার তিনি এখানে আসেন। অনেক গবেষণার পর তিনি যে সত্য জানতে পারেন তা তাকে চমকে দেয়।
প্রাচীনকালে এক মহাপ্লাবনের কারণে এ অববাহিকার এই ভিন্ন অবস্থা। সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্লাবন এটি। ১৯২৩ সালে তিনি তার গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি জানান, এই মহাপ্লাবন অত্যন্ত শক্তিশালী ছিলো। এর ফলে এখানে থাকা বড় বড় পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। অসংখ্য ফাটল ও গর্তের সৃষ্টি হয়। জলপ্রপাত তৈরি হয়। ১৯২৭ সালে তিনি আরো একটি গবেষণাপত্র বের করেন। সেখানে উল্লেখ করেন, বরফযুগে এই মহাপ্লাবনে অস্থায়ী পানির আধার তৈরি হয়। ভূমির বিশাল অংশ ধ্বসে যায়। কোথাও পানি উপচে পড়ে জলপ্রপাত তৈরি হয়। বন্যার এ পানি উচু উচু দেয়ালের খাদ তৈরি করে, সম্পূর্ণ পাহাড়কে ধুয়ে নিয়ে যায়। ব্রেটজ বলেন, নদী বা অন্য কোনও জলপ্রবাহ এরকম ভূমিরূপ তৈরি করতে পারে না। এই এলাকার কোথাও নদীর চিহ্নও নেই। বেনীর মতো খাঁজকাটা ভূমি মহাপ্লাবনের অস্তিত্ব ঘোষণা করছে। ১০ মিলিয়ন বছর আগে এখানে আগ্নেয়গিরির উদগিরণের ফলে ব্যাসল্ট দিয়ে পাঁচতলা দালানের সমান দেয়াল তৈরি হয়েছিলো। যখন তা শুকিয়ে যায় তখন সংকোচন হয় ও ফাটল তৈরি হয় লম্বালম্বিভাবে। এরপর মহাপ্লাবনের পানিতে অতিরিক্ত অংশ ধুয়ে মসৃণ করে তোলে। সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।
Post a Comment