শ্রীকৃষ্ণের জীবনের সব থেকে অন্যায় কাজটি কী, ভগবতে আছে উল্লেখ


Odd বাংলা ডেস্ক: ‘ভাগবৎ পুরাণ’ ও ‘মহাভারত’ নিয়ে ভাবতে বসলে দেখা যায়, পরমপুরুষ শ্রীকৃষ্ণ জীবনে বেশ কিছু কাজ করেছিলেন, যা নৈতিক ভাবে সমর্থন করা যায় না। অবতার শ্রীরামের শম্বুক বধের মতোই এই কাজগুলি শ্রীকৃষ্ণকে মানবিক গুণসম্পন্ন করে রাখে। শ্রীরাধার প্রতি তাঁর আচরণ, জরাসন্ধ বধ, পৌন্ড্র বাসুদেবকে হত্যা ইত্যদি নিয়ে ‘মহাভারত’ বিশেষজ্ঞরা বার বার সরব হয়েছেন। শাস্ত্রের ব্যাখ্যাকর্তারা জানান, এসবই তাঁর ঐশী লীলা, এর কোনও কারণ তেমন ভাবে অনুসন্ধান করতে যাওয়া বৃথা। কিন্তু এর প্রত্যেকটিরই কারণকে খুঁজে পাওয়া যায়। রাধার প্রতি তাঁর আচরণ ‘অন্যায়’ ছিল না। তা আসলে বৈষ্ণব পরকীয়া তত্ত্বের আধার। তা প্রতীকী। এর তাৎপর্য আধ্যাত্মিক। জরাসন্ধ কৃষ্ণকে বার বার অপমান করেন। তা ছাড়া তাঁর দম্ভকে চূর্ণ না করলে রাজনৈতিক জটিলতা দেখা দিতে পারতো। পৌন্ড্র বাসুদেব কৃষ্ণের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিলেন। তিনি কৃষ্ণের অনুরূপ বেশ ধারণ করে আর্যাবর্তের রাজনীতিতে জটিলতা বাড়াচ্ছিলেন।
কিন্তু এর কোনওটিকেই তেমন ভয়ঙ্কর বলে মনে হয় না। উপপাণ্ডবদের হত্যার কালে কৃষ্ণের ভূমিকাকে অনেক বিশেষজ্ঞই ‘অন্যায়’ বলে চিহ্নিত করেন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগের রাতে দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্রকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করেন অশ্বত্থামা। ত্রিকালজ্ঞ শ্রীকৃষ্ণ এই ঘটনার কথা জানতেন না, এমন হতে পারে না। কিন্তু কেন তিনি তাঁর প্রিয় বান্ধবী দ্রৌপদীর সন্তানদের রক্ষা করেননি? এই প্রশ্ন বার বার পীড়িত করে ‘মহাভারত’ গবেষকদের। কৃষ্ণভক্তরাও এইখানে অনেক সময়েই নীরব হয়ে যান।  
সম্প্রতি এই নিয়ে বিতর্কে মেতেছিলেন বেশ কিছু মানুষ। প্রশ্নোত্তর-কেন্দ্রক সোশ্যাল মিডিয়া কোরা-য় এই নিয়ে এক সুবিশাল আলোচনা ঘটে। সেখান থেকেই কয়েকটি সূত্র উঠে আসে, যা সত্যই চাঞ্চল্যকর—

• দ্বৈপায়ন হ্রদে উরুভঙ্গ অবস্থায় দুর্যোধন অবস্থান করছিলেন। তাঁর প্রতিজ্ঞা ছিল, পাণ্ডবদের মৃত্যুসংবাদ না পাওয়া পর্যন্ত তিনি মারা যাবেন না। উপপাণ্ডবদের পাণ্ডব ভেবেই হত্যা করেছিলেন অশ্বত্থামা। আর সেই সংবাদ শুনেই দুর্যোধন প্রাণ ত্যাগ করেন। দুর্যোধনের মৃত্যু পাণ্ডবদের জন্য একান্ত জরুরি ছিল। তাই শ্রীকৃষ্ণ এই ঘটনায় বাধা দিতে পারেননি।
• আর এক মতে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কারণ ভ্রাতৃবিরোধ। কৌরব ও পাণ্ডব ভ্রাতারা ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে এই যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এই যুদ্ধের পরিণতি যা সম্যক ধ্বংস, তা কৃষ্ণের চাইতে ভাল কেউই জানতেন না। পরবর্তী কালে উপপাণ্ডবরাও আর এক ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারেন, সেই ভাবনা থেকেই কৃষ্ণ হয়তো অশ্বত্থামাকে নিরস্ত করেননি।
• অশ্বত্থামা শিবের অবতার। তাঁর অভিষ্ট সিদ্ধির জন্য তিনি মহাদেবের কাছে বর প্রার্থনা করেন। শিব তাঁকে যুদ্ধ জয়ের জন্যে এক দৈব খড়্গ প্রদান করেন। দৈবশক্তিতে বলীয়ান অশ্বত্থামা সেই রাতের মতো অপরাজেয়, এ কথা ত্রিকালজ্ঞ শ্রীকৃষ্ণ জানতেন। তাঁকে যিনিই সেই রাতে বাধা দিতে যান না কেন, তিনি ধ্বংস হয়ে যাবেন। তাই তিনি সব কিছু জেনেও নীরব থাকেন।
উপরের মতগুলির সঙ্গে এবেলা.ইন-এর তরফ থেকে রইল একটি সংযোজন।
কৃষ্ণ ত্রিকালজ্ঞ। তিনিই নিয়তি। উপপাণ্ডবদের অকালপ্রয়াণ তাই তাঁর কাছে অজানা হলেও অনিবারণীয় বলে মনে হয়নি। ‘মহাভারত’ মহাকাব্যে নিয়তিবাদ সর্বপ্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ। মহাকবি ব্যাসদেব, কৌরবদের ধ্বংসকে অনিবার্য করে দেখাতে গিয়ে হয়তো মনে করেন, ট্রাজেডির ভার পাণ্ডবদেরও বহন করা উচিত। গান্ধারী আর কুন্তিই বা কেন একা পুত্রশোক পাবেন! নিয়তি যে কারোকে ছাড়ে না, সেটা বোঝাতেই তিনি হয়তো উপপাণ্ডব হত্যার এপিসোডটি লিখেছিলেন। স্বয়ং নিয়তি বাসুদেব কী করে তাকে নিবারণ করেন? আর নিয়তির কাছে ন্যায় বা অন্যায় বলে কিছু যে হয় না, তা নতুন করে বলার নেই।  
Blogger দ্বারা পরিচালিত.