বাজাউ উপজাতি: মৎসকন্যার সন্তান যাঁরা
Odd বাংলা ডেস্ক: ইংরেজিতে একটা কথা আছে "Nothing is impossible", মানুষের ক্ষেত্রে যে সেটা পুরোপুরি ভাবে ন্যায্য। পৃথিবীতে এমন অনেক ধরনের মানুষ আছে যারা এমন কিছু করে নিজেদের জীবিকা অর্জন করে যেটা কিনা বৈজ্ঞানিক ভাবে অসম্ভব। বাজাউ উপজাতি এমন কিছু কাজের নিদর্শন রাখে যা বৈজ্ঞানিকভাবে অসম্ভব হলেও তাদের কাছে কোনো ব্যাপারই না। ফিলিপাইন, সুলাওয়েসি ও বোর্ণিওর মধ্যবর্তী প্রবাল সাগরে অসংখ্য মানুষ বসবাস করে যাদের সাথে সমুদ্রের মেল বন্ধন অবাধ। এরা সুনিপুনভাবে জলের রাজ্যে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে। এই উপজাতিগুলি বাজাউ উপজাতি নামে পরিচিত। এরা ভূমি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের মধ্যে নিজেদের ঘর নির্মাণ করেছে। এদের অস্তিত্বের প্রতিটি ধাপে সমুদ্র ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। জলের নিচে প্রায় ১৫ফুট গভীর পর্যন্ত বাঁশ দিয়ে জলের উপরে ঘর তৈরি করে এরা। এদের এখানে সময়ের পরিমাপ হয় জোয়ার ভাটার ছন্দে।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার কিছু ইনভেস্টিগেশন দল এই জায়গায় আসে রিসার্চ করতে এবং তাদের মতে বাজাউ শিশুরা অনেক কম বয়স থেকেই জলজ পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। এমনকি কিছু কিছু বাজাউ শিশু জলে এতটাই সময় কাটায় যে তাদের চোখের ফোকাস ডাঙ্গার থেকেও জলের ভিতর অধিকতর উপযোগী হয়ে ওঠে। পরিণত বয়সে বাজাউরা এতটাই দক্ষ ডুবুরি হয়ে ওঠে যে বিজ্ঞান অনুসারে মানুষের এধরণের সামর্থ্য একপ্রকার অসম্ভব ব্যাপার। বাজাউদের প্রধান পেশা হল মাছ শিকার করা। প্রথমে এরা অর্ধচেতন অবস্থায় যাওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে, এরপর একটা দীর্ঘশ্বাস গ্রহণ করে সমুদ্রতলের দিকে রওনা হয়। ৬০ থেকে ৭০ ফুট নীচে প্রবাল কলোনি এদের শিকার ক্ষেত্র। এমনকি কিছু কিছু বাজাউ উপজাতির মানুষ ১০০ ফুট পর্যন্ত জলের নীচে যেতে পারে।
বিজ্ঞানীদের মতে এই গভীরতায় জলের চাপে এদের ফুসফুসের আয়তন এক-তৃতীয়াংশ নেমে আসে এমনকি অক্সিজেনের অভাবে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন প্রতি মিনিটে ৩০ এর কাছাকাছি চলে আসে। পুরো শরীরটি সঙ্কচিত হয়ে এমন একটা জায়গায় পৌঁছায় যে কোনো প্রকার ভার ছাড়াই এরা সমুদ্রের তলদেশে হাঁটার জন্য এদের দেহ ঋণাত্মক প্লবতা অর্জন করে। এই বাজাউরা পাঁচ মিনিট ধরে, এমনকি কেউ কেউ দশ মিনিট পর্যন্ত নিশ্বাস ধরে রাখতে পারে। অনেক মনে করেন, বাজাউ উপজাতি ভগবানের আশীর্বাদ, হয়তো হতেও পারে। তবে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকরা বলেছে যে, মানুষ চাইলে এমন কিছু করতে পারে যা রূপকথার মতোই অবিশ্বাস্য। বাজাউ উপজাতির কালচার সেরকমই এক অবিশ্বাস্য জিনিসের নিদর্শন রাখে।
Post a Comment