উত্তম কুমারের সামনে এসে পড়েছিল একটা মানুষের কাটা মুণ্ডু, সেদিন ময়দানে কেউ ছিল না
Odd বাংলা ডেস্ক: অনেকেই মনে করেন উত্তম কুমার খুবই অনিয়মিত জীবনযাপন করতেন। কিন্তু তিনি ছিলেন প্রচন্ড স্বাস্থ্য সচেতন। অনেকেই ভাবেন যে রোজ রাতেই বোধহয় উত্তমকুমার মদ খেতেন। কিন্তু আদতে তিনি শনিবার ছাড়া আরও কোনদিনই মদ খেতে না। এবং শনিবারেও কয়েক পেগ মাত্র। কারণ রোজ ভোর ৫টা নাগাদ তিনি ময়দানে মর্নিং ওয়াকে যেতেন। এরকমই একদিন মর্নিং ওয়াক করছেন । দিনটি ছিল ৫ই আগস্ট। সেদিন সকালে অন্যান্য দিনের মতোই ড্রাইভারকে গাড়িটা ঘুমিয়ে ময়দানের পাশে রাখতে বলেছিলেন। তিনি কয়েকটা চক্কর দিয়ে তারপর ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করবেন।
এমন সময় তাঁর চোখের সামনে হল একটা এনকাউন্টার। পুলিশ হত্যা করল নকশাল নেতা সরোজ দত্তকে। কিন্তু কে এই সরোজ দত্ত। রাষ্ট্রের খাতা কলমে তিনি আজও নিখোজ। ১৯৪৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা ‘পরিচয়’ ও ‘স্বাধীনতায়’ যুক্ত হন কমঃ সরোজ দত্ত। পরিচয়ের সম্পাদনার দায়িত্ব দেয়া হয় তাঁকে এবং পরবর্তীতে স্বাধীনতায় সম্পাদক মন্ডলীতে যোগ দেন। ১৯৬২ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৬২সালেচীন- ভারত যুদ্ধের সময় পি. এ্যক্ট এ গ্রেফতার হয়ে দমদম জেলে কারাবাস করেন ১৪ মাস। এর মধ্যে ১৯৬৪ কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। নতুন নামকরনে গঠিত সি পি আই(এম) জেল থেকে বেরিয়ে কমঃ সরোজ দত্ত যোগ দেন নতুন গঠিত সিপিআই(এম) এ এবং পার্টি পত্রিকা ‘দেশহিতৈষী’ সম্পাদকমন্ডলীরসদস্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। এই পত্রিকাতেই ‘শশাংক’ ছদ্মনামে লেখা শুরু করেন তিনি। ১৯৬৭ সালেনকশালবাড়ি আন্দোলন শুরু হলে তিনি যোগ দেন নকশালবাড়ির আন্দোলনে। এরপর শুরু হয় তাঁর বিপ্লবী আন্ডারগ্রাউন্ড জীবন।
সরোজ দত্তকে খুন হতে দেখেছিলেন উত্তম কুমার। কোনও সাধারণ মানুষ হলে হয়তো তাঁকেও লোপাট করে দেওয়া যেত। শোনা যায় উত্তম কুমারের সামনে তাঁর কাটা মাথাটা এসে পড়েছিল। কিন্তু তিনি মহানায়ক। তবে? তখন নকশালদের উত্তপ্ত সময়। রেড রোড দিয়ে স্পিডে আসা একটা কালো গাড়ি ওর সামনে থেমেছিল। রীতিমতো শাসানি দিয়ে বলেছিল, উত্তমদা আপনি কিছু দেখেননি। তারপর আর কখনও ময়দান চত্বরে যাননি। সেই দিনটা খুব আপসেটও ছিলেন তিনি। পর পর দু’-তিন দিন শ্যুটিং করেননি। উত্তমের জীবনে বোধহয় এমন ঘটনা নেই। অনিচ্ছাকৃত ভাবেই খুনের সাক্ষি হয়ে গিয়েছিলেন উত্তম কুমার। ফলে সেই আতঙ্কে কলকাতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। এই খুন দেখার পর থেকেই তিনি কেমন যেন একটা আনমনা হয়ে থাকতেন। এই ঘটনাটি সম্প্রতি শুনিয়েছিল লেখক-সাহিত্যিক কুনাল বসু।
Post a Comment