ইতিহাসে প্রথমবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রথম পাতায় কোনও খবর প্রকাশ পেল না ! প্রকাশ পেল মৃতদের নাম
Odd বাংলা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা যখন লাখ ছুঁই ছুঁই করছে, তখন এই মহামারীতে দেশজুড়ে প্রাণ হারানো মানুষদের স্মরণীয় করে রাখতে অভূতপূর্ব এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃতদের মধ্য থেকে এক হাজার জনের তালিকা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা দৈনিকটি, যেখানে প্রথম পাতায় শুধু মৃতরাই ঠাঁই পেয়েছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের রোববারের সংখ্যার প্রথম পাতায় কোনো বিজ্ঞাপন নেই, নেই অন্য কোনো খবর। এদিনের প্রথম পাতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ছিল ‘অগণনীয়’।
বাস্তবিকই কোভিড-১৯ মহামারীতে যে ক্ষতি তা অপরিসীম। এই ক্ষতি চিত্রে বা বর্ণনায় ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। কিন্তু নিউ ইয়র্ক টাইমস এক অনন্য উপায়ে তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। দৈনিকটি প্রথম পাতাসহ মোট চারটি পাতা মৃতদের নামে উৎসর্গ করেছে।
মহামারীতে মৃতের সংখ্যা যখন লাখের কাছে, তখন গত কয়েক মাসে যা ঘটেছে তা কীভাবে খবরের কাগজে ধরে রাখা যায় তা নিয়ে প্রতিবেদক ও সম্পাদকরা আলাপ-আলোচনা করেন।
ফলাফল হচ্ছে- কোনো ছবি, সংবাদ নিবন্ধ, বিজ্ঞাপন বা কোনো কিছু ছাড়া প্রকাশিত অনন্য এক প্রথম পাতার প্রকাশ। ‘যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু লাখের কাছে, ক্ষতি অগণনীয়’ব্যানার শিরোনামে পুরো প্রথম পাতায় ঠাঁয় পেয়েছেন শুধু মৃতরা।
বিশেষ এই সংখ্যার পেছনের কথা তুলে ধরে আলাদা এক নিবন্ধে টাইমসের গ্রাফিক্স ডেস্কের সহকারী সম্পাদক সিমোন ল্যানডোন বলেন, “আমরা জানতাম, এই সংখ্যা স্মরণে রাখতে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু করতে পারব আমরা।”
তাছাড়া মহামারী থেকে তৈরি ‘কিছুটা অবসাদের’ জবাব হিসেবেও এই প্রকল্পের ভাবনা এসেছিল বলে তিনি জানান।
আর তাই আমেরিকাজুড়ে সংবাদপত্রগুলোতে প্রকাশিত কোভিড-১৯ মহামারীতে মৃতদের নাম ও গল্প সংগ্রহ করে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
এই তালিকার বিবরণীতে পত্রিকাটি বলেছে, “এই এক হাজার জন মৃতের সংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ। তাদের কেউ শুধুমাত্র সংখ্যা নয়। তারা শুধু একটি তালিকার কতগুলো নাম নয়, তারা আসলে আমরাই।”
The front page of The New York Times for May 24, 2020 pic.twitter.com/d14JhFp4CP— The New York Times (@nytimes) May 24, 2020
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএন মৃতদের মধ্যে কয়েকজনের বর্ণনা তুলে ধরে বলেছে, কলাম ও নামের কলামগুলো জীবন ও মৃত্যুর কথা বলছে:
এঞ্জেলিনা মিকালোপুলোস (৯২) ‘নাচে-গানে ছিলেন নির্ভীক’
লিলা ফেনউইক (৮৭) ছিলেন ‘হার্ভার্ড ল থেকে স্নাতক প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী’
রোমি কোন (৯১) ‘গেস্টাপোর খপ্পর থেকে ৫৬ ইহুদি পরিবারকে বাঁচান’
এপ্রিল ডান (৩৩) ছিলেন ‘প্রতিবন্ধী অধিকারের জন্য সোচ্চার’
প্যাট্রিসিয়া এইচ থ্যাচার (৭৯) ’৪২ বছর ধরে চার্চ সংগীত গেয়েছেন’
ফ্রাংক গ্যাবরিন (৬০) ‘জরুরি বিভাগের চিকিৎসক, যিনি তার স্বামীর হাতে উপর মারা যান’
উইলিয়াম ডি গ্রিক (৫৫) ‘মানুষের জীবনের গল্প জানাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ ভাবতেন’
টাইমসের প্রবীল লেখক ড্যান ব্যারি পত্রিকার ভেতরের পাতায় এ পর্যন্ত মহামারীতে ‘মৃতের সংখ্যা’ নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন।
তাতে তিনি বলেন, “কল্পনা করুন, নববর্ষের দিনে এখানে এক লাখ বাসিন্দার একটা শহর ছিল, যেটা এখন আমেরিকার মানচিত্র থেকে মুছে গেছে।”
Post a Comment