১৮৬৪ সালে ঠিক এমন একটা সাইক্লোন কলকাতায় আছড়ে পড়েছিল, সেবার ৬০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল



Odd বাংলা ডেস্ক: পৃথিবীর ইতিহাসে অতি প্রবল ৩০টি মারণাত্মক ভূমিকম্প এবং ঘূর্ণিঝড় বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোনের মধ্যে ২টি কলকাতা তথা বরানগর অঞ্চলে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির সৃষ্টি করে। প্রথমটি ঘটে ১১/১২ই অক্টোবর, ১৭৩৭ খ্রীষ্টাব্দে। গঙ্গা নদীর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল সূমহে এই সাংঘাতিক ভূমিকম্প ও ঝড়ের অভিঘাতে ২০,০০০ জাহাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

ওল্ডহ্যাম তাঁর দ্য জেন্টালস ম্যান পত্রিকায় কলকাতাতে এই ঝড়ে ৩ লক্ষ মানুষের মৃত্যু উল্লেখ করেছেন। কিন্তু, ১৬৯০ খ্রীষ্টাব্দে জোব্ চার্নক কলকাতা শহরের পত্তন ঘটানোর ১০ বছর পর, ১৭০০ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতায় প্রায় ১০০০০ মানুষের বসবাসের আন্দাজ পাওয়া যায়। ১৭৫৭ খ্রীষ্টাব্দে সর্ব্বপ্রথম সরকারী জনগণনা অনুসারে কলকাতার জনসংখ্যা ছিল ৪৫০০০। হ্যামিলটনের  মতানুসারে ১৭০৫ থেকে ১৭২০ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতার জনসংখ্যা ছিল ১০ থেকে ১২ হাজার। আবার, আহমেদেরমতানুসারে ১৭৩৭ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতার ২৫০ কিমি পূর্বে অবস্হিত তৎকালীন বাংলার সর্বাপেক্ষা জনবহুল শহর ঢাকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৯ লক্ষ।

প্রাথমিক পর্য্যয়ে ৩ লক্ষ মানুষের মৃত্যু আন্দাজ করা হলেও ১৭৩৭ খ্রীষ্টাব্দে তৎকালীন কলকাতার জনসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার ছিল বলে গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়ায়, ১৭৩৭ খ্রীষ্টাব্দের ভূমিকম্প এবং ঘূর্ণিঝড়ে মৃতের সংশোধিত সংখ্যা হয়, ৩ হাজার। সুতরাং সমীক্ষানুসারে, অবিভক্ত বাংলার সমস্ত জনসংখ্যার অনুপাত এবং সমুদ্র-নদী উপকূলবর্তী স্হানে মানুষের মৃত্যুকে সংযুক্ত করলে এই সংখ্যা ৩ লক্ষ হতে পারে।

দ্বিতীয় এই ধরনের সাংঘাতিক ভূমিকম্প ও ঝড়ের অভিঘাতের পরবর্তী ঘটনাটি ঘটে ৫ই অক্টোবর ১৮৬৪ খ্রীষ্টাব্দে। এই ঝড়ে প্রায় ৬০,০০০ মানুষের জীবন হানি ঘটে ।এমনকি, গঙ্গাবক্ষে বহু বাস্পীয় জাহাজের প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়, ধূলিসাৎ হয় ২ টি গীর্জার চূড়া, বাসস্হান ধ্বংশপ্রাপ্ত হয় ইউরোপীয়ানদের ৯২টি এবং দেশীয় ব্যক্তিবর্গের ৮৯,৪৪০টি এবং ৪৩ জন মানুষের প্রানহানি ঘটে।। এই বিষয়ে ১৯শে নভেম্বর, ১৮৬৪ খ্রীষ্টাব্দে দ্য ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ পত্রিকার অংশ বিশেষ উল্লেখ করা হলঃ

৫ই অক্টোবর ১৮৬৪ খ্রীষ্টাব্দে আশ্বিনের এই ঝড়ে খিদিরপুর ডক থেকে নোঙর ছিঁড়ে গঙ্গায় ভাসমান বহু জাহাজ বঙ্গোপসাগরের বিপরীতে অর্থাৎ গঙ্গার উৎসস্হলাভিমুখে ধাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্হ অথবা ধ্বংশপ্রাপ্ত হয়। ২০টি জাহাজ গঙ্গায় ডুবে যায় এবং ১৪৫টি বিভিন্ন ডাঙ্গায় বা ঘাটে উঠে পড়ে। এই রকম জাহাজগুলোর মধ্যে ৩টি জাহাজের একটি বরানগরে লোচন ঘোষের ঘাটে উঠে পড়ে, দ্বিতীয়টি (Earl of Clare) বরানগর জুট মিলের তীরে স্হান নেয় এবং তৃতীয়টি বরানগরের কুটিঘাটের কাছে জয়মিত্র কালীবাড়ীর নহবৎ দুটিকে ক্ষতিগ্রস্হ করে নিজেও চূর্ণবিচূর্ণ হয়। বরানগর জুট মিলে সংযুক্তিকৃত (Assembled) জুট মিলের নিজস্ব জাহাজ “বরানগর”, বরানগরের বিপরীতে অবস্হিত হাওড়া জেলার শালকিয়ার কাছে গঙ্গায় ডুবে যায়
Blogger দ্বারা পরিচালিত.