ছেলের ফ্ল্যাটে জায়গা বড়ই কম, আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম


Odd বাংলা ডেস্ক: আপনি কি কখনো ভেবেছেন যে আপনাকে কখনো বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হবে? উত্তরটা এমন হবে যে, না। তবে কেন বৃদ্ধাশ্রম? বৃদ্ধাশ্রম বলতে আমারা যা বুঝি, তা হলো বৃদ্ধদের আবাসস্থল! বৃদ্ধাশ্রমের উৎপত্তি হয়েছিল মূলত গরিব-দুস্থ, সহায়-সম্বলহীন, সন্তানহারা বৃদ্ধদের শেষ জীবনে বিশেষ সেবা প্রদান করার জন্য। কিন্তু বতর্মান বৃদ্ধাশ্রমগুলোর সংজ্ঞা সম্পূণর্ ভিন্ন। বতর্মান সময়ে বৃদ্ধাশ্রম বললে বলতে হবে বৃদ্ধ পিতা-মাতার জন্য পরিবার ও স্বজনদের থেকে আলাদা আবাস বা আশ্রয়ের নাম বৃদ্ধাশ্রম। যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বৃদ্ধাশ্রমের যাত্রা শুরু হয়েছিল আজকে তার ঠিক উল্টো দিকটাই দেখা যায়। এখন বৃদ্ধাশ্রমের যেই ছবিটি আমাদের চোখে পড়ে তা হলো, একসময়ে যে মানুষগুলো ছাড়া একমুহূতর্ও থাকতে পারতাম না, যারা মুখে খাবার তুলে না দিলে সেদিন আর খাওয়া হতো না, যেই মানুষগুলো তাদের জীবনের সবচয়ে দামি বস্তুু বলতে আমাদেরকেই জানতেন, যারা নিজেদের আরাম হারাম করে আমাদের মানুষ করেছেন, নিজের সব দুঃখ-কষ্ট বুকে চেপে আমার হাসিমাখা মুখ দেখার জন্য যে মা ব্যাকুল থাকতেন, আমি না খেলে যিনি খেতেন না, আমি না ঘুমালে যিনি ঘুমাতেন না, অসুস্থ হলে যিনি ঠায় বসে থাকতেন আমার শিয়রে, যে বাবা-মা তিলে তিলে নিজেদের সবকিছু বিসজর্ন দিয়েছেন আমাকে মানুষ করার জন্য, যে বাবা নিজের পকেট খরচকে বঁাচিয়ে রাখত তার সন্তানের টিউশন ফি অথবা টিফিনের টাকার জন্য, যে বাবা নিজের অসুস্থতার কথা না ভেবে কেবল তার সন্তানদের কথা চিন্তা করে ভোরেই নেমে পড়তো খাবারের সন্ধানে, সেই বাবা-মায়ের শেষ বয়সের ঠিকানা এখনকার বৃদ্ধাশ্রমগুলো।


 এইতো কিছুদিন আগেও এমনটা ছিল না। আর আজকে দিনদিন বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে ক্রমেই ভিড় জমছে। কিন্তু কেন!!! এর উত্তরটা অতি সাধারণ, আমরা উন্নত হচ্ছি, আমরা শিক্ষিত হচ্ছি, আমরা সভ্য হচ্ছি। আমরা গ্রেফ ভুলে যাচ্ছি আমাদের অতীতকে, আমরা ভুলো যাচ্ছি আমাদের শেকড়কে। একসময় যে মানুষগুলো ছিল আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল, যাদের অস্তিত্ব ছাড়া আমাদের বেড়ে ওঠা ছিল অসম্ভব। আজকে তাদের শেষ আশ্রয়স্থল আমরা হই না, হতে চাইও না। তাদের শেষ আশ্রয়স্থল হলো বৃদ্ধাশ্রম। আজকাল দেখা যায়, বাবা-মায়ের শেষ সম্বল নিজের ভিটেমাটি অথবা মায়ের বিয়ের শেষ স্মৃতি গহনাগুলো বিক্রি করে দিয়ে সন্তানকে শহরে পাঠান ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে যাতে তাদের জীবনটা আলোকিত হয়। যাতে তারা ভালোভাবে বঁাচতে পারে। আমরা প্রথম দিকে ঠিকই তাদের আত্মত্যাগকে মনে রাখি। আমাদের সবোর্চ্চ চেষ্টা করি ভালো কিছু করার। এক সময় সফল হই। প্রতিষ্ঠিত হই। তখন আর মনে পড়ে না সেই মুখগুলোকে। তাদের তখন আমাদের কাছে বোঝা মনে হয় নয়তো সময় থাকেনা তাদের জন্য। তাই মানুষগুলোক রেখে আসি বৃদ্ধাশ্রমে। মাঝেমাঝেই পত্রিকার পাতায় চোখ রাখলে দেখা যায় বৃদ্ধাশ্রম থেকে বৃদ্ধ মা-বাবার চিঠি তার ব্যস্ত সন্তানদের কাছে। হাজারো আবেগ অভিমানের চিঠি। বিশ্বাস করুন পড়লে চোখে জল এসে যায়। তারপরও একটু সময় হয় না সেই চিঠিগুলোর উত্তর লিখতে। হয়তো চিঠির উত্তরের অপেক্ষায় থেকেই অনেক বৃদ্ধ বাবা-মা পৃথিবীর হিসেব-নিকেশের খাতাটা বন্ধ করে পরপারে পাড়ি জমায়। আমরা যারা বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে অবহেলা করছি, তাদেরকে বোঝা মনে করছি, বৃদ্ধাশ্রমে তাদেরকে ফেলে রেখেছি, তারা কি কখনো ভেবে দেখেছি আজ তারা বৃদ্ধ। তারা তো বৃদ্ধ হয়ে পৃথিবীতে আসেননি। তারা তো পরিবারের বোঝা ছিলেন না। বরং আমরা সন্তানরাই তো তাদের ‘বোঝা’ ছিলাম। তারা তো কখনো আমাদেরকে বোঝা মনে করেননি। আমাদেরকে বড় করে তোলার জন্য তারা বিন্দু পরিমাণ কমতি করেননি। কত যতœ করে বুকে আগলিয়ে আমাদের লালন-পালন করেছেন। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। আমরাও একসময় শিশু ছিলাম। আমরা তো কখনো তাদের কাছে বোঝা হয়ে ছিলাম না। বৃদ্ধ বয়সেও মা-বাবা শিশুদের মতো হয়ে যান। 


শিশুসুলভ আচরণ করেন। তারা যেমন করে আমাদের শৈশব থেকে শুরু করে শতকোটি ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করে আমাদের মানুষ করেছেন। আমাদেরও কতর্ব্য সেই মানুষগুলোকে জীবনের শেষ সময়টুকুতে বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারে না রেখে নিজের কাছেই রাখা। মনে রাখা সমীচিন যে, আমরাও একদিন বৃদ্ধ হব। আমরা যদি আমাদের বৃদ্ধ বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসি। আমাদের সন্তানরাও হয়তো একদিন আমাদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবে। সুতরাং, আমাদের উচিত বৃদ্ধ বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রম নয়, কাছে রাখা, ভালোবাসা, আমাদের শৈশবে তারা যেমনটি করেছিলেন। অতএব, বৃদ্ধাশ্রম নয় নিজ আবাসস্থলই হোক মা-বাবার শেষ আশ্রয়স্থল।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.