ঝড়কে তিনি করেন মিতে, সাইক্লোনের ভ্রুকুটি সামলে ইনিই হলেন ভারতের 'সাইক্লোন ম্যান'


ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, Odd বাংলা: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন 'ঝড়কে আমি করব মিতে, ডরবো না তার ভ্রুকুটিতে'। কিন্তু বাস্তবে ঝড়ের ভ্রুকুটির সামনে বারবার মাথা নুইয়েছে মানুষ। প্রাচীনকালে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কাছে মনুষ্যজাতির বশ্যতা স্বীকার করা ছাড়া উপায়ও ছিল না। কিন্তু যত দিন এগিয়েছে প্রযুক্তি আরও উন্নত হয়েছে, ততই আগে থেকে ঝড়ের গতিবিধি বোঝা যায় বলেই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনি কিছুটা হলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। 

কিন্তু ছয় বছরের এক বিস্ময় বালক ছোট থেকেই দেখে এসেছে ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা। জন্মসূত্রে ওড়িশার বাসিন্দা হওয়ায় সে ছোট থেকেই দেখে এসেছে কীভাবে গ্রামের পর গ্রাম তছনছ করে দিতে পারে ঘূর্ণিঝড়। কিন্তু ভয় না পেয়ে এই ঝড়ের সঙ্গে সখ্যতা স্থাপন করার কথা ভেবেছিলেন। আর সেই কারণেই ছোট থেকেই ঝড় বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসছে শুনলেই গ্রামবাসীকে উদ্ধার করতে যেত সে। ছোট থেকেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভয়কে কার্যতই জয় করেছেন সেই বিস্ময় বালক বড় হয়ে আজ ভারতের মৌসম ভবনের ডিরেক্টর জেনারেল। তিনি মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র, ভারতের 'সাইক্লোন ম্যান'।

তাঁর জন্ম ওড়িশার ভদ্রক-এ। পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাশ করে তিনি ডিআরডডিও-তে জুনিয়র ফিজিসিস্ট হিসেবে যোগদান করেছিলেন। ১৯৮৮ সালে ভারতের প্রথম অগ্নি মিসাইলের সফল উৎক্ষেপণের সময়েও তিনি বিজ্ঞানীদের দলে অন্যতম কান্ডারী। স্বয়ং এপিজে আব্দুল কালামের স্নেহভাজন মৃত্যুঞ্জয়কে প্রকৃতি হাতছানি দিত সর্বক্ষণ। ঝড়ের ধ্বংসলীলা তাঁর কাছে অজানা-অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্রকৃতির প্রতি এমন অপার ভালোবাসা থেকেই ১৯৯২ সালে তিনি পুণের আইএমডি-তে যোগদান করেন। এরপর থেকে প্রায় তিন দশক সময় ধরে ভারতের প্রথম সারির আবহবিদদের মধ্যে প্রথমে উঠে এসেছে 'সাইক্লোন ম্যান' মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র-এর নাম।

এরপর ১৯৯৯ সালের সুপার সাইক্লোনের ভয়াবহতা তাঁকে ব্যপকভাবে নাড়া দিয়েছিল। আর এরপরই আবহাওয়া দফতরগুলিকে আধুনিক করে তোলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কেন তিনি 'সাইক্লোন ম্যান'- বলা হয় তাঁর দেওয়া ঝড়ের পূর্বাভাস কিন্তু একেবারেই নড়চর হয় না। ঝড়ের গতিপথ ঠিক যেভাবে ব্যাখ্যা করেন তিনি ঠিক সেই পথেই ঝড় আসে নিয়ম মেনে। ঘূর্ণিঝড় 'হুডহুড', 'তিতলি', 'ফায়ালিন' এমনকি ২০১৯ সালের 'ফণী'র সময়েও তিনি এবং তাঁর দলের তরফে দেওয়া পূর্বাভাস মিলে গিয়েছিল পাই টু পাই। তাঁর দেওয়া ঝড়ের গতিপথ নির্ভুল হওয়ার কারণেই প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছিল অসংখ্য মানুষের। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.