সে ভবঘুরে এক পাগল, কিন্তু ওকে দরকার, কারণ পাড়ার রাস্তা রোজ পরিষ্কার করে সে



Odd বাংলা ডেস্ক: যত্রতত্র নোংরা, আবর্জনা ফেলে রাখা একদম পছন্দ করেন না জুলুম সিং। তবে এই নিয়ে কাউকেই তিনি বকাবকি করেন না। নিঃশব্দে পড়ে থাকা নোংরা ঝাড়ঝাঁটা দিয়ে পরিষ্কার করে দেন। করোনার থাবাতেও তাঁর আতঙ্ক নেই। তাই তিনি এখনও নিঃশব্দে পরিষ্কার করে চলেছেন হরিশ্চন্দ্রপুরের ব্যস্ততম এলাকাগুলি। তবে মুখে লেগেই রয়েছে বকবক। আসলে জুলুম সিং একজন ভবঘুরে। তাঁর আসল নাম অবদেশ পান্ডে। তাঁর মেজাজ কিছুটা উগ্র। তাই তাঁকে হরিশ্চন্দ্রপুরের মানুষ জুলুম সিং বলেই ডাকেন। তাঁর পরিবারও রয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাতকারণে বহুদিন যাবৎ তিনি হরিশ্চন্দ্রপুরে রয়েছেন। খানিকটা মানসিক ভারসাম্যহীন। হরিশ্চন্দ্রপুরে থাকার তাঁর কোনও স্থায়ী ঠিকানা নেই। কখনও বা দোকানের বারান্দায়। কখনও বা কারও বাড়ির চাতালে রাতটা কাটিয়ে দেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি হাতে ঝাঁটা নিয়ে বিড়বিড় করতে করতে সারা হরিশ্চন্দ্রপুরের ব্যস্ততম অঞ্চলগুলি এবং বাজারগুলি ঝাড় দিয়ে পরিষ্কার রাখেন। অন্য সময় দোকানের মালিকরা হাতে কিছু পয়সা করে দিয়ে দেন। কখনও বা খাবার দিয়ে সাহায্য করেন। কারও কাছ থেকে মুখ ফুটে কিছু চান না। দোকানের সামনে ঝাড় দেওয়ার পরিবর্তে কোনও দাবি করেন না। যে যা দেয় তাতেই তিনি সন্তুষ্ট, না দিলেও কিছু যায় আসে না। সারাদিন এলাকা পরিষ্কার করাই যেন তাঁর ব্রত। বর্তমানে পরিস্থিতি পালটেছে। এখন লকডাউনের জেরে সবকিছুই বন্ধ। করোনা সংক্রমণের ভয়ে সবাই ঘরবন্দি। এলাকার রাস্তাঘাটে মানুষজন নেই বললেই চলে। তবু প্রতিদিনের রুটিনে ছেদ পড়েনি জুলুম সিং বা অবদেশ পান্ডের। এখনও সকাল হতেই বন্ধ হয়ে যাওয়া দোকান ঘরের সামনে ঝাঁট দিয়ে চলেছেন। পরিষ্কার রাখছেন হরিশ্চন্দ্রপুরের ব্যস্ততম এলাকাগুলি।

স্থানীয় কাপড়ের ব্যবসায়ী রুহুল আমিন জানান, সকালে দোকান খোলার আগেই বাজার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখেন জুলুম সিং। এছাড়া হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার বিভিন্ন ব্যস্ততম এলাকা, বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন, বিভিন্ন রাস্তায় সবসময় তাঁকে দেখা যায় ঝাঁটা নিয়ে এলাকা পরিষ্কার করতে। ব্যবসায়ীরা তাঁকে বিভিন্ন সময়ে কিছু না কিছু দিয়ে সাহায্য করে থাকেন। তাঁর কোনও চাহিদা নেই। কিন্তু এখন লকডাউনের মধ্যে হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রায় সব দোকানই বন্ধ। তবুও তিনি প্রতিদিনের মতো এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখছেন। মানুষটি মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও পরিছন্নতা সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা দীপক দাস জানালেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সংক্রমণ ঠেকাতে সর্বাগ্রে পরিচ্ছন্নতা জরুরি। এই শিক্ষাটা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন জুলুম সিং। তাঁর মতো এমন পরিবেশপ্রেমীর সাহায্যে এগিয়ে আসেনি কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু এই নিয়ে আক্ষেপ নেই জুলুম সিংহের।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.