এলিফ্যান্ট অ্যাপেল, বারাসু, বার্মিজ আঙুরের মতো বিরল প্রজাতির ফল চাষ হচ্ছে খাস ভারতে, উদ্যোক্তা 'আত্মনির্ভর' ২ ভাই
ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, Odd বাংলা: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে 'আত্মনির্ভর ভারত' টার্মটি আপনারা ইতিমধ্যেই অনেকবার শুনে ফেলেছেন। আর এই ধ্যানধারণাকে এবার কাজে রূপায়িত করে দেখালেন কেরলের দুই ভাই। কেরলের কাকাডাম্পোইল গ্রাম যা 'মালাবারের উটি' নামেও পরিচিত, সেখানে বিরল প্রজাতির সব ফল নিজেরাই চাষ করছেন তাঁরা। ১৫০ বছরের আবদুল হামেদ হাজি এবং তাঁর দাদা ৫৪ বছর বয়সী আবদুল সেলিম মিলে প্রায় ১৮ একর জমির ওপর তৈরি করেছে ফলের বাগান, যেখানে এলিফ্যান্ট অ্যাপেল থেকে শুরু করে বার্মিজ আঙুর সব অদ্ভুত রকমের ফল ফলাচ্ছেন খাস ভারতের মাটিতে।
আবদুল হামেদ জানিয়েছেন, 'আমারা এক অনন্য ফলের বাগান প্রস্তুত করেছি, যা সারা ভারতে পাওয়া যাবে না। বাগানটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে পর্যটক এবং দর্শনার্থীরা এর মধ্য দিয়ে হাঁটতে পারে, কয়েকটি ফলের স্বাদও গ্রহণ করতে পারেন, এমনকি গাছের চারাও কিনতে পারেন। ফলের পাশাপাশি আমরা শাকসবজীও চাষ করছি, এমনকি কিছু বিরল প্রজাতির গরু এবং মাছও চাষ করছি।' জানা যায়, ২০১১ সালে যখন তাঁরা জমিটি কিনেছিলেন, তখন তারা কৃষিকাজের ওপর পুরোপুরি মন দিতে পারেননি, কারণ তাঁদের পাথর পেষণের ব্যবসা ছিল। ২টি ব্যবসা পাশাপাশি গুরুত্ব দিয়ে দেখভাল করাটা সম্ভব হয়ে উঠছিল না। এরপর দুই ভাই পরিকল্পনা করে কাজ ভাগ করে নেন এবং সমান্তরালভাবে দুটি ব্যবসা চালাতে থাকেন।
খামারের একটি অংশ |
মালাবারের মৃদুমন্দ বাতাসপূর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত ১৪ একর জমিতে কাকাডাম্পোইলের ঠান্ডা আবহাওয়াকে কাজে লাগিয়ে দুই ভাই শীত অঞ্চলের উপযোগী গাছের চারা রোপন করেন তাঁরা। তাঁদের বাগানে বারাসু থেকে শুরু করে, স্ট্রবেরি, পুলাসান (Pulasan), গাব জাতীয় বিশেষ গাছ, মিরাক্যল ফ্রুট (Abiyu miracle fruit), ড্রাগন ফ্রুট- থেকে শুরু করে স্থানীয় পেয়ারা, নাশপাতি সবেরই চাষ হয় তাঁদের কৃষিজমিতে। ফলের পাশাপাশি তাঁরা গোলমরিচ, কফি এবং লবঙ্গেরও চাষ করেন।
তাঁদের কথায়, এখনও পর্যন্ত তাঁদের কেনা সবচেয়ে দামি হল বার্মিজ আঙুরের চারা। কিন্তু তবুও তাঁরা এটি কেনার আগে দুবার ভাবেননি কারণ এটি তাঁদের ফার্মে সবচেয়ে বিরল প্রজাতির চারা ছিল। এর পাশাপাশি তাঁরা নিত্যপ্রয়োজনীয় বাঁধাকপি, ফুলকপি বীটও চাষ করেন, তবে বিক্রির জন্য নয়, পরিবারের জন্য। তাঁরা ধাপ চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে কৃষিকাজ করেন। তবে গাছে কেবল জল দেওয়ার পরিবর্তে তাঁরা জৈব সার মিশিয়ে জল দেন।
এখানেই শেষ নয়, তাঁরা খামারে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করেছেন। তাতে চাষের ক্ষেত্রে তাঁদের সময়ও অনেকটা বাঁচে। শুধু তাই নয় খামার সংলগ্ন কাকাডাম্পোইল জলপ্রপাত যেন আশীর্বাদ স্বরূপ। তাঁরা ঝর্নার কাছে একটি স্টল বানিয়েছেন, যাতে আগত পর্যটকরা সেখান থেকে চারা ও ফল কিনতে পারেন এবং তাদের মধ্যে অনেকে খামার ঘুরেও দেখতে চান। খামারের মধ্যে থাকা পুকুরে তেলাপিয়া-রুই মাছও চাষ করেন। ভবিষ্যতে আরও নিত্যনতুন গাছের সম্ভার নিয়ে নিজেদের চাষাবাদ আরও বড় করতে চান এই দুই ভাই।
Post a Comment