রবীন্দ্রনাথের নাতনী বলিউডে প্রথম লিপ কিস করেছিলেন, জানুন এই অজানা কথা


Odd বাংলা ডেস্ক: ইমরান হাসমির কিস দেখে অনেকেই বলেন ইস! কিন্তু জানেন কি ভারতীয় সিনেমায় চুম্বন বহু প্রাচীন। হ্যাঁ ঠিক শুনেছেন। ভারতের সিনেমা জগতে প্রথম ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে চুম্বন করেছিলেন এক নায়িকা। কিস তো নয় একেবারে স্মুচ যাকে বলে। সেই নায়িকা আবার ছিলেন জমিদার কন্যা। তাঁর নাম দেবিকা রাণী। দেবিকা রাণী ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে মার্চ ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ওয়াল্টেয়ার নামক স্থানে এক অত্যন্ত সমৃদ্ধিশালী ও শিক্ষিত বাঙ্গালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতামহ রাজশাহী জেলার পাবনার জমিদার ছিলেন। দেবিকার পিতা কর্নেল মন্মথ নাথ চৌধুরী ছিলেন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির প্রথম ভারতীয় সার্জন-জেনারেল। তার তিন কাকা আশুতোষ চৌধুরী ছিলেন কলকাতা উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি, যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী ছিলেন কলকাতা শহরের বিশিষ্ট আইনজীবি এবং প্রমথ চৌধুরী ছিলেন একজন বিখ্যাত বাঙালি লেখক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে সম্পর্ক-

দেবিকা রাণী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মীয় ছিলেন। দেবিকারানীর মা লীলা চৌধুরীর মাতামহী সৌদামিনী দেবী (গঙ্গোপাধ্যায়) ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড়দিদি। নয় বছর বয়সে দেবিকা এবং তার ভাইকে ইংল্যান্ডের বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো হয়। তাঁদের পিতা ইংরেজি পাবলিক স্কুলে শিক্ষালাভ করে তত্‍কালীন ঔপনিবেশিক যুগে উন্নতিলাভ করেছিলেন, তাই তিনি তার সন্তানদের যতটা সম্ভব ইউরোপীয় হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সেই কারণে দেবিকার শৈশবের বেশিরভাগ ইংল্যান্ডে অতিবাহিত হয় এবং সেই সময় তার পিতা-মাতার সঙ্গে তার সামান্যই যোগাযোগ ছিল। আর সেই কারনেই হয়তো দেবিকার মধ্যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বিশেষ প্রকাশ দেখা দেয়। তিনি লজ্জা পেতেন খুবই কম। অথচ ভারতে তখনও নারীরা বাড়ির বাইরে সেভাবে বের হতে পারতো না।



প্রেম-বিয়ে এবং যৌ’নতা-

১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কুড়ি বছর বয়সী দেবিকার সঙ্গে তার চেয়ে ষোল বছরের বড় হিমাংশু রায়ের সাক্ষাত্‍ ঘটে। একজন ভারতীয় আইনজীবি হিসেবে জীবন শুরু করলেও হিমাংশু চলচ্চিত্র নির্মাণকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। এই সময় হিমাংশু লন্ডন শহরে তার প্রপঞ্চ পাশ চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজে ব্যস্ত ছিলেন দেবিকার দক্ষতায় মুগ্ধ হিমাংশু তাকে এই চলচ্চিত্রের প্রযোজনা দলে আমন্ত্রণ জানান। দেবিকা এই অনুরোধ রাখেন এবং পোশাক ডিজাইন এবং শিল্প নির্দেশনার কাজে সহায়তা করার জন্য হিমাংশুর সাথে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হন। চলচ্চিত্র নির্মাণের পরে তারা জার্মানি যান, যেখানে দেবিকা ফ্রিত্‍জ ল্যাং প্রমুখ জার্মান চলচ্চিত্র শিল্পীদের নিকট চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্বন্ধে শিক্ষালাভ করেন। তাঁদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে দেবিকা বার্লিনের ইউএফএ স্টুডিওজে চলচ্চিত্র নির্মাণের শিক্ষাক্রমে ভর্তি হন। যেখানে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে সাথে অভিনয়ের শিক্ষাও লাভ করেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে প্রপঞ্চ পাশ মুক্তিলাভের পর দেবিকা রাণী ও হিমাংশু রায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।এই সময় তারা দুইজন একসঙ্গে অভিনয় করতেন, যার জন্য তারা সুইজারল্যান্ড ও স্ক্যান্ডিনেভিয় দেশগুলিতে বহু সম্মান ও পুরস্কার লাভ করেন। এই সময় দেবিকা অস্ট্রিয় নাট্য পরিচালক ম্যাক্স রাইনহার্টের নিকটেও প্রশিক্ষণ লাভ করেন। শোনা যায় হিমাংশু রায়ের সঙ্গে বিয়ের আগে থেকেই দেবিকা বসবাস শুরু করেন। মানে বর্তমানে যাকে লিভ ইন বলে আর কি। আর তখন থেকেই অনস্ক্রীন যৌ’ন উত্তে’জক সিনেও দেবিকা খুব একটা অসুবিধা অনুভব করতেন না। আর সে কারনেই ১৯৩৩ সালের কার্মা ছবিতে হিমাংশু রায়কে অনস্ক্রিন কিস করতে দেবিকার অসুবিধা হয়নি। হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রটি ১৯৩৩ সালের মে মাসে লন্ডনে প্রথম দেখানো হয়। উইন্ডসর এ রয়েল পরিবারের জন্য একটি বিশেষ পরিবেশনার পাশাপাশি, এই ছবিটি সমগ্র ইউরোপে সমাদৃত হয়।

শো বিজ কারও হয় না, বলিউড কাউকে মনে রাখে না-

১৯৪০ সালে দেবিকার স্বামী মা’রা যান। তিনি একা হয়ে পড়েন। চলচ্চিত্র জগত্‍ থেকে অবসর নেওয়ার পর দেবিকা ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে রুশ চিত্রশিল্পী স্বেতোস্লাভ রোয়েরিখকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা মানালি শহরে বসবাস শুরু করেন। এই সময় দেবিকা বন্যপ্রাণ নিয়ে কয়েকটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। মানালি শহরে কয়েক বছর বসবাসের পর তারা ব্যাঙ্গালোর শহরে বসবাস শুরু করেন, যেখানে শহরের প্রান্তে তারা ৪৫০ একর (১৮,০০,০০০ মি) মাপের একটি বাড়ি বানিয়ে বাকি জীবন অতিবাহিত করেন। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের ৯ই মার্চ শ্বাসনালীর সংক্র’মণের ফলে এই শহরেই দেবিকার মৃ’ত্যু হয়।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.