কেন রথের আগে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন জগন্নাথ দেব, এর নেপথ্যের কাহিনী অবাক করা
Odd বাংলা ডেস্ক: প্রতি বছর জৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমার দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন জগন্নাথ। অসুস্থ থাকেন টানা ১৫ দিন। কিন্তু দেবতারও অসুখ করে? এমন প্রশ্ন নিশ্চয় বহুবার এসেছে আপনার মনে। কিন্তু জানেন কি এর পেছনে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনি। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় সেই অবাক করা গল্প জগন্নাথ ও তাঁর ভক্ত মাধব দাসকে নিয়ে।
মাধব দাস ছিলেন একজন মনে-প্রাণে জগন্নাথ ভক্ত। সংসারের সব কিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখে কেবল জগন্নাথ সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন তিনি। কিন্তু আচমকাই তিনি প্রবল অসুস্থ হয়ে পড়েন। বমি এবং সঙ্গে মলমূত্র ত্যাগ করতে থাকেন। এই অবস্থায় অনেকেই তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। মাধব জানান, তাঁর কোনও ভয় নেই। ভগবান জগন্নাথ তাঁকে রক্ষা করবেন। এরপর পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যেতে থাকে। পুরোপুরি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন মাধব। কিন্তু তখনো পর্যন্ত জগন্নাখ দেবের প্রতি তাঁর ভক্তি অটুট ছিল।
শেষ পর্যন্ত ভক্তের বেদনা দেখে তাঁকে সেবা করতে আবির্ভূত হন জগন্নাথ। তাঁর সেবাতেই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন মাধব। জানা যায় জগন্নাথদেব মাধবের মল-মূত্র লেগে থাকা পোশাকও পরিষ্কার করতেন। তবে এসবের কিছুই মাধব জানতেন না। অসুস্থতার জন্য প্রায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সংজ্ঞা ফিরতেই প্রভুকে দেখ চমকে ওঠেন তিনি। এরপর তিনি প্রভুকে প্রশ্ন করেন যে, কেন তিনি তাঁর সেবা করলেন। তিনি তো চাইলে এক লহমায় তাঁকে সুস্থ করে তুলতে পারতেন। এর উত্তরে প্রভু জগন্নাথ তাঁকে জানান, প্রত্যেক মানুষকেই নিজের ভাগের কষ্টটা ভোগ করতে হয়। যদি তিনি মাধবকে তার আগেই সারিয়ে তুলতেন, তাহলে মাধবকে তাঁর ভাগের বাকি কষ্ট ভোগ করার জন্য পুনরায় জন্ম নিতে হত। আর তিনি তা কখনওই চান না, তাঁর কোনও ভক্তকে কেবল কষ্ট ভোগ করার জন্য পুনর্জন্ম নিতে হয়। এরপর জগন্নাথদেব তাঁকে জানান মাধবের এখনও ১৫ দিনের অসুখ ভোগ করা বাকি আছে। কিন্তু তিনি ওই ক’দিনের অসুখ মাধবের কাছ থেকে নিয়ে নিতে চান।
শেষ পর্যন্ত তাই হয়। মাধব সুস্থ হয়ে ওঠেন। আর ভক্তের অসুখ নিজের শরীরে ধারণ করেন জগন্নাথ। আর এরপর থেকেই প্রতি বছর প্রতি বছর ১৫ দিনের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়েন জগন্নাথ। এই আচার শুরু হয় স্নান যাত্রার পরের দিন থেকে, চলে টানা ১৫ দিন। ১৫ দিনের অসুস্থতা কাটিয়ে অনুষ্ঠিত হয় রথযাত্রা উৎসব। এই ১৫ দিন জগন্নাথ-বলরাম ও শুভদ্রাকে ৫৬ ভোগ দেওয়া হয় না, তাঁকে তখন আয়ুর্বেদিক ভেষজ ভোগ নিবেদন করা হয়। মন্দিরের দরজা বন্ধ রাখা হয়। জগন্নাথের মূর্তিতে শীতল প্রলেপ লাগানো হয়। এই ঘটনায় প্রভুর তাঁর ভক্তের প্রতি ভালবাসার গল্প স্পষ্ট।
Post a Comment