বৌদিরাই তাদের আসল টার্গেট, যেভাবে প্রতারণার ফাঁদ পাতে তারা
Odd বাংলা ডেস্ক: খবর বাংলাদেশের। বনশ্রীর এক নারীর ফেসবুকে হুট করেই একটি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট চলে আসে। বিদেশি সুন্দর চেহারার এক যুবকের ছবি। থাকে লস অ্যাঞ্জেলেসে। তারপর মেসেজ। এভাবে দু-এক দিন আলাপ চলার পরেই বিদেশি যুবক জানায়, তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায়। ওই নারীর কথা বলে ভালোই লাগল। হ্যাঁ, বন্ধুত্ব করতে আপত্তি নেই। ছেলেটি বলে-এখন থেকে আমরা খুবই ভালো বন্ধু, কারণ এখানে আমি বড় একটা চাকরি করি, বিজনেস আছে কিন্তু বন্ধু নেই। তাই তুমিই এখন আমার প্রিয় বন্ধু। এভাবেই আরো দু-এক দিন কথা বলার পরেই সে জানায়, একটা শপিং মলে আসছে। কেন? সেটা বলা যাবে না। সারপ্রাইজ।
আসলেই সারপ্রাইজ। সারপ্রাইজ সর্বশেষে জানা যাবে। তার আগে ঘটনাটা শেষ করি। শপিং মলে গিয়ে সে বেশ কিছু গিফটের ছবি দেখায়। এগুলো সে কিনেছে। এর পরে অলঙ্কারের দোকানের ছবি দেয়। কিছুক্ষণ পর বেশ কিছু সোনা ও ডায়মন্ডের অলঙ্কারের ছবি সে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠায়। এরপর সে বাসায় চলে এসেছে জানায়।
তারপর গিফটের ছবির প্যাক করা অবস্থায় একটা ছবি পাঠায়, বলে এসব তোমার জন্য আমার পক্ষ থেকে গিফট। বন্ধুত্বের নিদর্শন। গ্রহণ করতেই হবে। আমি পার্সেল করে দিচ্ছি। পার্সেল করার ছবিও পাঠায়। এই গিফটের প্যাকেটে যেসব জিনিস রয়েছে, তার আনুমানিক মূল্য ৫০ লাখের ওপরে। আর যেহেতু বিদেশ থেকে কেউ পাঠাবে, ওটা দামি বলে বিশ্বাস করতে বাধ্য।
দুদিন পর বাংলাদেশ থেকে ফোন এলো ঐ নারীর মোবাইলে। বলা হলো, আপনার একটা পার্সেল এসেছে, ওটা ছাড়াতে কিছু টাকা লাগবে। কত? ২৫ হাজার, বিকাশ করতে হবে। ওই নারী বিকাশ করে দেন। এরপর বলা হলো, ওটা ঝামেলা হয়ে গেছে। এখনই ছেড়ে দেওয়া হবে, ৩০ হাজার টাকা লাগবে। এখনই। বাসা থেকে বের হয়ে বিকাশ করে দিলেন ওই নারী। এরপর বলা হলো, পার্সেলের বাকশো খুলে বহু ডলার পাওয়া গেছে। ওটা ওভাবে নিতে হবে- দুই লাখ টাকা এ জন্য প্রদান করতে হবে।
এভাবে বনশ্রীর ওই নারী ছয় লাখ টাকার মতো দেন। কিন্তু গিফট পান না। অলংকার বিক্রি করে স্বামীর অগোচরে এসব টাকা দিয়েছিলেন। অসহায় হয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন ঐ নারী।
এসব প্রতারণার আড়ালে রয়েছে অসংখ্য আফ্রিকান যুবক। সম্প্রতি ১২ জন নাইজেরিয়ান যুবক গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশে বসেই এমন প্রতারণা করছিলেন তাঁরা। গত দুই মাসে তাঁরা মানুষের সঙ্গে ঠগবাজি করে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানিয়েছে সিআইডি।
নাইজেরিয়ার ১২ নাগরিক হলেন-নান্দিকা ক্লিনেন্ট চেকেঙ্গো, ক্লিটাস অ্যাচোনা, ওনেকুলভে থিমিটি চিনঙ্গে, একিনি উইজডম, চিগোজি, ইভান্ডে গ্রেব্রিল ওভিনা, চেলেসটিন পেট্রিক ওভিয়াজুলো, মরডি নামডি কলনিস, অরদু চোকুদ সামি, দুভোকং সোমাইনা, জিরিন প্রেসাস একিনি ও নউগক উইজডম চিকাডো।
গতকাল দুপুরে সিআইডি দপ্তরে প্রেস ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার জানান, প্রতারিত হয়ে এক ব্যক্তি সিআইডিতে অভিযোগ করেন। এ সূত্র ধরেই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা অভিনব কায়দায় ওই ব্যক্তির সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব করেন। একপর্যায়ে ক্যাথরিন কুলেন সুফিয়া নামের একটি মেসেঞ্জার আইডি থেকে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসহ পার্সেল উপহার দেওয়ার প্রস্তাব দেন তাঁকে। পরবর্তী সময়ে এসব মূল্যবান সামগ্রীর এয়ারলাইনস বুকিংয়ের প্রমাণ পাঠান। এরপর এসব গিফট বক্সে কয়েক মিলিয়ন ডলারের মূল্যবান সামগ্রী রয়েছে বলে তাঁরা তাঁকে জানান। তাঁকে চট্টগ্রাম কাস্টমস গুদাম থেকে বক্স রিসিভ করতে বলা হয়।
এ সময় রাহাত আরা খানম নিজেকে কাস্টমস কমিশনার পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে মূল্যবান গিফটসহ শুল্ক বাবদ চার লাখ ২৫ হাজার টাকা দিতে কয়েকটি ব্যাংকের হিসাব নম্বর দেন। গিফটটি গ্রহণ না করলে আইনি জটিলতার ভয়ও দেখান রাহাত আরা খানম। এই অবস্থায় ভিকটিম তাঁদের দেওয়া বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তিন লাখ ৭৩ হাজার টাকা পাঠান। একইভাবে এই প্রতারকরা পরস্পরের যোগসাজশে শতাধিক ভিকটিমের কাছ থেকে পাঁচ-ছয় কোটি টাকা দুই মাসের মধ্যে হাতিয়ে নেন।
Post a Comment