মর্গে দু'ভাই একসঙ্গে লাশ কাটতেন, সেই ভাইয়েরই ময়নাতদন্তে অঝোরে কান্না!



Odd বাংলা ডেস্ক: বড় ভাইয়ের কাছে খুবই আদরের ছিল ছোট ভাইটি। তার ওপর আবার কর্মস্থলও দু’জনের একই। তাই জীবনের প্রায় সব মুহূর্তে দু’ভাই ছিলেন একেবারে কাছাকাছি। পেশাগত কিংবা পারিবারিক সমস্যায় তাঁরা ছিলেন একে অপরের ভরসা। দু’জনেরই কাজ লাশ কাটা ঘরে। একদিন যে ঘরে অন্যের প্রিয়জনের দেহ ময়নাতদন্ত করতে সাহায্য করেছেন, আজ ভাইয়েরই দেহ শায়িত সেই ঘরে। এ দৃশ্য দেখে চোখের জলে ভাসলেন বড় ভাই। আপনজনের মৃত্যুর কথা মেনে নেওয়া যে বড়ই কঠিন তা যেন আরো একবার বুঝতে পারলেন তিনি। ঘটনাটি খড়গপুরের। ঠিক কী হয়েছিল? শনিবার দুপুরে মকরামপুরের দিক থেকে বাইক চালিয়ে খড়গপুরে ফিরছিলেন নুরু ওরফে দীপক নায়েক। তখন ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের একই লেনে একটি লরি ঢুকে পড়ে। বাইক ও লরির মুখোমুখি ধাক্কা লাগে। নারায়ণগড় থানার রামপুরা টোল প্লাজার কাছে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। সন্ধ্যায় তার মৃতদেহ খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসা হয়। আর রবিবার দুপুরে হয় ময়নাতদন্ত। কিন্তু ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে হাত কেঁপে গেল মৃতের বড় ভাই গৌতম নায়েকের।

জীবনে কয়েকশ অপঘাতে মৃত্যুর ময়নাতদন্তের কাজ করেছেন গৌতম। তাঁর সহযোগী ছিল ছোট ভাই নুরু। মৃতদেহ কাটাছেঁড়া করা ও দেখা দু’জনের কাছেই ছিল জলভাত। অনেক পরিচিত মানুষের মৃতদেহ লাশঘরে কাটাছেঁড়া করেছেন। কিন্তু কোনো অনুভূতি হতো না। এক ফোঁটা চোখের জল কোনো দিন কারোর জন্য পড়েনি। কিন্তু গৌতম কোনো দিন ভাবতেও পারেননি তাঁর ভাই নুরুই একদিন শুয়ে থাকবে লাশঘরে। আর তার মৃতদেহ এই লাশঘরে কাটাছেঁড়া করা হবে। গৌতমের কান্না দেখে অবাক হয়ে যান তাঁর সহকর্মীরা। কান্নার কারণ জানার পর আর লাশঘরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি তাঁকে। গৌতমের পরিবর্তে অটোপসি সার্জেনের সঙ্গে ছিলেন ওই বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ইনচার্জ সুনীল ঘোড়ই। তিনি বলেন, 'গৌতমকে লাশঘরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ভাইয়ের মৃতদেহ যখন কাটাছেঁড়া হচ্ছে তখন তিনি মর্গের লাশঘর লাগোয়া অফিসে বসে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। শুধু মুখে বলছেন, প্রিয়জনের মৃতদেহ কাটাছেঁড়া করা হলে কতটা কষ্ট হয় সেটা আজ বুঝতে পারছি।'
Blogger দ্বারা পরিচালিত.