আপনার পোষ্য সারমেয়টির বয়স কত? যত সহজে হিসাব করলেন, বিষয়টি কিন্তু ততটাও সহজ নয়


Odd বাংলা ডেস্ক: বাড়িতে কোনও পোষ্য অতিথিকে নিয়ে আসার সময় আপনাকে বলা হয় সে হয়তো কয়েক মাসের, সেইমতো আন্দাজ করে আপনি হয়তো তাঁর জন্মদিন সেলিব্রেটে করেন। বা হয়তো পোষ্যটি যদি আপনার বাড়িতেই জন্ম নেয়, তাহলে সেই দিন থেকে এক বছর পর হয়তো আপনি তার প্রথম জন্মবার্ষিকী পালন করেন। কিন্তু বিষয়টি কিন্তু এতটাও সহজ নয়। জানলে অবাক হবেন, মানুষের চেয়ে কুকুরের বয়স অনেক দ্রুত বাড়ে। সেই অনুযায়ী তার আচার-আচরণ, খাদ্যের চাহিদাও বদলে যায়। আর এই বিষয়গুলি মাথা রেখেই কুকুরের বয়স পরিমাপ করার একটা পদ্ধতি বের করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। 

বিশেষজ্ঞরা বলেন, আপনি আপনার ১০ বছরের কুকুরটিকে যে অবস্থায় দেখছেন, সেটা একজন মানুষের ৭০ বছর বয়সের অবস্থা। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, একজন মানুষের বয়স এক বছর হওয়া, একজন কুকুরের বয়সের সাত বছর বয়সের সমান। তবে সম্প্রতি গবেষকেরা জানিয়েছেন, কুকুরের বয়স বের করার এই পদ্ধতিটিও সহজ নয়। তাহলে কীভাবে আপনার পোষ্য সারমেয়টির বয়স গোনা সম্ভব?  

বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোন কুকুর কোন প্রজাতির সেটার উপরেও বয়স বাড়ার বিষয়টি নির্ভর করে। দেখা যায়, বড় আকৃতির কুকুরের প্রজাতি ছোট আকৃতির কুকুরের প্রজাতির চেয়ে কম বছর বাঁচে। সুতরাং বলা যায় যে, ছোট আকৃতির কুকুরদের বয়স ধীরে বাড়ে। 

এখন প্রশ্ন হল, আমাদের সাধারণ মানুষের কাছে বয়স ব্যাপারটা কী? সাধারণত, আমরা যেদিন জন্মেছি তারপর থেকে সময়ের হিসেবে বয়স নির্ধারণ করে থাকি। কিন্তু এছাড়াও জৈবিক বয়সের ব্যাপারটাও অনেকে গণনা করেস থাকেন। এক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তির শরীরের উন্নয়ন কীভাবে এবং কতটা হয়েছে তার উপরে নির্ভর করে তার বয়সের হিসেব করা হয়। তবে একজন মানুষের শারীরিক কার্যকারিতা,  শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ ইত্যাদি পরীক্ষা করেও তা গবেষণার আওতায় আনা হয়। এছাড়াও বয়স নির্ধারণ করার জন্য একজন ব্যক্তির জিন কতটা ব্যাপ্তি পেয়েছে, রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কতটা- এই সমস্ত বিষয়গুলিও গবেষণার আওতায় আনা যায়। যেমন ধরুন আপনার বয়স ৪৫ বছর হলেও জীবনযাপনের ধারার জন্য আপনার শরীরের বয়স ৬০ বছর হয়ে যেতে পারে।

সারমেয়র ক্ষেত্রে বয়সের হিসাবটা কেমন হবে?
কোনও প্রাণীর বয়স জানার জন্য 'এপিজেনেটিক ক্লক' হিসাব করাটাই সবচেয়ে ভালো। অতএব আপনার পোশ্য সারমেয়টির বয়স গণনার ক্ষেত্রে হিসাবটা সময়ের সঙ্গে না করে তার জৈবিক বয়সের মাধ্যমে করাটাই ভাল। আদতে আপনার কুকুরের বয়স ১ বছর না ৩ বছর তাতে খুব একটা যায়-আসে না, বরং, সে কখন সন্তান উৎপাদনের উপযোগী হয়ে উঠছে, সেটা আপনি তার বয়স থেকে ধারণা পেতে পারেন। আর এই নতুন গবেষণা পদ্ধতি 'এপিজেনেটিক ক্লক' হিসাবে গণনা করাটাই ভাল। এক্ষেত্রে একটি প্রাণীর ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার বয়স নির্ধারণ করা হয়। বিশেষ করে, 'মিথাইলেশন প্রক্রিয়া' খুব ভালো ফলাফল দিতে পারে, যেখানে বয়সটা ডিএনএ থেকেই সরাসরি জানা যায়। এ পদ্ধতিতে ডিএনএ'র মিথাইল গ্রুপকে দেখা হয়। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিএনএ এই মিথাইল গ্রুপকে আকর্ষণ করতে থাকে, যেটা পরবর্তীতে ডিএনএ-এর সঙ্গেই যুক্ত থাকে। এই দলটি নিজ থেকে ডিএনএ পরিবর্তন করতে পারে না। এর ফলে বয়স জানাটা অনেক বেশি সহজ হয়। এছাড়াও চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কুকুরের পেশি, হাড়, হাড়ের সংযোগস্থল, ঘোলাটে চোখ, ধূসর লোম, চামড়া এবং পা দেখেও তার বয়স সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব।

তবে একজন প্রাণীর দাঁত ওঠা এবং অন্যান্য শারীরিক উন্নতি একটা নির্দিষ্ট ধাপে হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় গবেষকেরা কুকুরের বয়স বের করার একটি উপায় তৈরি করেছেন। আর সেটি হল-
মানুষের বয়স = ১৬ X কুকুরের বাহ্যিক বয়স (বছর হিসেবে) + ৩১
এ থেকে বুঝতেই পারছেন যে একটি কুকুরের বয়স মানুষের তুলনায় খুব দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে। তবে তা মাঝবয়সে গিয়ে ধীরগতি হয়ে পড়ে। জীবনের বেশিরভাগ সময় একটি কুকুর মাঝবয়সী হয়ে কাটায়। আরও সহজে বলতে গেলে 'ডগ ইয়ার'-এ প্রথমদিকে ১ বছর মানে ৩১টি 'হিউম্যান ইয়ার'। আর এরপর প্রতি দুই বছরের সঙ্গে সঙ্গে একটি কুকুর একজন মানুষের ১১ বছরের সমান বয়স অর্জন করে। যেমন, একটি কুকুরের বয়স যদি ৮ হয়, তার অর্থ তার জৈবিক বয়স হল ৩১ + ৩x১১ = ৬৪।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.