মরছে মানুষ-গরু-মুরগি, সব দোষ গ্রামের ওই ডাইনির! আজও অন্ধবিশ্বাস



Odd বাংলা ডেস্ক: ডাইনি অপবাদে এক আদিবাসী নারীসহ পুরো পরিবারকে গ্রামছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে বীরভূম জেলার বোলপুর থানার সিয়ান-মুলুক গ্রাম পঞ্চায়েতের মণিকুণ্ডতলা গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, আক্রান্ত নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, আদিবাসী অধ্যুষিত বোলপুর থানার সিয়ান-মুলুক গ্রাম পঞ্চায়েতের মণিকুণ্ডতলা গ্রাম। সে গ্রামের মানুষদের দাবি, গত কয়েক মাস ধরে এই গ্রামে বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে ঘটনাচক্রে। 

তাছাড়াও একের পর এক গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি মরছে। সেই ঘটনার কারণ খুঁজতে গ্রামের কয়েকজন মিলে এক ওঝার কাছে যান। তার মতে, মণিকুন্ডতলা গ্রামের যশোমতী হাঁসদা ডাইনি সাব্যস্ত হন। তার পরেই তার বাড়িতে চড়াও হয় গ্রামবাসী। জানা গেছে, যশোমতী হাঁসদা ও তার পরিবার বাড়িতে আদিবাসী নিয়মমতে পুজো করেন। তাই গ্রামের কিছু বাসিন্দার মনে সন্দেহ আগেই ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে ওঝার মতামত পেয়েই সে সন্দেহ বিশ্বাসে পরিণত হয় তাদের। গ্রামের মোড়ল পটল টুডুর সঙ্গে আলোচনায় বসেন বাসিন্দারা। এর পরেই বেলা ৩টার দিকে যশোমতীর বাড়িতে চড়াও হন গ্রামের লোকজন। তাদের ফতোয়া দেওয়া হয় গ্রাম থেকে চলে যেতে। যশোমতী ও তার পরিবার বাধা দিলে সকলে চিৎকার করে ডাইনি অপবাদ দিতে থাকে। 

যশোমতীর তিন ছেলে প্রতিবাদ করলে গ্রামের লোকজন মারধর শুরু করে বলে জানা গেছে। পরে পুরো পরিবারকে গ্রামছাড়া করা হয় বলে অভিযোগ। যশোমতী হাঁসদার ছেলে রাম হাঁসদা বলেন, গ্রামে লোক মরছে বলে কয়েকজন মিলে ডাইনি খুঁজতে ওঝার কাছে যায়। সেখানেই আমার মাকে ডাইনি বলা হয়। তারপর সবাই মিলে মোড়লকে নিয়ে সভা করে আমাদের গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিল। মা, বউ, বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরছি রাস্তায় রাস্তায়। যশোমতীর ১২ সদস্যের পরিবার। 

তাদের মধ্যে চারজন নারী, চারজন বাচ্চা ও চারজন পুরুষ। মঙ্গলবার বিকেল থেকেই তারা গ্রাম ছাড়া। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তাদের মারতে মারতে গ্রামের বাইরে বের করে দেওয়া হয়েছে। রাতে মুলুক তৃণমূল কার্যালয়ে এসে আশ্রয় নেয় ওই পরিবার। বুধবার সকালে বোলপুর থানায় এসে অভিযোগ করেন তারা। এর পরেই প্রকাশ্যে আসে গোটা ঘটনা। আহত যশোমতী হাঁসদা বলেন, “গ্রামের লোক একজোট হয়ে আমাকে ডাইনি বলে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিল। আমি ডাইনি, তাই আমাদের গোটা পরিবারকে মেরে বের করে দিল। আমি মোড়ল আর অন্য লোকদের পায়ে ধরে বললাম আমি ডাইন নই, তবুও ওরা তাড়িয়ে দিল। অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে বোলপুর থানার পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিং বলেন, ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই পরিবারকে গ্রামে ফেরানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.