'আমার বাবা বশির আহমেদ কি বুকে গুলি খেতে নেমেছিলেন গাড়ি থেকে?'



Odd বাংলা ডেস্ক: গুলিতে ঝাঁঝরা বৃদ্ধের নিথর দেহ পড়ে ছিল রাস্তায়। ছোট্ট শিশু তার বুকের ওপর বসে অঝোরে কেঁদেছে। রক্তে মাখা দাদুর দেহ আর তার নাতির কান্নার ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে গেছে। মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখে ফেরা সেই তিন বছরের শিশু আয়াদ এখন 'পাপা'-র কথা শুনলেই বলছে 'ঠাক ঠাক'। মানে গুলির আওয়াজ। কাশ্মীরের সোপোরে বুধবার সকালে গুলিতে নিহত 'পাপা'- অর্থাৎ দাদুর রক্তমাখা দেহের বুকের ওপর বসে থাকা আয়াদের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দুনিয়ায়। বাড়ির লোকেদের দাবি, আয়াদ এখনো মাঝে মাঝেই বলছে, কিভাবে 'ঠাক ঠাক' করা হয়েছিল দাদুকে। তাদের ভয়, এই দুঃস্বপ্নের স্মৃতি হয়তো সারা জীবন ভোগাবে ছোট্ট আয়াদকে। কিন্তু কে গুলি করল ৬৫ বছরের বশির আহমেদ খানকে? এই প্রশ্নই বারবার তুলছে পরিবার। জঙ্গি আর সিআরপির গুলিযুদ্ধের মধ্যে পড়েই বশির মারা গেছেন— প্রশাসনের এই ব্যাখ্যা তারা চোখ বুজে মানতে নারাজ। নিহতের ছেলে বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেছিলেন, গাড়ি থেকে নামিয়ে তাঁর বাবাকে গুলি করেছে নিরাপত্তা বাহিনীই। যা খণ্ডন করতে আজ ফের বিবৃতি দিয়েছেন সিআরপির এডিজি জুলফিকার হাসান। বলেছেন, 'সম্পূর্ণই অসত্য কথা। কিছু লোক ঘটনাটিকে অন্য  চেহারা দিতে চাইছে।'

তবে বশিরের ছেলে-মেয়ের প্রশ্ন, গোলাগুলির মধ্যে পড়ে গেলে কেউ গাড়ি থেকে নামতে যাবেন কেন? বিশেষত সঙ্গে যখন একটা শিশু রয়েছে! এমনকি বাড়ির লোকেদের কারো কারো দাবি, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতেই যে বশির নিহত হন, ছোট্ট আয়াদের মুখেই সেই কথা তারা শুনেছেন। বশিরের ছেলে, ২৫ বছরের সুহেল আহমেদ খান ইসলামিক স্টাডিজ নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়ছেন জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। বললেন, 'একটা শিশু কেন বাড়িয়ে বলবে? সে যা দেখেছে, তা-ই বলছে। তা-ও আমি আমার ভাগ্নের কথা বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু সোপোরের থানায় গিয়ে দেখলাম, বাবার গাড়িটায় একটা আঁচড় পর্যন্ত নেই। বাবা যদি গুলিযুদ্ধের মধ্যে পড়েই মারা যায়, তাহলে গাড়ির কাচ ভাঙবে, ভেতরে রক্তের দাগ থাকবে। সেসব কিচ্ছু নেই।'

বশিরের স্ত্রী বারামুলার মহিলা থানার অবসরপ্রাপ্ত এসএইচও। এখন আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। বৃহস্পতিবার তাঁর অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। বশিরের বাড়ির গৃহপরিচারিকা লকডাউনে আটকে আছেন সোপোরে নিজের বাড়িতে। তাকেই আনতে যাচ্ছিলেন বশির। ছেলে জানালেন, সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ থানা থেকে ফোন করে বলা হয়, বশির দুর্ঘটনায় পড়েছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা দেখতে পান বাবার গুলিবিদ্ধ দেহ। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ বলেছে, খুনের ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে সিআরপির বিরুদ্ধে। গুজব যারা ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলারও হুমকি দিয়েছে তারা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, আয়াদের ছবি টুইট করে, তার পরিচয় প্রকাশ করে শিশু সুরক্ষা আইন (২০১৫) লঙ্ঘন করেছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। তবে সোপোরের এসএসপি জাভেদ ইকবাল জানান, ভাইরাল হওয়া আয়াদের ছবি কে তুলেছিল, তা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে।

বাবার মৃত্যুর তদন্ত চাইছেন বশিরের মেয়ে ইরম বশির খান। বলছেন, 'আমরা পরিবারের লোকেরা তো ঘটনাস্থলে ছিলাম না। তাই বাবাকে নিরাপত্তা বাহিনী মেরেছে, এ কথা আমরা বলতে পারি না। কিন্তু আইজি কী করে বলছেন, বাবাকে জঙ্গিরাই মেরেছে? উনিও তো ঘটনাস্থলে ছিলেন না। আমরা চাই, গোটা ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত হোক। কোন পক্ষের গুলি আমার বাবাকে কেড়ে নিল, আমি বলতে পারব না। কিন্তু একটা প্রশ্ন করবই। গোলাগুলির মধ্যে গাড়ি নিয়ে এসে পড়লে একটা লোক সেই গাড়ি ছুটিয়ে পালাবে, নাকি গাড়ি থেকে নেমে গুলি খাবে?' ইরমের আরো দাবি, তাঁর বাবার গাড়ি অক্ষত। গাড়িটা রাস্তার ধারে দাঁড় করানো ছিল। বশিরের দেহ পড়ে ছিল গাড়ির পাশেই। সুতরাং তাঁকে গাড়ি থেকে নামানো হয়েছিল, এমন ইঙ্গিত রয়েছে বলেই তাঁর মত। ইরম বলছেন, 'হতে পারে বাবা জঙ্গিদের গুলিতেই মারা গেছেন। কিন্তু প্রমাণ চাই। সুবিচার চাই আমরা।'
Blogger দ্বারা পরিচালিত.