নীল ছবি ছবি দেখার নেশা থেকে বেরিয়ে আসার উপায়
Odd বাংলা ডেস্ক: পর্নোগ্রাফির নেশায় কি সত্যিই কেউ পড়েন? এই নেশা কতটা ক্ষতিকর? কী ভাবে বুঝবেন আপনি এই নেশার ফাঁদে পড়েছেন? এই মরণফাঁদ থেকে বাঁচার উপায় কী? সাম্প্রতিক গবেষণায় এই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা চলছে। পর্নোগ্রাফির নেশা সর্বনাশা। গবেষণায় জানা গেছে, অশ্লীল ছবি আর ভিডিওর নে’শায় আবিষ্ট হয়ে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ।
ডায়াগনিস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্যাল ম্যানুয়াল অফ মেন্টাল ডিসঅ’র্ডার্স (DSM-5)-এ নিয়মিত ও বাধ্যতামূলক যৌনতা বিষয়ক ভিডিও ও ছবি দেখার নে’শাকে মনোরো’গ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা না হলেও তার সুদুরপ্রসারী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। গবেষণা বলছে, এই নে’শার প্রকোপে শারীরিক, মা’নসিক, আনুভূতিক এবং অর্থনৈতিক সঙ্ক’টে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমানে অনলাইনে প’র্নোগ্রা’ফি সুলভ হওয়ার কারণে সহজেই তার নে’শায় পড়ছে মানুষ। লীলাবতী হাসপাতালের মনোবিদ ডক্টর ভরত শাহের দাবি, ‘ল্যাপটপ ও কম্পিউটার বাদ দিলেও এখন ফোর-জি ও থ্রি-জি কানেকশনের দৌলতে হাতের মুঠোয় পৌঁছে গিয়েছে প’র্নের পসার।’
প্রচলিত বিশ্বাস, শুধুমাত্র পুরুষই প’র্নের ভক্ত। কিন্তু ‘মুম্বই মিরর’ পত্রিকার প্রবন্ধকার ডক্টর মহেন্দ্র ওয়াটসা জানিয়েছেন, এই ব্যাপারে মেয়েরা পিছিয়ে নেই। তাঁর মতে, ‘এর জন্য সহজলভ্যতাই দায়ী।’ প’র্ন ওয়েবসাইট ‘প’র্নহাব’-এর এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, প’র্ন দেখিয়েদের এক তৃতীয়াংশ নারী। ওই সমীক্ষাতেই জানা গেছে, বিশ্বে প’র্ন দর্শনার্থীর সংখ্যার বিচারে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত।
লাল সঙ্কেত –
বয়ঃস’ন্ধির হর’মোন ক্ষরণ হোক বা বয়স্কদের কৌতুহল, জীবনের কোনও এক সময় অধিকাংশ মানুষই প’র্ন দেখেন। বিপদের আশঙ্কা তখনই রয়েছে যখন বিক্ষিপ্ত দর্শন রোজকার অভ্যাসে পরিণত হয়। ডক্টর শাহ বলেন, ‘যখন দেখবেন চাইলেও প’র্ন দেখার অভ্যাস ছাড়তে পারছেন না, বুঝতে হবে আপনি তার নে’শায় পড়েছেন। বিষয়টি ক্ষ’তিকর জেনেও স্রেফ নে’শার কাছে আ’ত্মসমর্পণ করা ছাড়া উপায় থাকে না।’
প’র্নের নেশার ৬ লক্ষণ –
১) সপ্তাহে ১০ ঘণ্টার বেশি প’র্ন দেখা।
২) লি’ঙ্গ উত্থান ও বী’র্যপাতের সময় সমস্যা দেখা দেওয়া অথবা স্বাভাবিক যৌ’ন জীবন যাপন ব্যাহত হওয়া।
৩) প’র্ন দেখার সময় মেপে সারা দিনের রুটিন তৈরি করা।
৪) বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা অথবা পারিবারিক সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর চেয়ে প’র্ন দেখে বেশি আনন্দ পাওয়া।
৫) ক্লান্তি, বিষন্নতা বা বিরক্তি দূর করতে প’র্নকেই একমাত্র বিনোদন হিসেবে বেছে নেওয়া।
৬) প’র্ন দেখার জন্য ক্রমাগত নিজেকে দোষারোপ করা।
মানসিক অবসাদ –
বয়ঃস’ন্ধির সময় বহু ছেলেই প’র্ন দেখাকে পৌরুষের নিদর্শন বলে মনে করে। কিন্তু এরপর ধীরে ধীরে প’র্নের নে’শা পেয়ে বসলে জীবনে তার সুদুরপ্রসারী প্রভাব রয়ে যায়। শারীরিক, মানসিক এমনকি আর্থিক সহ্কটও এর জেরে দেখা দেয়। প’র্নে নে’শাগ্রস্তদের প্রায়ই অতিরিক্ত শারীরিক ক্লান্তি, মান’সিক অব’সাদ এবং মনের ওপর অতিরিক্ত চাপের শিকার হতে দেখা গিয়েছে। মনোবিদ ডক্টর পারুল ট্যাঙ্কের ব্যাখ্যা, ‘দীর্ঘ সময় ধরে প’র্ন দেখার ফলে ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন অফ করার পরেও মনের মধ্যে সেই সমস্ত যৌ’ন উত্তে’জক দৃশ্য ঘুরতে থাকে। এর ফলে মানসিক পরিশ্রম বাড়ে।’
লিবিডোর দফারফা –
যৌ’ন উত্তে’জক ভিডিও দেখা নিয়মিত চর্চায় রূপান্তরিত হলে বাস্তব জীবনে যৌ’নতার প্রতি আকর্ষণ কমতে বাধ্য। কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের পর্দায় দীর্ঘ সময় প’র্ন দেখার ফলে যৌ’ন উত্তে’জনার ভাঁড়ার নিঃশেষ হয়ে যায়। বাস্তবে যৌ’নসঙ্গীর সাহচর্য তাই কা’মোত্তে’জনা বাড়াতে ব্যর্থ হয়। এর জেরে বহু সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে।
ক্ষ’তিগ্রস্ত কর্মজীবন –
যে কোনও নে’শার মতোই প’র্নের পিছনে ছোটার ফলে যাবতীয় এনার্জির ভাঁড়ারে টান ধরে। স্রেফ প’র্ন দেখার তাগিদে অতিরিক্ত ক্লান্তির কারণে হামেশা অফিস কামাইয়ের বেশ কিছু দৃষ্টান্ত সমীক্ষায় পাওয়া গিয়েছে।
১. সচেতনতাই প্রথম ধাপ –
প’র্ন আস’ক্তি দূর করার জন্য এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতনতাই হতে পারে প্রথম পদক্ষেপ। এর কু’ফলগুলো যদি ঠিকমত উপলব্ধি করেন, তাহলে সহজাতভাবেই এর প্রতি আপনার চিন্তাধারায় একটি পরিবর্তন সূচিত হবে। আপনাকে উপলব্ধি করতে হবে, প’র্ন আসক্তি একটি মনোসামজিক ব্যধি। এর শারীরীক ও মানসিক কুফল অনেক। স্নায়ুকে ক্রমাগত উত্তে’জিত করার মাধ্যমে এটি আপনার রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ক্ষ’তিগ্রস্থ করার পাশপাশি হরমোনাল ডিজঅর্ডার ঘটায়। এর জন্য আপনাকে মাত্রাতিরিক্ত মা’স্টার’বেশন করতে হয়, যা পরবর্তীতে আপনার ব্যাপক স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সেই সাথে নৈতিক অবক্ষয় ও মানসিক ভারসাম্যহীনতার বিষয়টাকেও মাথায় রাখুন। আপনার স্বাভাবিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক সুরক্ষার তাগিদে তাই এর বিরুদ্ধে সচেতন হোন এখনই।
২. সরিয়ে ফেলুন প’র্নগ্রাফিক উপাদান –
সে’ক্সু’য়াল যেসব কন্টেন্ট আপনার পিসির হার্ড ড্রাইভ বা ফোনে সংরক্ষিত আছে তা মুছে ফেলুন দৃড়চিত্তে। নইলে হাতের কাছে থাকা সহজলভ্য উপাদানের আকর্ষণে আবারও আপনি সেই জগতে ফিরে যেতে পারেন। সেই সাথে ইন্টারনেটের সেইসব ওয়েব সাইটের কাছ থেকে দূরে থাকার জন্য ব্যবহার করতে পারেন প্রোটেকশনাল সফটওয়্যার। প’র্ণ সাইট ব্লক করার জন্য K9 নামে অসাধারণ একটি ফ্রি সফটওয়্যার আছে, ওটা ইন্সটল করে দেখতে পারেন। সফটওয়্যার টি কিভাবে ব্যবহার করবেন বুঝতে না পারলে How to use K9 web protection লিখে ইউটিউবে সার্চ দিলে প্রচুর টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন।
৩. গড়ে তুলুন সুস্থ বিনোদনের অভ্যাস –
সাধারণত একাকীত্ব, বিষণ্নতা, হতাশার চাপ থেকে মুক্তির জন্যই মানুষ অসুস্থ বিনোদনের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। সঙ্গ দোষ কিংবা মা’দকাস’ক্তিও এসবের উল্লেখযোগ্য কারণ। তাই সুস্থ বিনোদনের অভ্যাস গঠন করা অপরিহার্য। এতে আপনি প’র্ন আসক্তি তো বটেই মা’দকাস’ক্তি থেকেও বেরিয়ে আসতে পারবেন। ভালো গান শোনা, ভালো মুভি দেখা, ভালো বই পড়া হতে পারে সম্ভাব্য ভালো অপশন। এছাড়া প্রকৃতির সান্নিধ্যে যেতে পারেন কিছু সময়ের জন্য। হাঁটা কিংবা জগিং করার মত এক্সারসাইজগুলোও আপনাকে দেবে বাড়তি অনুপ্রেরণা। বন্ধুদের সাথে ভালো আ্ড্ডাও হতে পারে আপনার ইতিবাচক পরিবর্তনের উত্স।
৪. অনুশীলন করুন ধর্মীয় মূল্যবোধ –
আপনি যে ধর্মেরই অনুসারী হোন না কেন, তার মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষা আপনাকে প’র্ন আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে অবশ্যই সহায়তা করবে। নামাজ বা প্রার্থণা আপনাকে দেবে আত্নিক পরিশুদ্ধি। এছাড়া ধর্মগ্রন্থ পাঠ করতে পারেন নিজের জীবনকে আরো সুসংহত করার তাগিদে। ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের উপদেশ এবং জীবনী থেকেও শিখতে পারবেন, কী করে পাপাসক্তি থেকে প্রত্যাবর্তন করে নির্মল জীবন শুরু করা যায়।
৫. প্রয়োজনে মানসিক চিকিত্সা নিন –
আমরা সহসা মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের শরনাপন্ন হতে চাইনা। অথচ প’র্ন আসক্তির মত মনোসামাজিক বিপর্যয়ের জন্য মানসিক রোগের ডাক্তাররা আপনাকে দিতে পারেন, সঠিক দিক নির্দেশনা। মনে রাখবেন, রাতারাতি এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। তাই চিকিত্সকের কাছে কাউন্সেলিং নিন। তার পরামর্শ মাফিক জীবন পরিচালনা করতে থাকুন। আশা করা যায়, ধীরে ধীরে আপনি এই কুঅভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন।
৬. কমিয়ে দিন নেট ব্রাউজিং –
উইকিপিডিয়ার মতে, ‘প’র্নোগ্রা’ফি যৌ’ন আবেগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যৌ’ন সংক্রান্ত বিষয়বস্তুর প্রতিকৃতি অঙ্কন বা পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা’। বিগত কয়েক দশকে প’র্নোগ্রা’ফি উত্পাদন তথা ভোগ্যপণ্য হিসেবে ভোগকে কেন্দ্র করে একটি বিরাট শিল্প গড়ে উঠেছে। বর্তমানে ইন্টারনেট এর প্রধান উত্সস্থল হিসেবে বিবেচিত। তাই ইন্টারনেটে বেশি সময় কাটানো কমিয়ে দিন। প্রয়োজনীয় কাজ সেরে দ্রুত বেরিয়ে আসুন বাস্তব জগতে। সামাজিক মেলামেশা ও কর্ম তত্পরতা বৃদ্ধি করুন। ভার্চুয়াল জগতে সময় অপচয় রোধ করা গেলে প’র্ণ অ্যা’ডিক’শন কমানো সম্ভব হবে অনেকাংশে।
৭. মেতে উঠুন নতুন শখে –
যেহেতু প’র্ন দেখা ছাড়তে চাচ্ছেন, তাই ঘরে একা একা কম্পিউটার/ল্যাপটপ/ট্যাব বা মোবাইলে সময় কাটানোর চেয়ে মন কে অন্য দিকে ডাইভার্ট করার জন্য নতুন এক বা একাধিক হবি তৈরি করুন। তারপর সেই হবি নিয়ে মেতে উঠুন। যখনই প’র্ণ দেখতে মন চাইবে, সাথে সাথে উঠে পড়ুন এবং সেই হবি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ুন। এটা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। প্রথম দিকে অনেক কঠিন লাগলেও ধীরে ধীরে সহজ হয়ে আসবে। হবি হতে পারে বডিবিল্ডিং এর জন্য জীমে জয়েন করা, গিটার, কবিতা আবৃত্তি কিংবা গান শেখা, ফটোগ্রাফি কিংবা পেইন্টিং, বই পড়া, গাড়ি চালানো শেখা, খেলাধুলা কিংবা সাঁতার শেখা কিংবা নতুন বন্ধু তৈরি করা। মোট কথা, নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
৮. গড়ে তুলুন পারিবারিক পরিসর –
পরিবারকে সময় দিন। নির্জনতা ও একাকীত্ব থেকে বেরিয়ে আসুন। পিসি বা ল্যাপটপ রুমের এমন একটা পজিশনে রেখে ইউজ করুন, যেন সেটা রুমে ঢুকলে সবার দৃষ্টিগোচর হয়। বাবা-মা তাদের সন্তানদের কম্পিউটার টেবিল ঘরে ঢুকলে, সহজেই চোখে পড়ে এবং মনিটর করা যায় এমন অবস্থানে রাখুন। সেইসাথে পরিবারের সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়া কিংবা পিকনিক করাও হতে পারে ভালো অল্টারনেটিভ। কাজের দিনগুলোর ফাঁকে এই সুন্দর উদ্যোগগুলো আমাদের পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করার পাশাপাশি সরবরাহ করবে পজেটিভ এনার্জি।
৯. বদলে ফেলুন সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি –
প’র্ন বলতে যে প্রচন্ড আকর্ষণীয় ও রগরগে যৌ’নতার প্রদর্শণী আপনার সামনে ভেসে ওঠে, তা সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্য এক বিশাল হুমকি। এখানে নারী সত্ত্বার যে ভয়াবহ অবমাননা করা হয়, তার বিরুদ্ধে আপনার চিন্তা-চেতনাকে জাগ্রত করুন। শিশু বা পশুদের ক্ষেত্রে যা করা হয়, তা অসভ্যতা ও ব’র্বরতার চরম নিদর্শণ। সুতরাং, প’র্নকে বিনোদন বা আনন্দায়ক হিসেবে দেখার ট্রেন্ডটাই বদলে ফেলুন। একে সমাজ-পরিবার ও স্বাভাবিক যৌ’ন জীবনের জন্য হু’মকি হিসেবে বিবেচনা করুন এবং সেই অনুপাতে নিজের ভেতরে লড়াই করার মানসিকতা গড়ে তুলুন।
শেষ কথা হল, প’র্নগ্রা’ফির আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আপনাকে দীর্ঘদিনের অব্যাহত প্রচেষ্টায় নামতে হবে। খুব দ্রুত কিংবা চটজলদি আপনি এ অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন না। তবে সদিচ্ছা ও আন্তরিক প্রচেষ্টা সহকারে উপরের ধাপগুলো অনুসরন করলে আপনি অবশ্যই সুফল পাবেন। মনে রাখবেন নির্জনতা, আলস্য, হতাশা এবং একাকীত্ব থেকে আপনাকে মুক্ত হতে হবে। সেইসাথে হতে হবে প্রো-অ্যাকটিভ ও গতিশীল মানুষ। নিত্য নতুন উদ্যোগ ও কর্মতত্পরতায় এগিয়ে নিতে হবে জীবনকে। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার নেতিবাচক অভ্যাসুগলো হ্রাস পেতে থাকবে।
Post a Comment