কলকাতার পথে পথে করোনা নিয়ে ১১ ঘণ্টা ঘুরতে হল, ভর্তি নিল না কোনও হাসপাতাল



Odd বাংলা ডেস্ক: ১১ ঘণ্টা ধরে ১৭ বছরের এক কিশোরকে নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে বেড়াল পরিবার। শ্বাসকষ্ট নিয়েই এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কোনো হাসপাতালই ভর্তি নিতে রাজি হয়নি ওই কিশোরকে। শেষ পর্যন্ত কিশোরের মা আত্মহত্যার হুমকি দিলে ভর্তি নেয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায় ওই কিশোর। পরিবারের দাবি, একটু আগে চিকিৎসা পেলে হয়তো বেঁচে যেত শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

খবরে বলা হয়েছে, শুভ্রজিৎ নামের ওই কিশোরের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরের নেতাজিপল্লিতে। উত্তর ব্যারাকপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তার বাড়ি। এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন শুভ্রজিৎ। গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তার। রাতে বাড়তে থাকে শ্বাসকষ্ট। তাই শুক্রবার সকাল হতেই দেরি না করে ছেলেকে নিয়ে কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে চলে আসেন শুভ্রজিতের বাবা। সেখানে কিশোরের সুগার পরীক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়ে, রক্তে শর্করার পরিমাণ খুবই বেশি। ইএসআই হাসপাতালে আইসিইউ নেই বলে তাকে রেফার করে দেওয়া হয় অন্য হাসপাতালে।

শনিবার ওই কিশোরের দাদা শুভ্রদীপ বলেন, কামারহাটিরই একটি নার্সিংহোমে আমরা ভাইকে নিয়ে যাই। শ্বাসকষ্ট শুনেই ওরা ভিতরে ঢুকতে দিল না। আমাদের বলা হলো, কভিড টেস্ট না করলে ভর্তি করা যাবে না। শুভ্রদীপের দাবি, সেখানে বেশ খানিক সময় কাটানোর পর পরিবারের জোরাজুরিতে কিশোরের র‌্যাপিড টেস্ট করার জন্য রক্ত নেওয়া হয়। সেই রক্তপরীক্ষায় করোনার অস্তিত্বের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এরপর ওই বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে কিশোরকে সাগর দত্ত হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। সাগর দত্ত হাসপাতালে দীর্ঘক্ষণ বাইরে রেখে দেওয়া হয়। কোনো চিকিৎসা হয় না। শেষে বলা হয়, বেড ফাঁকা নেই। শুভ্রজিতের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করে শুভ্রজিতের পরিবার। কিশোরের দাদার অভিযোগ, ‘স্বাস্থ্য ভবন জানিয়ে দেয় যে, তাদের কাছে কিশোরের করোনা পজিটিভ হওয়ার কোনো রিপোর্ট নেই। সেই রিপোর্ট না এলে তারা সাহায্য করতে পারবে না।’ এরপর পুলিশের শরণাপন্ন হয় কিশোরের পরিবার। বেলঘরিয়া থানার উদ্যোগে শুক্রবার দুপুর দুটো নাগাদ শুভ্রজিৎকে নিয়ে মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছায় পরিবার। কিন্ত সেখানেও জানানো হয়, বেড নেই। শুভ্রদীপ বলেন, ‘এদিকে ভাইয়ের শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল। নড়াচড়া বন্ধ করে দিয়েছে। কোনো উপায় না দেখে মরিয়া হয়ে মা ভিতরে ঢুকে পড়ে।’ তার দাবি, মা হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন। মায়ের হুমকিতে কাজ হয়। বিকেল চারটে নাগাদ শেষ পর্যন্ত ভর্তি করা হয় কিশোরকে। পরিবারকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

কিন্তু ভোরে ফোন করে জানানো হয়, শুক্রবার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ মারা গিয়েছে শুভ্রজিৎ। শনিবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে কিশোরের পরিবারের একটাই আক্ষেপ, যদি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভর্তি নিয়ে হয়রানি না হত, আর একটু আগে যদি চিকিৎসা শুরু করা যেত, তা হলে হয়তো বেঁচে যেত ছেলেটা।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.