পা-দু'টো অকেজো, হাতে ভর করে নৌকো চালিয়ে নদী থেকে প্লাস্টিক তোলেন এই বৃদ্ধ, লকডাউনে আয় নেই!


Odd বাংলা ডেস্ক: চলাচলের পা থাকলেও তাতে কোনও সাড় নেই, হাতের ওপর ভর দিয়েই চলাফেরা করেন। প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে রেখে দুই হাত দিয়ে প্রকৃতির ক্ষত সারিয়ে তুলছেন ৬৯ বছর বয়সী কেরলের এনএস রাজাপ্পন। কেরলের কোট্টায়াম জেলার মঞ্জানিক্কারা নিবাসী এই বৃদ্ধ গত অর্ধ দশকেরও বেশি সময় ধরে কোট্টায়াম জেলার ভেম্বনাদ হ্রদ এবং কুমারাকমের অন্যান্য প্রবাহ থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে আসছেন। 

হাঁটুর নীচ থেকে পা গোটাটাই প্যারালিসিসি-এর জন্য কোনও সাড় নেই, আর সেই কারণেই দুই হাতের ওপর ভর করে খুব সকালে একটি নৌকা ভাড়া করে বেরিয়ে পড়েন প্রতিদিন। দুই হাতে দাঁড় বেয়ে নদীবক্ষে জমে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য কুড়িয়ে নেন। কখনও লাঠি আবার কখনও বা নৌকোর দাঁড় দিয়েই টেনে টেনে জড়ো করেন প্লাস্টিক আবর্জনা। 

রাজাপ্পন বলেন, 'এ থেকে খুব বেশি কিছু পাই না। এক নৌকো বোঝাই প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করলে তার ওজন হয় এক কেজিরও কম। এক কেজির জন্য, আমি কেবল ১২ টাকা পাই। কিন্তু কারওর না কারওর তো উচিত জল থেকে বর্জ্য অপসারণ করা। আমি আমার সারা জীবন এই জলের আশেপাশে বসবাস করে আসছি। আমার পক্ষে যা সম্ভব আমি তা-ই করছি।' তাঁর কাছে রাস্তা দিয়ে চলাচলের চেয়ে নৌকায় চলাচলটা বেশি সহজ, আর এও তাঁর এই কাজটি বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ। 
রাজাপ্পন আরও বলেন, 'আমি আগে থেকেই নৌকো চালাতে জানতাম। আমি নিজের জন্য একা বড় নৌকা নিতে চাই, যাতে আমি আরও কিছুটা সময় ব্যয় করতে পারি এবং আরও বিস্তীর্ণ জায়গা থেকে আরও বেশি প্লাস্টিক সংগ্রহ করতে পারি।' তিনি নদী থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ করেন, সেগুলিকে পরিষ্কার করেন, শুকনো করেন, এরপর সেগুলিকে বস্তায় ভরে রাখেন। দুই থেক তিন মাস পর পর স্থানীয় সংস্থা যারা প্লাস্টিক সংগ্রহ করে, তারা আসে এবং সেই প্লাস্টিক তার কাছ থেকে নিয়ে যায় এবং তাঁকে বেতন দেয়। 

গ্রামের আংশিক ভগ্নপ্রায় একটি ছোট্ট ঘরে একাই থাকেন রাজাপ্পন। বোন কাছেই থাকেন, সে-ই তাঁকে খাবার দিয়ে যায়। রাজ্জাপ্পন জানায়, তাঁর ঘরের এমন অবস্থা ছিল না। দু'বছর আগের বন্যায় তাঁর ঘর প্রায় ভেঙে-চুড়ে গিয়েছে। কেরলের সেই ভয়াল বন্যা পরিস্থিতিতে রাতের পর রাত একটা নৌকোতে কাটিয়েছেন তিনি! 

খুব অল্পবয়সেই পক্ষাঘাতে পা-দুটো অকেজো হয়ে যায়। তাই দিন মজুরের কাজ তিনি করতে পারতেন না, কারণ রোজ তাঁর পক্ষে কাজে যাওয়া সম্ভব হত না, কেবল তার পায়ের জন্য। তাই যখন যেমন ছোট-খাটো কাজ পান তিনি তাই করেন। 

প্রসঙ্গত করোনাভাইরাসের জেরে লকডাউনের কারণে নদীবক্ষে প্লাস্টিক বর্জ্য অনেকটাই কমেছে, যার ফলে আগের থেকে আয়ও অনেক কমেছে রাজাপ্পনের, কিন্তু মন থেকে তিনি খুশি। তিনি বলেন, 'কোনও পর্যটক না থাকায় জল এখন অনেকটাই পরিষ্কার। আগে আমি প্রচুর প্লাস্টিক পেতাম। তবে আজকাল খুবই কম। বিষয়টা খুবই ভাল। কিন্তু আমার এখন তেমন আয় নেই, হয়তো কেউ সাহায্য করবে...'। এইভাবেই পরিবেশের ক্ষত পূরণ করতে প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে প্রকৃতিকে বাসযোগ্য করার অন্যতম কান্ডারী রাজাপ্পন। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.