পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মাতৃভাষায় পঠন-পাঠন, মাধ্যমিক 'গুরুত্বহীন', নয়া শিক্ষানীতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ৯টি তথ্য এক ঝলকে
Odd বাংলা ডেস্ক: ২০২০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতিতে আমুল পরিবর্তন আসতে চলেছে মোদী সরকারের হাত ধরে। এই শিক্ষানীতির বদল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শেষ ৩৪ বছরে শিক্ষানীতিতে তেমন কোনও বিরাট বদল আসেনি। যার প্রথম বিকাশে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ মন্ত্রকের নাম পরিবর্তন করে শিক্ষামন্ত্রক রাখা হয়েছে। আরও যে যে একগুচ্ছ বদল আনা হবে তা হল-
১) বোর্ড পরীক্ষা স্বল্পতর হবে। না বুঝে মুখস্থ করার বদলে প্রকৃত জ্ঞান আহরণের ওপরেই বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। সেই কারণে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়া হবে। রিপোর্ট কার্ডগুলিতে কেবল নম্বর বা গ্রেড-এর পরিবর্তে শিক্ষার্থীর দক্ষতার বিষয়ে একটা বিস্তৃত প্রতিবেদন হতে হবে।
২) উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভর্তির জন্য একটি সর্বজনীন প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য একটি জাতীয় পরীক্ষা সংগঠন তৈরি করা হবে।
৩) নয়া শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক পরীক্ষার আর কোনও গুরুত্ব থাকবে না। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে কোনও স্ট্রিম থাকবে না। যার ফলে উচ্চমাধ্যমির পরীক্ষার ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে কলা এবং বিজ্ঞান বিভাগের মধ্যে থাকছে না কোনও পার্থক্য। পাশাপাশি বিষয় বাছার ক্ষেত্রেও কোনও বাধ্যবাধকতা থাকছে না। সুতরাং, কেউ যদি চান অঙ্ক এবং ইতিহাস একসঙ্গে পড়তে পারেন।
৪) এবার থেকে স্কুল শিক্ষার মেয়াদ বেড়ে হবে ১৫ বছর, যাকে ভাগ করা হয়েছে ৫+৩+৩+৪-এ। তিন বছরের প্রাইমারি শিক্ষা এবং ১২ বছরের স্কুল শিক্ষা। ক্লাস ১ এবং ২-কে রাখা হয়েছে প্রি-প্রাইমারি পর্যায়ে। আরও জানা গিয়েছে, নবম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা চলবে ৮টি সেমিস্টারে। যার ফলে ৪বছরে ৪০টি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে।
৫) গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ভোকেশনাল স্টাডিজের ওপরেও। যেখাবে শিক্ষার্থীদের স্কুল জীবন থেকেই অঙ্ক ও বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা কোডিং শিখবে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই।
৬) উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অনার্স বা স্নাতক তিন বছর থেকে বেড়ে হচ্ছে চার বছর। স্নাতকোত্তরে এক বা দু-বছরের কোর্স পড়ানো হবে৷ এছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তর একসঙ্গে পড়ার জন্য ৫ বছরের ইন্টিগ্রেটেড কোর্সেরও ব্যবস্থাও করা হবে এই নয়া শিক্ষানীতিতে৷
৭) কলেজে থাকবে এন্ট্রি-একজিট পদ্ধতি। অর্থাত, কোর্স শেষ না হলেও স্বীকৃতি মিলবে৷ যেমন ধরা যাক, প্রথম বছর পড়া শেষ করলে মিলবে সার্টিফিকেট৷ দ্বিতীয় বছর পড়া শেষ করলে মিলবে ডিপ্লোমা, আর পুরো কোর্স সম্পূর্ণ করলে মিলবে ডিগ্রি৷
৮) উচ্চশিক্ষায় নাট্যশাস্ত্র এবং খেলাধূলাকেও অন্তর্ভূক্ত করা হবে। পাশাপাশি আইআইটি প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও স্বনির্ভর হওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে অ্যাফিলিয়েটেড কলেজের সংখ্যা ৪৫ হাজার। কলেজগুলিকে তার স্বীকৃতি অনুসারে তাদের শিক্ষাক্ষেত্রে, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এবং আর্থিক ক্ষেত্রে স্বায়ত্বশাসনের অধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি কলেজগুলিতে ২০৩৫ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নথিভুক্তকরণের লক্ষ্যমাত্রা রাখছে কেন্দ্র৷
৯) উচ্চশিক্ষায় উদ্ভাবন ও গবেষণার ওপর জোর দিয়ে একগুচ্ছ নীতি বদলের ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। উচ্চশিক্ষার নীতি নির্ধারণে থাকবে একটিমাত্র সংস্থা৷ প্রত্যেক পড়ুয়ার জন্য থাকবে অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অফ ক্রেডিট৷ তৈরি হবে ন্যাশনাল টেস্ট এজেন্সি৷ মাস্টার্সের পর আর এমফিল করতে হবে না, থাকবে শুধু পিএইচডি৷
এতদিন যেখানে শিক্ষাখাতে মোট জিডিপির ৪.৪৩ শতাংশ বরাদ্দ ছিল, সেখানে তা বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির তরফে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ক্ষমতায় ফিরলে শিক্ষানীতিতে পরিবর্তন আনবে তারা। সেইমতো নয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে এমনই একগুচ্ছ বদল আনার পথে মোদী সরকার।
Post a Comment