চিনের পাশে একমাত্র থাকছে পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়া



Odd বাংলা ডেস্ক: পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার বাইরে ‘সম্প্রসারণবাদ’ নীতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে চিন। বর্তমানে দেশটির জন্য কোনো দেশই কার্যকর বিকল্প নয় বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ইসলামাবাদ ও পিয়ংইয়ং উভয়ই; স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় চিনের কৌশলগুলোতে নতি স্বীকার করেছে। 

 সিটিজেন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে লে. জেনারেল ভোপিন্দর সিংকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আজ সারা বিশ্ব চিনকে যখন কভিডের জন্য অনিবার্য শাস্তির জন্য বলছে, তার 'সুবিধাভোগী' দেশগুলো থেকেও নতুনভাবে ধাক্কা খেয়েছে; তখন দেশটি সম্প্রসারণবাদ নীতিতে অটুট রয়েছে। 

তাহলে কি চিনের হাতে আর কোনো কৌশল নেই? ভোপিন্দর সিং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সাবেক লেফটেন্যান্ট গভর্নর। তিনি পণ্ডুচেরিরও লেফটেন্যান্ট গভর্নর ছিলেন। তিনি বলেন, ‘উলফ ওরিয়র ডিপ্লোমেসি’ একটি লজ্জাজনক সম্প্রসারণবাদী, যুদ্ধকারী নীতি। এটি হলো রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালন পদ্ধতির নতুন রূপ। যা চিনকে প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে সক্রিয় করেছে।

সিং বলেন, চিন কঠোর সম্প্রসারণবাদ নীতি বাস্তবায়ন করছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, পার্ল স্ট্রিং বন্দর এবং নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কার মতো প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের দেশগুলোতে নানা কৌশলগত প্রকল্পের বাস্তবায়নের মাধ্যমে তিনি সম্প্রসারণবাদ নীতি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কঠোর সম্প্রসারণবাদকে নিলোজিবাদের জন্য প্রয়োজনীয় বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। 

তিনি যুদ্ধের চেতনায় বিষয়টি নিয়ে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর এই চিন্ত-ভাবনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, পার্ল স্ট্রিং বন্দর এবং নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কার মতো প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের দেশগুলোতে নানা কৌশলগত প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। তা ছাড়া যে দেশগুলোতে ঘরোয়া রাজনীতি বা আর্থিক মন্ধা রয়েছে, সেখানেই উদারতা দেখাচ্ছে চিন।

 এক নিবন্ধে ভোপিন্দর সিং এমনটাই জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে উত্তর কোরিয়া ও পাকিস্তানের মতো দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্য ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছে চিন। এই দুদেশে চিন ‘নো স্ট্রিংস অ্যাটাচ’ কৌশল (যে ধরনের কৌশলে কোনো শর্ত থাকে না) অবলম্বন করেছে। তবে চিনাদের কৌশল দুর্বোধ্য ও অসম। সীমিত সামরিক যুদ্ধের অবস্থা, জবরদস্তি, ভয় দেখানো, অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ করে সম্প্রসারণবাদী অ্যাজেন্ডা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে চিন। 

যেকোনো উপায়ে তারা এর বাস্তবায়ন চায়। তারা এই নীতি বাস্তবায়ন করতে যেকোনো দেশকে নিজেদের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারে, কিনে নিতে পারে, ঋণের জালে ফাঁসাতে পারে বা সবচেয়ে বাজে খেলাটা খেলতে পারে চিন।

নিবন্ধে বলা হয়, বর্তমানে সারা বিশ্ব করোনা নিয়ে উত্তর খুঁজছে চিনের কাছে। করোনা নিয়ে ছলচাতুরীর হিসাবও কষছে বিশ্ব। কারণ করোনা নিয়ে হতভম্ব সবাই। আর এমন অবস্থায় অর্থনীতিতে ক্ষতিও পর্বতসম। তা ছাড়া চিনের সামরিক বাহিনী সীমান্তে যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে। 

শুধু পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় প্রতারণা নয়, এর আগেও পার্সেল দ্বীপপুঞ্জে ভিয়েতনামি ফিশিং ট্রলার ডুবিয়েছিল চিনের সামরিক বাহিনী। ওই সময় তাদের দাবি ছিল, নিজেদের জলসীমায় ঢুকে পড়েছিল ফিশিং ট্রলার। তিনি বলেন, সারা বিশ্ব যখন করোনায় কাঁপছে তখন দক্ষিণ চিন সাগরে ৮০টি দ্বীপ, রিফ, শোলস এবং শৈলশিরা নিজেদের বলে দাবি করছে বেইজিং। ১৯৮৩ সালের পর এই প্রথম তারা এই দাবি করছে।

চিনকে নিয়ে এমন হট্টগোলের মধ্যে যোগ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়াও। দেশটির দাবি, চিন ভুল তথ্য ছড়িয়ে ‘ভয় ও বিভাজনের’ পরিবেশ সৃষ্টি করছে। ঠিক গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ‘সাইবার ওয়ারফেয়ারের' অভিযোগ করেছিলেন। এ ঘটনায় তিনি চিনের দিকেই আঙুল তোলেন বলে জানানো হয় নিবন্ধটিতে। 

 ২০১৬ সালে পাকিস্তানের পরিকল্পনা ও উন্নয়নবিষয়ক সিনেটের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান দেশটিকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর ‘আরেকটি ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি’ হিসেবে রূপ নিচ্ছে। আর আজ পাকিস্তান পুরোপুরি চিনের কাছে রুদ্ধ একটি রাষ্ট্র। উইঘুর মুসলমানদের নিয়েও ইমরান খানকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। চিনা ‘বিনিয়োগ’ গ্রহণের মর্ম কিছুদিন পরেই বুঝতে পারে শ্রীলঙ্কা। 

দেশটিকে এক ধরনের বাধ্য হয়েই চিনের কাছে ৯৯ বছরের জন্য হাম্বানটোটা বন্দর ইজারা দিতে হয়। নিবন্ধটিতে বলা হয়, শি জিনপিংয়ের ‘উলফ ওরিয়র ডিপ্লোমেসি’ যদি দেং জিয়াওপিংয়ের চিনের রূপান্তর ঘটায়, তাহলে অবশ্যই অবাক করার মতো ঘটনা ঘটবে। 

আর এটি অতি শিগগিরই যেকোনো মূল্যে ঘটতে চলছে। হাস্যকরভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনির্ভরযোগ্য ও সুরক্ষাপন্থী অ্যাজেন্ডা বোধ হয় চিনের আবেদনে অবদান রাখছে।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.