নামিব ডেসার্ট: সমুদ্রের শিক্ত ঢেউ যেখানে আলিঙ্গন করে রুক্ষ মরুভূমিকে


Odd বাংলা ডেস্ক: 'বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি, দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী'- সত্যিই এই বিশ্বের সবটা জানা কারওর পক্ষেই সম্ভব নয়, কিন্তু যতটুকু জানা যায়, তাতে কেবলই বিস্ময় জাগে। তেমনই বিস্ময়কর আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের আটলান্টিক উপকূলে অবস্থিত নামিব মরুভূমি। পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম এই মরুভূমি। স্থানীয় ভাষায় নামিব শব্দের অর্থ 'এমন এক জায়গা যেখানে কিছুই নেই'। উঁচু উঁচু রুক্ষ বালির পাহাড়, নুড়ি পাথর ছড়ানো বিস্তর এলাকায় এলে মঙ্গল গ্রহের মতোই অনুভূতি হবে। বলা হয় এটি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন মরুভূমি। যার বয়স আনুমানিক ৫৫ মিলিয়ন বছর। অন্যদিকে সাহারা মরুভূমি বড়োজোর ৭ মিলিয়ন বছরের পুরনো। সুবিশাল এই মরুভূমি তিনটি দেশের প্রায় ৮১,০০০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। 

গ্রীষ্মে দিনের বেলায় নামিবের তাপমাত্রা প্রায় ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায়, যা রাতে নেমে যায় হিমাঙ্কের নীচে। নামিব মরুভূমির সবচেয়ে শুষ্ক অংশে বছরে গড়ে মাত্র ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। কখনও আবার কিছু কিছু অংশে বৃষ্টিপাত হয়ও না। তাপমাত্রার এমন রকমফেরের জন্য একে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিকূল স্থান হিসাবে গণ্য করা হয়। তবে এই রুক্ষ পরিবেশেও অনেক প্রাণী যেমন অরক্স, স্প্রিংবক, চিতা, হায়েনা, উটপাখি এবং জেব্রাও বসবাস করে। প্রাণীরা বিভিন্নভাবে নিজেদের এই চরম পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির এই চরম অবস্থাকেও বশ করেছে প্রজাতি, যারা এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ঘর বানিয়ে থাকতে শুরু করেছে এখানে।

নামিবের সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ অঞ্চলের একটি হল, আটলান্টিকের উপকূলে ৫০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের উচু বালির পাহাড় যেখানে পরিত্যক্ত জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকে। দক্ষিণে এঙ্গোলা থেকে মধ্য নামিবিয়া পর্যন্ত এই উপকূলে অসংখ্য তিমির মৃতদেহও দেখা যায়। তাই একে কঙ্কাল উপকূলও বলা হয়। এই উপকূল প্রায়ই ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে। আটলান্টিকের ঠান্ডা বেঙ্গুয়েলা স্রোত থেকে উৎপন্ন বায়ুর সঙ্গে মরুভূমির গরম বাতাসের সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয় এই ঘন কুয়াশা, যা জাহাজের নাবিকদের কাছে একটা বিভীষিকা বটে। এই কুয়াশায় পথ হারিয়ে অসংখ্য জাহাজ উপকূলে আছড়ে পরে যার ফলে মৃত্যু হয় অনেক যাত্রীর। স্থানীয়রা মনে করেন ঈশ্বর রুষ্ট হয়েই এমন পরিবেশ তৈরি করেছেন। 

ফেইরি সার্কেল
নামিবের সবচেয়ে বিস্ময়কর এবং রহস্যময় জিনিস হল ফেইরি সার্কেল বা ফেইরি রিংস। একটি এমনই একটি ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থা যা আপাতভাবে গোলাকৃতি গর্ত যা ঘাস দ্বারা বেষ্টিত এবং এর ভিতরে পুরোপুরি খালি। ঘাসের একটি মাত্র প্রজাতিই বালির উপরে এই বৃত্ত তৈরি করেছে। এইরকম বৃত্ত কেন তৈরি হচ্ছে তা আজও রহস্য। এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা নানাভাবে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন এর রহস্য উদ্ধারের জন্য। এখানকার স্থানীয়দের দাবি, এটি তাঁদের দেবতা মুকুরুর পায়ের ছাপ। অনেকে আবার মনে করেন এগুলি ইউএফও বা স্পেশশিপের চিহ্ন। তবে এক বিজ্ঞানী এক অন্যরকম ব্যাখ্যা দিয়েছন। তাঁর কথায় নামিব অত্যন্ত শুষ্ক জায়গা। এখানে পর্যাপ্ত পরিমানে জল পাওয়া যায় না। তাই মনে করা হচ্ছে, উইপোকা এই বৃত্ত তৈরি করেছে যার ফলে মাটির নিচে তারা পর্যাপ্ত পরিমানে জল এবং পুষ্টি উপাদান জমা করে রাখতে পারে। বৃত্তের ভেতরের অংশে কোন গাছ না থাকায় ঘাসের মূল সহজেই মাটিতে জল ধরে রাখতে পারছে যা পরবর্তীতে উইপোকাদের চাহিদা পূরণ করছে। আরও একটি ব্যাখ্যা রয়েছে যে, এটি নামিবের গাছপালার একটি নিজস্ব ব্যবস্থা যেখানে ঘাসের মূল নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগীতা করে একটি গোলাকার খালি জায়গা তৈরি করছে, যেখানে তারা সহজেই নিজেদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান জমা করে রাখতে পারছে। অনেকদিন বৃষ্টিপাত না হলে এই ঘাসের বৃত্ত শুকিয়ে যায়। আবার বৃষ্টি হলেই সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিকের মতো এই বৃত্ত আবার দেখা দেয়।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.