আজ নাগপঞ্চমী, কেন এই দিনে সাপের পুজো করা হয়, কী বলছে পুরাণ
Odd বাংলা ডেস্ক: আজ নাগ পঞ্চমী। এই শ্রাবণ মাসের শুক্ল পঞ্চমী তিথিটি সারা ভারতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পৌরাণিক বিশ্বাস, নাগলোক বা পাতাল থেকে নাগ বা সর্পকুল মানবের উদ্দেশে এদিন আশীর্বাদ প্রেরণ করেন। পারিবারিক সমৃদ্ধি সার্বিক কুশলের জন্য এই আশীর্বাদকে অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন অসংখ্য ভারতীয়। এই সর্প উপাসনার উৎস কোথায়, তার খোঁজ নিতে গেলে প্রথমেই চোখ যায় পুরাণ ও মহাকাব্যের দিকে। তার পরে আসা যেতে পারে এর সামাজিক ও নৃতাত্ত্বিক ব্যাখ্যায়।
দেখা যাক, কেন এদিন সর্পকুলের পুজো করা হয়-
'গরুড় পুরাণ' থেকে জানা যায়, ব্রহ্মার পুত্র মহামুনি কাশ্যপের তৃতীয়া স্ত্রী কদ্রু ছিলেন নাগ বংশের কন্যা। তিনিই নাগকুলের জননী। অন্যদিকে, অন্য এক স্ত্রী বিনতা জন্ম দেন গরুড়ের। বিনতার প্রতি কদ্রু বিদ্দিষ্ট ছিলেন। গরুড় বাল্যকালে মায়ের কষ্ট দেখে প্রতিজ্ঞা করেন, তিনি সর্পকুল ধ্বংস করবেন। কিন্তু পরে তা থেকে তিনি বিরত হন। কিন্তু সর্পকুলের সঙ্গে গরুড়ের শত্রুতা থেকেই যায়। তবে এই পুণ্য জন্মের কারণে নাগকুলও পূজিত হতে থাকেন।
'মহাভারত' জানায়, কুরু বংশীয় রাজা পরিক্ষিৎ তক্ষক নাগের আঘাতে মারা গেলে তাঁর পুত্র জন্মেজয় পৃথিবী সর্পশূন্য করেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। তিনি এক সর্পযজ্ঞ শুরু করেন, যেখানে মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে কোটি কোটি সাপ যজ্ঞানলে পড়ে মারা যেতে থাকে। এমন সময়ে জরৎকারু মুনির পুত্র আস্তিক (লৌকিক বিশ্বাস, জরৎকারুর স্ত্রী হলেন সর্পদেবী মনসা) এই নিষ্ঠুর যজ্ঞ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে জন্মেজয়ের কাছে পৌঁছোন এবং তাঁরই হস্তক্ষেপে জন্মেজয় এই ভয়ঙ্কর কর্ম থেকে নিরস্ত হন। যে দিনটিতে সর্পযজ্ঞ বন্ধ হয়, আর সেই দিনটি ছিল শ্রাবণের শুক্লপঞ্চমী। সেই থেকেই এই পুজোর প্রচলন।
আজকের ভারতে নাগপঞ্চমী এক অতি জনপ্রিয় উৎসব। বিশেষত মধ্যভারতে, নাগ এক সর্বজনমান্য দেবতা। নাগপুরের নামকরণই এর প্রমাণ। এখানে নাগোবা মন্দিরে এদিন বিশেষ পূজা হয়। গোটা উত্তর ভারত জুড়ে পালিত হয় নাগপঞ্চমী। কাশীর কুস্তির আখড়াগুলিতে সর্পোপাসনা দেখবার মতো। বাংলায় এদিন মা মনসার বিশেষ পূজা শুরু হয়। দক্ষিণ ভারতে পূজা শুরু হয় অমাবস্যার দিন। পঞ্চমী হল মূল পূজার দিন। নেপালে গরুড়ের সঙ্গে নাগকুলের যুদ্ধ নাটকের আঙ্গিকে অভিনীত হয়।
সমাজ নৃতত্ত্বের দিক থেকে দেখলে বোঝা যায়, ভারতীয় সভ্যতায় নাগেরাও পূজ্য ছিলেন। তন্ত্র গ্রন্থাদিতে নাগদের অতিলৌকিক প্রাণী বলে বর্ণনা করা হয় এবং তাদের তুষ্ট করার উপায়ও বহু তন্ত্রশাস্ত্র উল্লেখ করে। দক্ষিণ ভারতে 'নাগ' সভ্যতা নামে এক প্রাচীন সভ্যতা ছিল। এই সভ্যতার সঙ্গে আর্যদের আদান প্রদান শুরু হয় অনেক পরে। পুরাণ, মহাকাব্যে যে 'নাগলোক'-এর কথা পাওয়া যায়, তা এই অঞ্চল বলেই নৃতাত্ত্বিকরা মনে করেন।এদিন নাগদেবতার মূর্তির সামনে রাখা হয় দুধ, চন্দন, হলুদ ও সিঁদুর। মূর্তির সামনে জ্বালানো হয় কর্পূরের প্রদীপ। পাঠ করা হয় নাগপঞ্চমী ব্রতকথা।
Post a Comment