১০০০ বছরের পুরনো হিন্দু সন্ন্যাসীর মৃতদেহ সংরক্ষিত রয়েছে ভারতের এই মন্দিরে, যার রহস্য অপার
Odd বাংলা ডেস্ক: হিন্দু ধর্ম হ'ল বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ধর্ম, যা জন্ম ও মৃত্যুর বৃত্তে বিশ্বাস করে, এবং মুক্তি লাভ না করা পর্যন্ত এই বৃত্ত আবর্তিত হতে থাকে। বিশ্বাস করা হয়, দেহ, যা প্রকৃতির এক উপহার, তা পাঁচটি উপাদার (অগ্নি, জল, পৃথ্বী, আকাশ এবং বায়ু) দ্বারা গঠিত। তাই মৃত্যুর পর দেহ এই পঞ্চভূতে বিলিন হয়ে যায়। তাই হিন্দুরা মৃত্যুর পর মৃতদেহ দাহ করে, মুসলিম বা খ্রিষ্টানদের মতো কবর দেয় না।
সারা বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর পর শেষকৃত্য নিয়ে বহু সংস্কৃতি প্রচলিত রয়েছে। কবর দেওয়া কিংবা দাহ করা ছাড়াও কিন্তু অনেক ধর্মে মানুষের মৃত্যুর পর মৃতদেহ সংরক্ষণ করে রাখারও প্রচলন রয়েছে। যেমন- মিশরের মমি। কিন্তু জানলে অবাক হবেন এইভাবে মৃতদেহ সংরক্ষণ করে রাখার প্রথা প্রাচীন হিন্দু ধর্মেও ছিল।
শ্রী রামানুজাচার্য যিনি রামানুজ নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি হিন্দুধর্মের মধ্যে থেকেই শ্রী বৈষ্ণব ধর্মের ঐতিহ্যের একজন প্রকাশক ছিলেন এবং তাঁর জন্য একদি আলাদা মন্দিরও আছে, যার নাম শ্রী রঙ্গনাথস্বামী মন্দির। ভারতের তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লির শ্রীরঙ্গমে অবস্থিত শ্রীরঙ্গম মন্দির যা তিরুভরঙ্গনম নামেও পরিচিত এই হিন্দু মন্দির রঙ্গনাথের প্রতি উৎসর্গিত। কথিত রয়েছে ইনি হলেন ভগবান শ্রীবিষ্ণুর একটি রূপ।
তামিল ধাঁচের স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত রঙ্গনাথস্বামী মন্দির কমপ্লেক্সটি ১৫৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এখানে প্রায় ৫০টি মন্দির, ২১টি মিনার ও ৩৯টি প্যাভেলিয়ন রয়েছে। একদিক থেকে দেখলে এটি যেন একটি ‘মন্দির নগরী’। এখানে প্রবেশ করলে খুলে যায় মধ্যযুগের দাক্ষিণাত্যের সদর দরজা। মন্দিরে পুজোর জন্য থেঙ্কালাই ঐতিহ্য মেনে চলা হয়। ঐতিহাসিক এই মন্দির দক্ষিণ ভারতের অন্যতম বিখ্যাত বৈষ্ণব মন্দির।
জানা যায়, ১০১৭ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে পেরুমবুদুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রামনুজাচার্য। তাঁর পিতা কেশব সোমায়াজী এবং মা কান্তিমাঠি ছিলেন একজন অত্যন্ত ধার্মিক ও পুণ্যবান মহিলা। রামানুজের তামিল নাম ছিল ইলায়া পেরুমাল। খুব কম বয়সেই বাবাকে হারান তিনি। এরপর তিনি কাঞ্চিপুরমে এসেছিলেন অদ্বৈত দর্শনের এক শিক্ষক যাদবপ্রকাশের অধীনে বেদ শিক্ষা করতে। তিনি তাঁর ১২০ বছরের মধ্যে ৮০ বছর শ্রীরাঙ্গমে কাটিয়েছেন এবং ২০ বছর তিনি শ্রীরঙ্গমের মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ছিলেন। শ্রীরঙ্গম হয়ে ওঠে তাঁর ধর্মচিন্তা প্রকাশের প্রধানতম ক্ষেত্র। তিনি শ্রী রঙ্গনাথস্বামী মন্দিরের প্রধান পুরোহিতও হন। কথিত রয়েছে, স্বয়ং বিষ্ণুর নির্দেশেই রামানুজাচার্যের দেহকে সংরক্ষণ করে মূর্তির আকার দেওয়া হয়। ভগবান রঙ্গনাথের নির্দেশ অনুসারে তাঁর দেহটি শ্রীরঙ্গমে রঙ্গনাথস্বামী মন্দিরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে স্থাপন করা হয়েছে।
জানা যায়, যখন রামানুজের পৃথিবী ত্যাগ করার সময় এসেছিল, তখন তাঁর ভক্তরা তাঁকে আরও কয়েক দিন থেকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। রামানুজ আরও তিন দিন থেকে যেতে রাজি হন। কিন্তু ভক্তরা তা মানতে চাননি। আর তাই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পরেও তাঁর দেহ অবিকৃত থেকে যায়। বলা হয়, কোনও রাসায়নিক ফর্মুলেশন ছাড়াই তাঁর দেহ মমিতে পরিণত হয়। যে অবস্থায় তিনি দেহ ত্যাগ করেছিলেন, সেই অবস্থাতেই অধিষ্ঠান করছে তাঁর মূর্তি। মূর্তির হাতের নখগুলিও ভীষণ স্পষ্ট। বছরে দু’বার তাঁর নশ্বর শরীরে কর্পূর ও কুমকুমের প্রলেপ লাগানো হয়। ৮৮০ বছর ধরে এই প্রথা অনুসরণ করা হয়ে আসছে।
Post a Comment