রাখাইনে বিদ্রোহীদের অস্ত্র দেয় চিন-পাকিস্তানের যৌথ চক্র?



Odd বাংলা ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে চিন-পাকিস্তানের যৌথ একটি চক্র উসকানিমূলক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, চিন-পাকিস্তানের একটি যৌথ চক্র আবিষ্কার করেছে দেশটি। সেই চক্রটি চিনের তৈরি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র রপ্তানি করছে প্রদেশটির দুটি বিদ্রোহীগোষ্ঠীর হাতে। কালাদান মাল্টি মোডাল প্রকল্পসহ ভারতের বিভিন্ন প্রকল্পকে নিশানাও করা হচ্ছে। সেই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্তে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দি ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হচ্ছে। সম্প্রতি থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তে কয়েকজনের গ্রেপ্তারের ঘটনায় গোটা বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে বলে দাবি করছে দি ইকোনমিক টাইমস। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, থাই কর্তৃপক্ষ মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তদন্তের সব তথ্য শেয়ার করেছে। 

দেশটির বিদ্রোহীদের শক্তি জোগাতে চিনের ভূমিকার বিরুদ্ধে জনগণের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করার পরই এমন তথ্য সামনে এসেছে। জুনের শেষের দিকে মিয়ানমারের কারেন রাজ্যের মায়াওয়াদি সীমান্তের কাছে ময়ে সট শহরের কাছ থেকে একটি জাহাজ আটক করেন থাইল্যান্ডের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। আটক করে দেখা যায়, সেটি আধুনিক চিনা অস্ত্রে বোঝাই। সবগুলো অস্ত্রই নতুন। সব অস্ত্র জাহাজে লুকিয়ে পাঠানো হচ্ছিল। পরে তারা সেগুলো জব্দ করেন। সেই সঙ্গে দুজন থাই নাগরিককেও আটক করা হয় বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। অস্ত্র চালানের তদন্তকারী থাই কর্তৃপক্ষ তখন থেকেই অনেককেই গ্রেপ্তার করেছে। জব্দ অস্ত্রগুলোর শেষ ঠিকানা ছিল বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন কয়েকজন ইকোনমিক টাইমসকে জানিয়েছেন। জব্দ করা অস্ত্রগুলোর জন্য অর্ডার দিয়েছিল রাখাইন রাজ্যের আরাকান আর্মি (এএ)। মিয়ানমারে আরাকান আর্মিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কালাদান মাল্টি মোডাল প্রকল্প রাখাইন রাজ্যের মধ্য দিয়ে গেছে। এই প্রকল্পটি ওই অঞ্চলের আকার বদলে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। 

কালাদান প্রকল্পটি কলকাতাকে রাখাইন রাজ্যের সিটওয়ে বন্দরের সঙ্গে সমুদ্রপথে যুক্ত করেছে। আর আরাকান আর্মি এই প্রকল্পটিকেই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে চলেছে। এমনই দাবি করা হয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যটির প্রতিবেদনে। থাইল্যান্ডের ময়ে সট শহরে অস্ত্র চালানের ঘটনায় থাই দুই নাগরিকের সঙ্গে পাকিস্তানের এক নাগরিকও জড়িত ছিলেন। মিয়ানমারের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি ভাষার গণমাধ্যম দি ইরাওয়াদ্দির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডে যাওয়ার আগে আটক ব্যক্তিরা কম্বডিয়ায় বাস করতেন। তাঁরা অঞ্চলটির সবচেয়ে বড় ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড’ নেটওয়ার্ক এবং সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোতে জড়িত ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে ময়ে সট শহরে বসবাসরত পাকিস্তানি নাগরিকদের ওপর কড়া নজর রাখছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। রাখাইন রাজ্যে বর্তমানে দুটি গ্রুপ খুব সক্রিয়। একটি হলো, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) আর একটি হলো আরাকান আর্মি। 

এই দুটি গ্রুপের অনেক পার্থক্য রয়েছে। দি ইরাওয়াদ্দির প্রতিবেদনে বলা হয়, এআরএসএর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে বিদেশি সন্ত্রাসীগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংযোগ রাখার জন্য। করাচিতে বসবাসরত রোহিঙ্গা বংশোদ্ভূত পাকিস্তানি আবদুস কুদ্দুস বার্মিকে মনে করা হয় এই দলটির পরামর্শদাতা। তিনি মিয়ানমারে ‘জিহাদ’ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি আবার লস্কর-ই-তৈয়বার (এলইটি) সঙ্গে যুক্ত। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দলিল রয়েছে বলে দাবি করছে ইকোনমিক টাইমস। পাকিস্তানে লস্কর-ই-তৈয়বার (এলইটি) প্রধান হাফিজ মোহাম্মদ সৈয়দের সঙ্গে বৈঠকেও মিলিত হয়েছিলেন বার্মি। 

আর এআরএসএ পূর্ব এশিয়ায় বিস্তৃত ইসলামিক সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্কের কাছ থেকে অনুদান এবং প্রশিক্ষণ পেয়েছে বলে জানিয়েছে দি ইরাওয়াদ্দি। এআরএসএর নেতা আতাহ উল্লাহ পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আর বেড়ে উঠেছিলেন সৌদি আরবে। মিয়ানমার জানিয়েছে, এআরএসএ ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল। গত কয়েক বছরে রাখাইনে ৩০টিরও বেশি পুলিশ চৌকি এবং একটি সেনা ঘাঁটিতে সাহসী হামলা চালিয়েছিল গ্রুপটি। এর ফলে কয়েক ডজন এআরএসএ বিদ্রোহী এবং দেশটির নিরাপত্তাকর্মী প্রাণ হারায়। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) নতুন এবং অতিরিক্ত অস্ত্র কেনার চেষ্টা করছে। কারণ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে অভিযান পরিচালনা করছে। বলা হচ্ছে, সীমান্তে অস্ত্র চোরাচালান রোধে কড়া নজদারি বাড়িয়েছে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.