বিজেপিকে 'ভয়' পায় ফেসবুক: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল



Odd বাংলা ডেস্ক: চিনে ফেসবুক গত এগারো বছর ধরেই নিষিদ্ধ। ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ভাঙার অভিযোগ এনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক দেশ তাদের কাজকর্মের তীব্র সমালোচনা করছে বারবার। এবার জানা গেল, ভারতে শাসক দল বিজেপিকে চটাতে ‘ভয়’ পায় ফেসবুক। সে ‘ভয়’ এতটাই যে, তার জন্য উস্কানি বা বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে সংস্থার নীতি ভাঙতেও পিছপা হয় না মার্ক জাকারবার্গের ফেসবুক। 

মার্কিন সংস্থা ফেসবুকের বিজেপি-ভীতির বিষয়টি জানা গেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি প্রতিবেদন থেকে। মার্কিন সংবাদপত্রটির দাবি, বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ‘বিদ্বেষ রোধ আইন’ প্রয়োগে বাধা দিয়েছিলেন এ দেশে ফেসবুকের পাবলিক পলিসি অ্যাক্সিকিউটিভ আঁখি দাস। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আঁখি দাস সংস্থার কর্মীদের বলেছিলেন, বিজেপি নেতাদের আইনভঙ্গকারী হিসেবে শাস্তি দিলে ভারতে ফেসবুকের ব্যবসায়িক ক্ষতি হতে পারে। এই সংক্রান্ত একটি উদাহরণ তুলে ধরে সংবাদপত্রটিতে দাবি করা হয়েছে, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক মদদ দিতে ফেসবুকে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছিলেন তেলঙ্গানার বিজেপি বিধায়ক টি রাজা সিংহ। 

 সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্যের জন্য একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন এই বিজেপি নেতা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, টি রাজাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য সুপারিশ করেছিলেন ফেসবুকের কর্মীরা। ‘বিপজ্জনক ব্যক্তি এবং সংস্থা’ নীতির ভিত্তিতেই এই সুপারিশ করা হয়েছিল। ফেসবুকের বর্তমান ও প্রাক্তন কর্মীদের বক্তব্য অনুযায়ী, তাদের সংস্থার ভারতীয় শাখার পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর আঁখি দাসের হস্তক্ষেপেই ওই বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। টি রাজা সিংহের মতোই উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখার অভিযোগ উঠেছে কপিল মিশ্র, অনন্ত হেগড়েসহ একাধিক বিজেপি নেতার বিরুদ্ধেও। একইভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ, লাভ জিহাদসহ একাধিক বিষয় টেনে বিজেপি এবং আরএসএসের সংগঠনগুলি এ দেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করলেও তা নিয়ে পদক্ষেপ না করার অভিযোগ উঠেছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে। এই সমস্ত ঘটনাকে বিজেপি এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির প্রতি ফেসবুকের ‘পক্ষপাতমূলক পদক্ষেপ’ বলে আঙুল তুলেছে মার্কিন সংবাদপত্রটি। 

মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ফেসবুকের মুখপাত্র বলেন, হিংসাত্মত ও উস্কানিমূলক মন্তব্য বা বিদ্বেষ ছাড়ালে ফেসবুক তা নিষিদ্ধ বলে গণ্য করে। কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা দল নিরপেক্ষ হয়েই সংস্থা বিশ্বজুড়ে এই কাজ করে। যদিও এ ক্ষেত্রে আরও উন্নতির জায়গা রয়েছে। তাদের ভারতীয় শাখার কাজ নিয়ে সমালোচনার জবাবে ফেসবুকের মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন বলেন, নিষিদ্ধ করার পরে রাজনৈতিক পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন আঁখি দাস। 

তবে সংস্থার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি একাই নির্ণায়ক ব্যক্তি নন। বিষয়টিকে এত সহজে ছাড়তে নারাজ বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, ভারতে ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপকে নিয়ন্ত্রণ করে বিজেপি। এর মাধ্যমে ঘৃণা ছড়িয়ে বিজেপি ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা চালায়। বিজেপি ও ফেসবুকের যোগাযোগ খতিয়ে দেখতে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠনের দাবিও উঠেছে। কংগ্রেস নেতা শশী তারুর ফেসবুকের জবাবদিহি চেয়েছেন। ফেসবুক বয়কটের ডাকও দিতে শুরু করেছেন অনেকে। একাধিক সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে আঁখি দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও সাড়া মেলেনি। এই অবস্থায় আঁখি দাসের রাজনৈতিক যোগাযোগের বিষয়টিও সামনে এনেছেন অনেকে। আঁখি দাসের বোন রশ্মি দাস জেএনইউ-তে বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র সভাপতি ছিলেন বলে দাবি করেছেন নেটিজেনদের একাংশ।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.