মদ ও নারীসঙ্গ যে বলিউড অভিনেতাকে শেষ করে দিয়েছে



Odd বাংলা ডেস্ক: বর্তমানের ফারদিনকে দেখলে অনেকে হয়তো মুখ ফিরিয়েও নিতে পারেন। কারণ, আগের মতো সুঠাম দেহ নেই তার। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে দেখা গেছে বলিউডের এই অভিনেতাকে। তাকে দেখে অনেকের চোখ কপালে উঠে গেছে। কারণ শরীরে অত্যাধিক মেদ জমায় গলায় ভাঁজ স্পষ্ট হয়েছে। বয়সও যেন বেড়ে গেছে অনেক! ওজন বেড়ে যাওয়ায় মানসিক অশান্তিতে ভুগছেন এই অভিনেতা। এ কারণে লন্ডনের একজন সেলিব্রেটি ট্রেনারের কাছে নিয়মিত প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন তিনি। 

এর আগে ২০১৪ সালে ৩ মাসের মধ্যে ১২ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন ফারদিন। দীর্ঘদিন ধরে বলিউড পাড়ায় নেই বলিউড অভিনেতা ফারদিন খান। ২০০২ সালে ‘কুছ তুম কাহো কুছ হাম কাহে’ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে দর্শকদের মন কেড়ে নিয়েছিলেন ফারদিন। সর্বশেষ ২০১০ সালে ‘দুলহা মিল গায়া’ ছবিতে দেখা গেছে তাকে। বাবা ছিলেন বলিউডের শক্তিমান অভিনেতা। ১৯৫৯ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ফিল্মি ক্যারিয়ার তার। তিনি অভিনেতা ফিরোজ খান। অনেক স্বপ্ন নিয়ে ছেলেকেও তিনি এনেছিলেন বলিউডে। 

অনেক চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু হতাশা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেননি পুত্র ফারদিন খান। বাবার বিপরীতে তার ক্যারিয়ার মাত্র ১৯৯৮-২০১০ সাল! সেটাও বিরতি দিয়ে। বাবার নাম যেখানে আজও সবার মুখে শোনা যায় সেখানে স্মৃতি থেকে প্রায় হারিয়ে গেছেন ছেলে। কেন এমন হলো? সেই জবাব খুঁজতে গিয়ে অনেক কথাই উঠে আসে। স্টারডমের বোঝা জন্মের পর থেকেই ফারদিন খানের উপরে চেপে বসেছিল। জনপ্রিয় অভিনেতা ফিরোজ খানের ছেলে হওয়ায় তাকে ঘিরে আগ্রহ থাকতো সবার। সেই আগ্রহ নিয়েই সিনেমায় এলেন। তবে নিজের বাবা ও পরিবারের প্রতি নামের সঠিক ব্যবহার তিনি করতে পারলেন না। ফারদিন খানের বেড়ে ওঠা মুম্বাইয়ে। স্টার কিড হওয়ায় বলি-মহলে ফারদিনের প্রচুর বন্ধু-বান্ধব ছিল। 

কারণ অন্যান্য স্টার কিডের সঙ্গেই তার বেড়ে ওঠা। বিভিন্ন সময় একাধিক নারীসঙ্গ উপভোগ করেছেন উচ্ছৃঙ্খল জীবনে। নায়িকা ও শোবিজের বাইরের বহু সুন্দরীর প্রেমে পড়েছেন তিনি। সেইসব তাকে হতাশ করেছে, ক্লান্ত করেছে। বন্ধুদের সঙ্গ দোষে এরপর তিনি মাদকেও আসক্ত হয়ে পড়েন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি ছিটকে যান সুস্থ-সুন্দর জীবন থেকে। জানা গেছে, মুম্বাইয়ের স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা পাড়ি দেন ফারদিন। সেখানে আমিশা পাটেলের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়ে যায়। 


আমিশাও সে সময় আমেরিকাতেই পড়ছিলেন। পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে আসেন ফারদিন। বাবার দেখানো রাস্তাতেই ক্যারিয়ার গড়ে তুলবেন ঠিক করেন তিনি। মাথার উপরে অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক বাবা এবং ফারদিন খানের নিজের লুক, সব মিলিয়ে বলিউডে সাফল্য ছোঁয়া তাঁর কাছে অনেকটাই সহজ ছিল। ১৯৯৮ সালে ফিরোজ খানের প্রযোজনায় ‘প্রেম অঙ্গন’ ছবিতে অভিষেক হয় ফারদিনের। যেহেতু ফিরোজ খান এই ফিল্মে তার ছেলেকে লঞ্চ করতে যাচ্ছিলেন, তাই সকলের নজর ছিল এই ফিল্মের উপর। ফারদিন খান কতটা বাবার মর্যাদা রাখতে পারবেন, সেটাই চ্যালেঞ্জ ছিল তার কাছে। তবে এই ফিল্ম বক্স অফিসে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। এরপর রামগোপাল ভার্মার সঙ্গে দেখা করেন ফিরোজ খান। 

ছেলের জন্য কিছু ভাল ফিল্মের কথাবার্তা হয় দু’জনের মধ্যে। ফারদিন খানকে ভাল স্ক্রিপ্টে অভিনয়ের সুযোগ দেওযার প্রতিশ্রুতি দেন রামগোপাল। তিনি ফারদিনকে নিয়ে তিনটি ফিল্ম করলেন। ‘জঙ্গলি’, ‘প্যায় তুনে ক্যায়া কিয়া’ কিছুটা সাফল্য পেলেও ‘লাভ কে লিয়ে কুছ ভি করেগা’ একদমই মুখ থুবড়ে পড়ে। এখানে হতাশা আরও বেশি করে গ্রাস করতে থাকে ফারদিনকে। এরপর ২০০১ সালের ৫ মাদক ব্যবসাতে জড়িত সন্দেহে মাদকসহ ফারদিন খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার কাছে থেকে এক গ্রাম ও তার গাড়ি থেকে নয় গ্রাম কোকেন মিলেছিল। চারদিকে যখন সমালোচনার বড় বড় থাবা আসতে লাগলো ফারদিনের বাবা তখন পাশে দাঁড়ান। ছেলের বন্ধুদের নামে দায় ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। ক্যারিয়ার প্রায় শেষ হতে বসেছিল ফারদিনের। তুমুল বিতর্ক শুরু হয় তাকে ঘিরে। বাবার কৃপায় ফের আরও এক বার ক্যারিয়ার শুরু করার চেষ্টা করেন ফারদিন খান।

 ফিরোজ খানের প্রযোজনায় ‘জনাসিন’ ফিল্ম করেন। ফিল্মের নায়িকা ছিল সেলিনা জেটলি। সে সময় সেলিনার সঙ্গে সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। এর পর ২০০৪ সালে ‘দেব’ ফিল্মে অমিতাভ বচ্চন এবং কারিনা কাপুরের সঙ্গে অভিনয় করেন। এই ফিল্ম সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছিল। কিন্তু এর থেকে ফারদিন খানের ক্যারিয়ারে কোনো প্রভাব পড়েনি। এর পর ফারদিন খান যা যা সিনেমা করেছেন, তার বেশির ভাগই ছিল মাল্টিহিরো ফিল্ম। যেমন ‘নো এন্ট্রি’, ‘হে বেবি’-র মতো ফিল্মে ভাল কাজ করেছেন তিনি। ২০১০ সালে তার শেষ ফিল্ম ছিল ‘দুলহা মিল গয়ে’। ব্যক্তিজীবনে ২০০৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে নতাশা মাধবনীকে বিয়ে করেন ফারদিন। শোনা যায়, ২০১০ সালের পর তিনি নিজের পরিবারকে নিয়েই নাকি খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাই ফিল্মে তাকে সেভাবে দেখা যায় না। ২০১১ সালে ফারদিন খান ড্রাগ মামলা থেকে পুরোপুরি রেহাই পান। তিনি যে রিহ্যাবে গিয়ে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন, কোর্টে সেই সার্টিফিকেট পেশ করেন। তাঁর কেরিয়ার যত না দীর্ঘ ছিল, তাঁর কোর্ট কেস তার থেকেও বেশি দীর্ঘ ছিল, এমনই গুঞ্জন বলিউডে।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.