গল্প নয়, মুন্ডু বিহীন অবস্থায় এই মুরগি বেঁচেছিল বহুদিন



Odd বাংলা ডেস্ক: মুণ্ড ছা়ড়া কেউ কোনও দিন বাঁচতে পারে ? কল্পবিজ্ঞানে তো এ সব আকছার হয়, কিন্তু বাস্তবে ? অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনটা দেখা গিয়েছিল একটা মুরগির ক্ষেত্রে । এক দিন, দুদিন নয়, টানা আঠারো মাস দিব্যি বেঁচেছিল ছোট্ট প্রাণীটা, তা-ও আবার মুণ্ড ছাড়া । খাবার দোকানে মুরগি সাপ্লাই করতেন কলোরাডোর ফ্রুটা শহরের লয়েড ওলসেন ও তাঁর স্ত্রী ক্লারা । 

 ১৯৪৫-এর সেপ্টেম্বরের এক সকালে গোটা চল্লিশেক মুরগি কাটার পর তাঁদের নজর পড়ে, ধড় থেকে মাথা আলাদা হলেও একটি মুরগি টলতে টলতে হেঁটে-দৌড়চ্ছে । মুণ্ডহীন মুরগির মৃত্যুর অপেক্ষায় সেটিকে একটি বাক্সে রেখে দিয়ে ঘুমোতে যান দম্পতি । পর দিন সকালে ঘুম ভেঙে তাঁরা যা দেখলেন, তাতে অবাক বললেও কম বলা হয় । 



সোনার ডিম না পাড়লেও এই মুরগির ‘ক্ষমতা’ যে তার চেয়ে কিছু কম নয়, তা বুঝতে দেরি করেননি ওলসেন । দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ে ছোট্ট শহরে । টনক নড়ে সংবাদিকদের । দুদিন আগেও যার পরিণতি লেখা ছিল খাবারের প্লেটে, রাতারাতি সে হয়ে যায় সেলেব্রিটি । এক কথায়, অলৌকিক ভাবে নতুন জীবন পাওয়া মুরগির পোশাকি নাম হয় ‘মিরাক্‌ল মাইক’ । মহার্ঘ পাখিটাকে দেখতে চার দিকে হইচই পড়ে যায় । সাধের মুরগিকে নিয়ে প্রদর্শনীর সুবাদেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দেখার স্বপ্ন সত্যি হয় লয়েডের । 



 কিন্তু মাথা ছাড়া কী ভাবে বেঁচে রইল মাইক ? আমার-আপনার মতো এই প্রশ্ন জেগেছিল চিকি‍ৎসক ও প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মনেও । কারণ, পরবর্তী সময় অনেকেই দ্বিতীয় মিরাক্‌ল মাইক বানাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন । তা হলে কোন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় বেঁচেছিল মাইক । আসলে লয়েড যখন মাইকের মাথায় কোপ মারেন, তখন তার একটা কান বাদ দিয়ে চোখ, ঠোঁট-সহ গোটা মাথাটাই কেটে বাদ চলে যায় । 

কিন্তু মুরগিদের মাথার পিছনেই থাকে মস্তিষ্কের মূল অংশটা । মাইকের ক্ষেত্রে আশ্চর্যজনক ভাবে বেঁচে যায় তার মস্তিষ্কের ৮০ শতাংশ অংশই । মাইকের মস্তিষ্কের এই অংশটাই তার শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদ্‌স্পন্দন, খিদে, হজম নিয়ন্ত্রণ করত । সময় মতো মাইকের ক্ষতর কাছে রক্তও জমাট বেঁধে গিয়েছিল, ফলে সে ভাবে রক্তক্ষরণও হয়নি । মাথা না থাকায় একটি ড্রপারে করে তরল খাবার ও জল সরাসরি খাদ্যনালিতে ঢেলে দেওয়া হত । 

সিরিঞ্জ দিয়ে খাদ্যনালির চার দিকের ময়লা পরিষ্কার করে দিতেন লয়েড । এ ভাবেই সব দিব্যি চলছিল । এক বার পশ্চিম আমেরিকার ফিনিক্স শহরে প্রদর্শনীর শেষে একটি মোটেলে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন লয়েড দম্পতি ও মাইক । হঠাৎই একটা শব্দে দম্পতি চমকে ওঠেন । দম আটকে মাইকের প্রাণ তখন ওষ্ঠাগত । 



কিন্তু ওই যে সিরিঞ্জ, সেটি প্রদর্শনীতেই ফেলে এসেছিলেন লয়েডরা । ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসের এই রাতে খাবার আটকে প্রাণ যায় মাইকের । আর পাঁচটা সুস্থ মুরগি যখন বড় হতেই রান্নার কড়াইতে জায়গা পায়, তখন মাথা হারিয়েও তাদের চেয়ে বেশি দিন বেঁচেছিল মাইক । 

 যদিও মারা গিয়েও বেঁচে ছিল মাইক । তার মনিব দীর্ঘ দিন তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যেই আনেননি । কেউ খোঁজ করলেই লয়েডরা বলতেন, বেচে দেওয়া হয়েছে মাইককে । এ ভাবেই মৃত্যুর পরেও বেঁচে ছিল মিরাক্‌ল মাইকের মিথ । কলোরাডোর ফ্রুটা শহরে গেলে এখন মুণ্ডহীন মুরগির স্ট্যাচুর দেখা মেলে । মাইকের স্মৃতিতে প্রতি বছর মে মাসে পালন হয় ‘হেডলেস চিকেন ফেস্টিভ্যাল’ । আর লোকমুখে ঘুরে বেড়ায় এই আশ্চর্য মুরগির গল্প ।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.