শিবলিঙ্গের সাপটি কীসের প্রতীক, লিঙ্গপূজা দোষের নয় তো? শিবলিঙ্গ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা


Odd বাংলা ডেস্ক: শিবলিঙ্গের পুজো করা হিন্দুদের মধ্যে ব্যপকভাবে প্রচলিত। প্রাচীনকাল থেকেই ভারতে যেকোনও শিব মন্দিরের গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গের অবস্থান প্রচলিত রয়েছে। তবে শিবলিঙ্গ নিয়ে মানুষের মনে নানাসময়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। আজকের প্রতিবেদনে রইল শিবলিঙ্গ সম্পর্তে কিছু না-জানা তথ্য-

১) শিবলিঙ্গে মোট তিনটি অংশ থাকে। সবচেয়ে নীচের চারমুখী অংশটি থাকে মাটির নীচে। তার উপরের অংশটি আটমুখী, যা বেদীমূল। আর একেবারের উপরের অর্ধবৃত্তাকার অংশটি পূজিত হয়। এই অংশটির উচ্চতা হয়, এর পরিধির এক তৃতীয়াংশ। এই তিনটি অংশের সবচেয়ে নীচের অংশটি ব্রহ্মা, তার উপরের অংশটি বিষ্ণু ও একেবারে উপরের অংশটি মহেশ্বর তথা শিবকে চিহ্নিত করে। 

বেদীমূলে একটি লম্বাকৃতি অংশ রাখা হয়, যা শিবলিঙ্গের মাথায় ঢালা জল বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। এই অংশের নাম গৌরীপট্ট, যা মূলত যোনিপ্রতীক।

২) শিবলিঙ্গের একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। শিবলিঙ্গের দিকে তাকালে দেখবেন এর লম্বাকৃতি অংশটিতে পরপর তিনটি খাঁজ কাটা রয়েছে। জানা যায় এই তিনটি খাঁজ আসলে অণুর তিনটি উাপাদান— প্রোটন, নিউট্রন ও ইলেকট্রনের প্রতীক, যা দিয়েই তৈরি হয়েছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। অর্থাৎ ব্রহ্মাণ্ডের গঠনের প্রতীক হল শিবলিঙ্গ।


৩) পাশাপাশি শিবলিঙ্গের বৈদিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। শিবলিঙ্গ যেহেতু ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক সেহেতু শিবলিঙ্গ পূজা করার অর্থ, আদি শক্তির সঙ্গে চৈতন্যের মিলনকে স্মরণে রাখা। এই 'মিলন'-এর অর্থ কিন্তু শারীরিক মিলন নয়, এ এক অতিপ্রাকৃত মিলন। প্রসঙ্গত সংস্কৃত ভাষায় 'লিঙ্গ' শব্দটির অর্থ শুধু পুরুষাঙ্গ নয়, বরং চিহ্নও। নির্গুণ শক্তি যখন সগুণ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা শুরু করে তখন লিঙ্গই হয়ে ওঠে সেই রূপান্তরের চিহ্ন। 

৪) শিবলিঙ্গের গায়ে যে সাপটি থাকে তা আসলে সুপ্ত চেতনার প্রতীক, কুলকুণ্ডলিনীর প্রতীক। এটি শক্তির জাগরণকে চিহ্নিত করে শিবলিঙ্গ। 

৫) শিবলিঙ্গের পূজা কেবল ভারত আর শ্রীলঙ্কাতেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রাচীন রোমে 'প্রায়াপাস' নামে যে বিগ্রহের পুজা করাহতো, অনেকের মতে সেটি শিবলিঙ্গই ছিল। হরপ্পা-মহেঞ্জোদাড়ো সভ্যতার যে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যেও বেশ কিছু শিবলিঙ্গ উদ্ধার করা হয়েছে। 

৬) অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, শিবলিঙ্গ পুজোর মধ্যে কোনও অপরাধ বা অশ্লীলতা নেই তো? শিবলিঙ্গ একই সঙ্গে সৃষ্টি ও ধ্বংসের প্রতীক। যাঁরা একে পুরুষাঙ্গের পূজা হিসেবে ব্যাখ্যা করে অশ্লীলতা বলে মনে করেন, তা একেবারেই ভুল ব্যাখ্যা। তা ছাড়া, হিন্দু ধর্মে শিবকে নিরাকার বলে মনে করা হয়। কাজেই তাঁর লিঙ্গ যে একেবারেই প্রতীকী বিষয়, তা বোঝা দরকার। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.