এই দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে বোরকা, কেমন আছেন মুসলিম নারীরা
Odd বাংলা ডেস্ক: এক বছর আগে নেদারল্যান্ডসে নিষিদ্ধ করা হয় বোরকা। এই ঘটনার পর মুসলিম নারীদের প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতা বাড়াছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একদিকে বোরকা নিষিদ্ধ, অন্যদিকে গণপরিবহনে করোনার কারণে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হওয়ায় বেড়েছে তাদের হতাশা।
পশ্চিম আমস্টারডামের বোস এন লোমারপ্লাইন চত্ত্বর দ্রুত পার হয়ে একটু আলাদা হয়ে দাঁড়ালেন এমারাহ (নিরাপত্তার স্বার্থে এমারাহ’র আসল নাম প্রকাশ করা হয়নি)। বৃষ্টিতে ততক্ষণে তার কালো বোরকা ভিজে চুপচুপে।
তিন বছর ধরে তিনি বোরকা পরা শুরু করেছেন। ডয়চে ভেলেকে এমারাহ বলেন, মানুষ মনে করে আমার স্বামী চায় বলেই আমাকে এটা পরতে হয়, কিন্তু এটা আমার নিজের ইচ্ছায় পরেছি। আমি যখন বোরকা পরা শুরু করি তখনও আমার বিয়ে হয়নি।
তিনি বলেন, ‘বোরকা পরাটা খুব কঠিন হয়ে গেছে। মানুষ আমাকে শত্রু হিসেবে দেখে। আমার মনে হয় আমাকে কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছে, খুব একা মনে হতে থাকে। আমি কেবল আমার পছন্দ অনুযায়ী নিজের ধর্ম পালন করতে চাই বলে বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে।’
এক বছর আগে ২০১৯ সালের আগস্টের ১ তারিখ ‘মুখ ঢাকা পোশাক' নিষিদ্ধ করে বিতর্কিত আইন অনুমোদন দেয় ডাচ সরকার।
ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে একই ধরনের বা আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ডাচ আইনে গণপরিবহণ এবং স্কুল, হাসপাতাল বা সরকারি বিভিন্ন ভবনের মতো পাবলিক স্থাপনায় মুখ ঢাকা পোশাক নিষিদ্ধ করেছে। তবে ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে রাস্তাতেও বোরকা পরা না গেলেও নেদারল্যান্ডসে এ অনুমতি দেয়া হয়েছে।
সরকার বলছে, জননিরাপত্তাই এমন নিষেধাজ্ঞার মূল কারণ। ডানপন্থী দল পার্টি ফর ফ্রিডমের নেতা গ্যার্ট ভিল্ডার্স ১৪ বছর আগে এ দাবি তুলেছিলেন। তখন থেকে চলচিল এ নিয়ে বিতর্ক। মুখ ঢাকা থাকলে ১৫০ থেকে ৪৫০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে ডাচ আইনে। ডাচ ন্যাশনাল পুলিশ ফোর্স অবশ্য বলছে গত এক বছরে হাতেগোনা কয়েকজনকে এ আইনে জরিমানা করা হয়েছে।
এমারাহ বলেন, ‘আগের চেয়ে মানুষ অনেক বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেছে।' রাস্তায় বোরকা পরা নিষিদ্ধ না হলেও তাকে নানা প্রতিক্রিয়ার শিকার হতে হয়। এমারাহ অবশ্য আগেও সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য সুপারমার্কেটে একজন বাজারের ট্রলি দিয়ে পায়ে আঘাত করেন। তবে আইন পাস হওয়ার পর এক লোক আমার ওপর গাড়ি তুলে দিতে চেয়েছিল।’
ডাচদের মধ্যেও অবশ্য এই বোরকা ব্যান নিয়ে বিভক্তি রয়েছে। কেউ মনে করেন সবারই ইচ্ছামতো পছন্দের পোশাক পরার অধিকার থাকা উচিত।
আবার কেউ মনে করেন জাতীয় নিরাপত্তার প্রাধান্য আগে, কেউ মনে করেন এমন পোশাক নারীদের ওপর অত্যাচার।
এমারাহ মনে করেন, ডাচরা উদারপন্থার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসা পেলেও এখন দেশটিতে সহনশীলতা ধীরে ধীরে কমছে। এমন আইন ‘ইসলামের ওপর আঘাত' বলে মনে করেন তিনি। এ আইন ইউরোপিয়ান কনভেনশন অব হিউম্যান রাইটস এবং দেশটির সংবিধানে যে ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে তার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক বলেও মনে করেন তিনি। নিজের পছন্দে বোরকা পরলে, সেটা পরা বাদ দেয়াটাও একান্তই তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা হওয়া উচিত বলে মনে করেন এমারাহ।
করোনায় বাধ্যতামূলক মাস্ক
করোনা মহামারি ঠেকাতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একদিকে মুখ ঢাকা পোশাক পরা নিষিদ্ধ করা, অন্যদিকে মুখ ঢাকতে বাধ্য করাটাকে খুব হাস্যকর বলে মনে করছেন এমারাহ এবং অন্য মুসলিম নারীরাও। অনেক নারীকে এখন একই সঙ্গে মুখ ঢাকা এবং না ঢাকার জন্য শাস্তি পেতে হতে পারে। এমারাহর মতো অনেক নারীই প্রশ্ন তুলছেন জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য মুখ ঢাকা সমস্যা না হলে ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে মুখ ঢাকায় সমস্যা কী?
এমারাহ একা নন, ‘ডোন্ট টাচ মাই নিকাব'র মতো অনেক সংগঠনই ডাচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস এবং সিনেটকে আহ্বান জানাচ্ছে এই আইন বাতিলের জন্য। তারা যুক্তি দিচ্ছেন, যে নিরাপত্তা হুমকির কথা বলে মুখ ঢাকা পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, করোনা পরিস্থিতি পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে এটা আসলে কোনো যুক্তি না।
Post a Comment