রাখি বন্ধন উৎসবের সূচনা কীভাবে হয়েছিল, রইল সেই পৌরাণিক কাহিনি
Odd বাংলা ডেস্ক: ভাই-বোনের বন্ধন এবং সমগ্র ভাতৃত্ববোধ পোক্ত করতেই রাখি বন্ধনের প্রচলন রয়েছে। কিন্তু ঠিক কবে থেকে, কেন এই প্রথার প্রচলন হয়, জানেন? পুরাণে এই বিষয়ে একাধিক কাহিনি পাওয়া যায়। পাশাপাশি ইতিহাসেও রাখির বন্ধনের উল্লেখ রয়েছে।
রাখিকে উত্সব একান্তভাবে ভাই-বোনের হিসেবে মনে করা হলেও ইতিহাসে ঘাঁটলে জানা যায় পুরুষকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করার প্রতীক হিসেবে তার কবজিতে সুতো বেঁধে দিতেন মহিলারা। যা, পরে থেকে রাখি বন্ধন উত্সবের রূপ নেয়। ৩২৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আলেকজান্দার ও পুরুর যুদ্ধের পরেও রাখি বন্ধনের উল্লেখ পাওয়া যায়। স্বামীর প্রাণ সংশয় হতে পারে, এই আশঙ্কা করে আলেকজান্দারের স্ত্রী পুরুর কাছে যান এবং তাঁর হাতে রাখি বেঁধে দেন। তার পরিবর্তে পুরু আলেকজান্দারের কোনও ক্ষতি করবেন না বলেও প্রতিশ্রুতি দেন।
এছাড়াও আও একটি ঐতিহাসিক কাহিনি প্রচলিত তা হল, চিতৌরের রানি কর্মাবতী গুজরাতের সুলতান বাহাদুর শাহের আক্রমণের আগাম খবর পেয়ে মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে রাখি পাঠিয়ে সাহায্যের অনুরোধ করেন। রাখি পেয়ে হুমায়ুন চিতৌরের দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু তিনি পৌঁছতে একটু দেরি করে ফেলেন। যার ফলে হুমায়ুন চিতৌর পৌঁছনোর আগেই সম্মান বাঁচাতে 'জওহর' মেনে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দেন কর্মাবতী ও তাঁর সঙ্গীনীরা।
পুরাণ অনুসারে-
- মহাভারতেও রাখির উল্লেখ পাওয়া যায়। রাজসূয় যজ্ঞের সময় শিশুপালকে হত্যার পরে কৃষ্ণের একটি আঙুল কেটে রক্ত পরতে থাকে। দ্রৌপদী তখন নিজের শাড়ি ছিড়ে ক্ষতস্থানে বেঁধে দেন। এর পরিবর্তে কৃষ্ণ তাঁকে সবরকম বিপদে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন।
- আরও একটি কাহিনি অনুসারে, একবার দেবতা ও রাক্ষসদের যুদ্ধে দেবতারা যখন প্রায় পরাজয়ের মুখে, দেবরাজ ইন্দ্র তখন তাঁর গুরু বৃহস্পতির সাহায্য চান। বৃহস্পতির পরামর্শ মতো শ্রাবণ পূর্ণিমায় ইন্দ্রের স্ত্রী সচী একটি মন্ত্রপূত রাখি ইন্দ্রের হাতে বেঁধে দেন। তারপরই যুদ্ধে জয়লাভ করেন দেবতারা। আরও বলা হয় যে যমের অমরত্বের প্রার্থনা করে তাঁর বোন যমুনা তাঁর হাতে একটি রাখি পরিয়ে দেন। এরপরই যমরাজ কথা দেন যে যাঁর হাতে তাঁর বোন হাতে রাখি পরিয়ে দেবেন, তাকে তিনি স্বয়ং রক্ষা করবেন।
- আবার অনেকে বলে থাকেন শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার দিনে হতদরিদ্র নারীর বেশে বালির কাছে আশ্রয় চান লক্ষ্মী। বালি নিজের প্রাসাদের দরজা খুলে দেন তাঁর জন্য। খুশি হয়ে লক্ষ্মী, কাপড়ের টুকরো বেঁধে দেন বালির হাতে। কথিত আছে গণেশের দুই পুত্র, শুভ ও লাভ বায়না ধরেছিল নিজেদের বোনের হাতে তারা রাখি পরতে চায়। কিন্তু কোনও উপায় নেই। অবশেষে গণেশের দুই স্ত্রী, ঋদ্ধি ও সিদ্ধির অন্তর থেকে নির্গত অগ্নি সৃষ্টি করা হয় সন্তোষীকে। তার হাত থেকে রাখি বাঁধে গণেশ পুত্ররা।
Post a Comment