রাতে নারীদের তুলে নিয়ে যৌন নির্যাতন করতেন ওসি



Odd বাংলা ডেস্ক: ঘটনা বাংলাদেশের। মাদকবিরোধী অভিযানের নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি, চাঁদাবাজি, ক্রসফায়ার ছাড়াও নারীদের তুলে নিয়ে যৌন নির্যাতনের অভিযোগও আছে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে। সিনহা হত্যা ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর এক-এক করে বেরিয়ে আসছে তার এমন নানা অপকর্মের তথ্য। তবে এখনো নির্যাতিত নারীরা মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন। কেউ কেউ মানহানির কথা চিন্তা করে যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলো গোপন রাখছে। এলাকাবাসী বলছেন, গত বাইশ মাসে শতাধিক নারীকে থানায় তুলে নিয়ে নির্যাতন করেন তিনি। তারা বলছেন, ফিল্মস্টাইলে চলাফেরা করতেন ওসি প্রদীপ। গত বছরের ঘটনা। রাত দুটা। নাজিরপাড়ায় একটি বাড়িতে এসে হানা দেন ওসি প্রদীপ। 

 সেইদিন রাতে ওই বাড়ির তিন মহিলাকে তুলে নিয়ে যান তিনি। ঘুম থেকে তুলে থানায় নিয়ে যান ওই পরিবারের দুই পুত্রবধূকে। এরপর তিন নারীকে ত্রিশ হাজার ইয়াবা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখান তিনি। এর আগে তাদের গায়ে হাত তোলাসহ শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের মধ্যে একজন বৃদ্ধ নূর বেগম। তিনি বলেন, গত বছরর একদিন রাত দুইটায় ওসি প্রদীপ আমাদের বাড়িতে আসে তার পুলিশ নিয়ে। এরপর আমার ছেলে জিয়াউর রহমানকে খুঁজে। আমি তাদেরকে খোঁজার কারণ জানতে চাইলে ওসি তার হাতের অস্ত্রটি দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। পরে আমি আর কিছু বলতে পারবো না। একদিন পর দেখি আমি সদর হাসপাতালে। আমাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ নিজে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। ওই নারীর ছোট ছেলে, প্রবাসী কামাল হোসেন বলেন, আমার বড় ভাই লবণ ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমানকে খুঁজতে আসে পুলিশ।

 তখন আমার ভাই ব্যবসার কাজে গোপালগঞ্জে ছিল। আমার ভাইকে না পেয়ে আমার মা ও আমার দুই ভাবীকে তারা ধরে নিয়ে যায়। আমার দুই ভাবীকে তারা অশ্লীল নানান ইঙ্গিত দেয়। এতে রাজি না হওয়ার তারা আমাদের কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে এসআই সঞ্জিতের মাধ্যমে। এতো টাকা তখন আমাদের কাছে ছিল না। পরে ছয় লাখ টাকা ম্যানেজ করে দিলেও তারা আমার ভাবী ও মাকে ৩০ হাজার ইয়াবা দেখিয়ে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের পরিবারের বড় ছেলে জিয়াউর রহমানকে গোপালগঞ্জ থেকে টেকনাফে নিয়ে কথিত ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ মিলে। এদিকে চলতি বছরের ২৬ জুলাই টেকনাফের মণ্ডলপাড়ায় ইউনুসের স্ত্রী হাসিনা আক্তারকে রাতের বেলায় নির্যাতন করে গ্রেপ্তার করার অভিযোগ উঠেছে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। জানা গেছে, ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামিকে জায়গা দেয়ার অভিযোগে তাকে আটক করেন টেকনাফ থা’না পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, তখন সেখানে কোনো নারী পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি ছিল না। পুরুষ পুলিশ সদস্যরাই তাকে নানানভাবে শারীরিক নির্যাতন করে তুলে নিয়ে যায়। 



এরপর তাকে এক হাজার ইয়াবা দিয়ে গ্রে’প্তার দেখানো হয়। এবং তার বাড়িটি পুলিশ আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। একই ঘটনায় পাশের গ্রাম মৌলভীপাড়ার আরো দুইজনকে তুলে নিয়ে যায় পু’লিশ। তাদের মধ্যে মিনি টমটম চালক আব্দুল মোত্তালেব ও তার বোন রহিমা আক্তারকে সাক্ষী দেয়ার কথা বলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। একই সঙ্গে তাদের বাড়িটি ভা’ঙচুর চালানো হয়। কিন্তু রহিমা খাতুন পুলিশের সঙ্গে না যেতে চাইলে মরিচের গুঁড়া তার নাকে-মুখে ছিটিয়ে দেয়। পরে ওই নারীকে অ’সুস্থ অবস্থায় ধ’রে নিয়ে যায় পু’লিশ। এই অ’ভিযানে ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিল পু’লিশ সদস্য সাগর, সঞ্জিত দত্ত ও রুবেল। পরে আব্দুল মোত্তালেবের শ্বশুর নূরুল ই’সলাম থা’নার দালাল মোহা’ম্মদ আলীকে নিয়ে তিনলাখ টাকা পু’লিশ সদস্য সাগরের হাতে দিলেও ছাড়া পাননি কেউ। উল্টো দুইজনকে দুই হাজার ইয়াবা দিয়ে গ্রে’প্তার দেখায় টেকনাফ থা’না পু’লিশ। 

এই এলাকার নারীদেরকে শুধু তুলে নিয়ে যাওয়াই নয়, যখন-তখন তাদেরকে শারীরিক নি’র্যাতন করার অ’ভিযোগ রয়েছে টেকনাফ থা’নার পু’লিশের বি’রুদ্ধে। অনেক নারীকে যৌ’ন হ’য়রানির অ’ভিযোগও আছে ওসি প্রদীপের বি’রুদ্ধে। টেকনাফ পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড অলিয়াবাদ গ্রামের একজন নারী যৌ’ন হ’য়রানির অ’ভিযোগ তুলেছে ওসির বি’রুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, ওই এলকার একজন বাসিন্দাকে ওসির লোকজন টাকা দা’বি করে নিয়মিত হু’ককি-ধ’মকি দিতো। টাকা না দেয়ার কারণে তিন মাস আগে ওসি নিজে তাদের বাড়ি ঘর ভে’ঙে দেন। ওই দিন, বাড়ির মালিকের ছেলের স্ত্রীর ঘরে ঢুকে দরজা ব’ন্ধ করে দেন ওসি। সেই সময় তিনি পরিবারের লোকজনদের সরিয়ে দেন। অ’ভিযোগ ওঠে ওই নারীকে ওসি প্রদীপ শ্লী’তহানীর চে’ষ্টা করেন। কিন্তু শ্লী’লতাহানী না করতে পেরে তাকে মা’রধর ও লাথি দেন তিনি। নাজির পাড়ার বাসিন্দা দুদু মিয়াকে হ্নীলা থেকে আ’টক করে কথিত ক্রসফা’য়ার দেন ওসি প্রদীপ। গত বছরের রমজান মাসে তাকে আ’টক করে বিশ লাখ টাকা দা’বি করেন ওসির ডান হাত বলে পরিচিতি এএসআই সঞ্জিত। রাতের মধ্যে টাকা জোগাড় করলেও রাতেই তাকে ক্রসফা’য়ার দেয়া হয়। দুদু মিয়ার স্ত্রী নাসিমা আক্তার অ’ভিযোগ করে বলেন, আমি সঞ্জিতের পায়ে পড়েছিলাম। তখন সে আমাকে লাথি দিয়ে ফেলে দিয়েছে। ওসির কাছে গিয়েছিলাম। উল্টো আমাকে হু’মকি-ধ’মকি দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। এর আগে ৫০ লাখ টাকা চেয়েছিল পু’লিশ। পরে দশ লাখ টাকায় রাজি হয়। কিন্তু একদিনের মধ্যেই গরু মহিষ বিক্রি করে তিন লাখ টাকা জোগাড় করে দিলেও রাতের মধ্যেই মে’রে ফেলে আমার স্বামীকে। 

স্বামীকে মা’রার পর ওসির লোকজন বিভিন্ন সময় আমাকে হু’মকি-ধ’মকি দিয়ে আসছে। বলেছে এসব বিষয়ে কথা বললে, আমাদেরও একই অবস্থা হবে। দুদু মিয়াকে ক্রসফা’য়ার দিয়ে একই মা’মলায় আ’সামি করা হয় তার বড় ভাই স্কুলশিক্ষক সৈয়দ আলম ও ছোটভাই প্রবাসী সোনা মিয়াকে। একই মা’মলায় গত বিশদিন ধ’রে জেল খাটছেন সোনা মিয়া।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.