করোনা চিকিৎসায় অতিরিক্ত বিল, লাইসেন্স বাতিল হতে পারে পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারি হাসপাতালগুলির



Odd বাংলা ডেস্ক: করোনা সংকটকে পুজি করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালগুলো বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে আভিযোগ উঠছে৷ প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতালের বিপুল অংকে বিল নিয়ে। অভিযোগ, রোগীর অসহায়তার সুযোগ অন্যায্য বিল করছে হাসপাতাল৷ যদিও তাদের বক্তব্য, কভিড চিকিৎসার খরচই বিপুল৷ দুর্নীতি থাকলেও তা আছে মুষ্টিমেয় ক্ষেত্রে৷ পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতে সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এখনো পর্যাপ্ত নয়৷ ফলে বহু মানুষকে উন্নততর চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে উপর নির্ভর করতেই হয়৷ চলতি সপ্তাহে মূলত দু'টি অভিযোগ ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনা চলছে৷ কলকাতার রুবি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক কভিড রোগীর বিল ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, ১০ লাখ টাকার বেশি বিল করা হয়েছে৷ 

চিকিৎসক বাবদ খরচ নগণ্য, ওষুধ ও ওয়ার্ডে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রীর জন্য লাখ লাখ টাকা বিল করা হয়েছে৷ দ্বিতীয় অভিযোগের কেন্দ্রে উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের এক জনপ্রিয় চিকিৎসক প্রদীপ ভট্টাচার্য৷ তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন৷ মেডিকা হাসপাতাল তাঁর চিকিৎসার জন্য প্রায় ১৯ লাখ টাকার বিল করেছে৷ হাসপাতাল সংক্রান্ত অভিযোগের নিষ্পত্তির জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করেছে, তারা এই বিলের কথা জানতে পেরে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে৷ 

কমিশনের প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় মেডিকা কর্তৃপক্ষকে বার্তা দিয়েছেন, বিল খতিয়ে দেখে কিছু টাকা প্রয়াত চিকিৎসকের পরিবারকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক৷ করোনা চিকিৎসায় এই বিপুল অঙ্কের বিল কি যুক্তিসঙ্গত? মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট চিকিৎসক কুণাল সরকারের বক্তব্য, করোনার চিকিৎসা ব্যয়বহুল৷ তিনি বলেন, 'করোনা রোগীকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা করাতে গেলে দৈনিক ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ৷ এর নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই ঠিকই৷ কিন্তু যে ১০-১২ রকমের ওষুধ ব্যবহার করতে হয়, তার জন্য রোজ খরচ ৭-৮ হাজার টাকা৷ গুরুতর অসুস্থ কভিড রোগী ২০ দিন ভর্তি থাকলে তাঁর বিল ১০ লাখে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ এটা সত্যিই কোনো পরিবারের পক্ষে যথেষ্ট চাপের৷ কিন্তু এটাই বাস্তব পরিস্থিতি৷' 

 সোশ্যাল মিডিয়ার বার্তায় অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ এই হাসপাতালগুলোকে 'রক্তচোষা' বলে কটাক্ষ করেছেন৷ ডক্টরস ফোরাম-এর সদস্য, চিকিৎসক রেজাউল করিম স্বীকার করেন, বেসরকারি পরিকাঠামো ছাড়া সবাইকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া যাবে না৷ কিন্তু তাঁর বক্তব্য, 'হাসপাতালের বিলে স্বচ্ছতা থাকছে না৷ একটা বিলের ৭০ শতাংশ খরচ কোন খাতে স্পষ্ট বোঝার উপায় নেই৷ যে ওষুধই প্রয়োগ করা হোক, এত টাকা বিল হওয়ার কথা নয়৷ নইলে একটি হাসপাতাল ভর্তির সময় এক লাখ টাকা আনুমানিক খরচ দেখিয়ে রোগীকে ছাড়ার সময় ২৫ লাখ টাকার বিল ধরায় কীভাবে?' সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, সার্ভিস ডক্টর ফোরাম-এর সদস্য স্বপন বিশ্বাস এজন্য সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন৷ 

তিনি বলেন, 'সরকার তার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নত করার বদলে বেসরকারিকরণে বেশি মনোযোগ দিয়েছে৷ তাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ করে দিচ্ছে৷ এই নীতির বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ৷ তাই মহামারির সময়েও বেসরকারি হাসপাতালগুলো অমানবিক আচরণ করছে৷' অমানবিক আচরণেরঅভিযোগ খারিজ করেননি বেসরকারি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কুণাল সরকার৷ তিনি বলেন, 'সরকারি যে পরিকাঠামো রয়েছে তাতে জটিল রোগের উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়৷ তাই সরকারি ও বেসরকারি দু'টি ক্ষেত্রেই পরিষেবা চালু রাখতে হবে৷ কিন্তু চিকিৎসার খরচ এতটাই বেশি যে সেটা অনেক সময় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, এটা ঠিকই৷ কোনো হাসপাতাল যদি সরকারি নির্দেশিকা না মানে, পিপিই বা অন্য সামগ্রী বাবদ লাখ লাখ টাকা বিল করে, সেটাকে কেউ সমর্থন করে না৷ এটা এক ধরনের দুর্নীতি, যা সব ক্ষেত্রেই আছে৷'
Blogger দ্বারা পরিচালিত.