কল্পনার রাম মন্দির বাস্তবে, ফিরে দেখা অযোধ্যা আন্দোলনের ১০ যোদ্ধা


Odd বাংলা ডেস্ক: অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণে পথটি সুগম হয়েছিল ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের হাত ধরে। কিন্তু ১৯৮০-র দশকে এটি আরএসএস-বিজেপির একটা বড় এজেন্ডা ছিল। সেইসময়ে তামিলনাড়ুর একটি গ্রামে বিপুল পরিমাণে ধর্মান্তরের প্রক্রিয়া তরান্বিত হয়েছিল। 

রাম জন্মভূমি আন্দোলনকে একটি শক্তিশালী সমাজ-রাষ্ট্রনৈতিক প্রচারে পরিণত করার জন্য রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস), বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, ভারতীয় জনতা পার্টি, বজরঙ্গ দল এবং এর সঙ্গে যুক্ত দলগুলি তাদের সাংগঠনিক শক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এই রাম জন্মভূমির আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ১০টি নাম, যা কালের নিয়মে অনেকেই ভুলে গিয়েছেন। 

রাম মন্দিরের ভূমি পূজন সংক্রান্ত আরও খবর পড়ুন এই লিঙ্কে


১) লালকৃষ্ণ আডবাণী- অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি প্রচারে বিজেপির প্রবীণ সদস্য লালকৃষ্ণ আডবাণীকে হিন্দুত্বের আসল 'পোস্টার বয়' করে তুলেছিল। তিনি ১৯৯০ সালে গুজরাতের সোমনাথ মন্দির থেকে অযোধ্যার রাম জন্মভূমি স্থল পর্যন্ত দেশব্যাপী রোডশো চালু করেছিলেন।

একটি টয়োটা বাসকে কার্যত রথে রূপান্তরিত করে ভ্রমণ করেছিলেন তিনি। অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণে আডবাণী ব্যপক জনসমর্থন আদায় করেছিলেন। কিন্তু অযোধ্যায় পৌঁছনোর আগেই বিহারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব সমস্তিপুর জেলায় তাঁকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এই ঘটনার দু'বছর পরে, অন্য একটি প্রচারে, আডবাণী তখন বাবরি মসজিদের কাছাকাছিই ছিলেন, যখন বিজেপির সমর্থিত ভিএইচপি-র আহ্বানে করসেবকরা অযোধ্যায় পৌঁছে মুঘল আমলের বাবরি মসজিদটি মসজিদটি ধ্বংস করে দেয়। প্রসঙ্গত, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলায় আডবাণী আজও ফৌজদারি বিচারের সম্মুখীন হন।


২) প্রমোদ মহাজন- প্রমোদ মহাজন বিজেপির এক বিচক্ষণ পরিকল্পনাকারী ছিলেন। বাজপেয়ী-আডবাণীর তৈরি বিজেপিতে তিনি একজন রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর পরামর্শেই কিন্তু আডবাণী গুজরাতের সোমনাথ মন্দির থেকে অযোধ্যায় পদযাত্রার আয়োজন করেছিলেন। ১৯৯০ সালে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ মহাজন আদভানিকে ওই রথযাত্রা করার পরামর্শ দেন। ২৫ সেপ্টেম্বর বিজেপির পুরোধা দীন দয়াল উপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকিতে কিংবা ২ অক্টোবর গান্ধীজির জন্মবার্ষিকীতে পদযাত্রা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আডবাণী এই প্রমোদ মহাজনই তৎকালীন বিজেপির এক উদীয়মান সাংগঠনিক নেতা ২৫ সেপ্টেম্বর উপলক্ষ্যে ১০০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পদযাত্রার আয়োজন করেছিলেন। নরেন্দ্র মোদীর সহায়তায় রথযাত্রার পরিকল্পনা ও সম্পাদন করেছিলেন।


৩) অশোক সিংহল- অশোক সিংহল ছিলেন এক অক্লান্ত পরিশ্রমী ভিএইচপি নেতা, যিনি রাম জন্মভূমি প্রচারের জন্য জনসমর্থন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নিজের সম্পত্তিও উৎসর্গ করেছিলেন। অনেকের কাছেই তিনি রাম মন্দির আন্দোলনের প্রধান রূপকার ছিলেন। ২০১১ অবধি তিনি ভিএইচপি প্রধান ছিলেন, এরপর তিনি অসুস্থতার কারণে দেখিয়ে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে তিনি মারা যান।


৪) মুরলি মনোহর যোশী- ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে বিজেপির 'অধ্যাপক' মুরলি মনোহর যোশী ছিলেন। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভেঙে দেওয়ার সময়ে মুরলি মনোহর যোশী আডভাণীর সঙ্গেই ছিলেন। তিনিও এই মামলায় বিচারের মুখোমুখি রয়েছেন। বাবরি মসজিদের ধ্বংসের পরে মুরলি মনোহর যোশীর উমা ভারতীকে আলিঙ্গন করার একটি ছবি সেইসময়ে জাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।


৫) উমা ভারতী- বিজেপির ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং প্রথম মেয়াদে নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রী উমা ভারতী ছিলেন রাম মন্দির আন্দোলনের সবচেয়ে প্রভাবশালী এক মহিলা নেতা। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বিষয়ে জনতাকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য লিবারাহন কমিশন উমা ভারতীর ভূমিকার জন্য তাঁকে অভিযুক্ত করেছিল।

প্রসঙ্গত, বিজেপি নেতারা রাম মন্দিরের ভূমি পূজনকে দলের একচেটিয়া ইভেন্ট হিসাবে প্রজেক্ট করার চেষ্টা করার বিষয়ে উমা ভারতী মঙ্গলবার বলেছিলেন যে 'ভগবান রাম কোনও একটি দলের সম্পত্তি নয় এবং সকলেরই'।

৬) সাধ্বী রীতাম্ভরা- রাম মন্দির আন্দোলনের প্রাক-বাবরি মসজিদ পর্বে সাধ্বী রীতাম্ভরা ছিলেন একজন অগ্নিদগ্ধ হিন্দুত্ববাদী নেত্রী। অযোধ্যার রাম জন্মভূমি প্রচারের উমা ভারতীর পরেই স্বীকৃত মহিলা মুখ হিসাবে উঠে এসেছিলেন সাধ্বী রীতাম্ভরা। সেইসময়ে তাঁর বক্তৃতার অডিও ক্যাসেটগুলি ব্যাপকভাবে বিক্রি হয়েছিল।


৭) কল্যান সিং- তৎকালীন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে, কল্যাণ সিং অযোধ্যা আন্দোলনের প্রাদেশিক নেতাস্বরূপ। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর যেদিন বাবরি মসজিদ ভেঙে দেওয়া হয়, তখন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ছিলেন কল্যাণ সিং। সেই মধ্যযুগীয় মসজিদের কাঠামোটির দিকে অগ্রসর যাওয়া করসেবকদের বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশ সরকারের হয়ে শক্তি প্রয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। 

পরবর্তীকালে তিনি শীর্ষস্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের অনুগ্রহ হারিয়েছিলেন এবং এমনকি নিজের পোশাকে বিদ্রোহ করেছিলেন। তবে ফের বিজেপিতে ফিরে এসে তিনি রাজ্যপালের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। 


৮) বিনয় কাটিয়ার- বিনয় কাটিয়ার ছিলেন ফায়ারব্র্যান্ড বজরং দলের নেতা। রামমন্দির নিয়ে প্রচার বাড়াতে ১৯৮৮ সালে বজরং দল একটা আলাদা করে নিজেক অস্তিত্ব লাভ করেছিল। দলের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন কাটিয়ার।

তাঁর রাজনৈতিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায় ১৯৯২ সালের পরে। তিনি বিজেপির সাধারণ সম্পাদক হন। তিনি রাজ্যসভা এবং লোকসভায় উভয়ের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ফইজাবাদ এবং অযোধ্যার মন্ত্রীর থেকেছেন। 

৯) প্রবীণ টোগাডিয়া- প্রবীণ টোগাডিয়া রাম মন্দির প্রচারের আর এক 'বিস্ফোরক' নেতা ছিলেন। বিভিন্ন আক্রমণাত্মক ভাষণে তিনি তাঁর হিন্দুত্বের একটা প্রতিমূর্তি তৈরি করেছিলেন। অশোক সিংহলের পরে তিনি ভিএইচপি-র লাগাম টেনে ধরেছিলেন। তবে বিজেপিতে আডবাণীর প্রভাব হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টোগাডিয়া নিজেকে সঙ্ঘ পরিবার-বহির্ভূত বলে মনে করেছিলেন।


১০) বিষ্ণু হরি ডালমিয়া- বিষ্ণু হরি ডালমিয়া ছিলেন এক শিল্পপতি, যাঁর হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল। অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের প্রচারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ভিএইচপি-তে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার অন্যতম সহ-অভিযুক্ত ছিলেন। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তিনি তাঁর দিল্লি বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.