কিছু ঐতিহাসিক চুম্বন, বদলে দিয়েছে এই বিশ্বকে


Odd বাংলা ডেস্ক: চুম্বন শুধু প্রেম-ভালোবাসার প্রকাশই নয়। এটা শত্রুতার প্রকাশও হতে পারে। এর সাক্ষী ইতিহাস। বিশেষ প্রেক্ষাপটে কিছু চুম্বনের ঘটনা ঐতিহাসিক হয়ে গেছে। আবার পর্দায় কোনো চুম্বন আইকনিক হয়ে যায়। এ রকমই বেশ কিছু স্মরণীয় চুম্বনের তালিকা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। দেখে নেওয়া যাক-

প্রথম নথিভুক্ত চুম্বন
চুম্বনের উৎপত্তি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে একটা বিবাদ রয়েই গেছে। এক দল মনে করেন, চুম্বন কোনো একটি জায়গায় প্রচলিত হয়। তার পর তা ‘‌ট্রেন্ড’‌ হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে গোটা দুনিয়ায়। অন্য দল মনে করেন, চুম্বন বরাবরই ছিল। দুনিয়ার সব জায়গায়, সব অঞ্চলে ছিল। তবে প্রথম এর উল্লেখ মেলে বেদে। খ্রিস্ট জন্মেরও ১৫০০ বছর আগে। একথা দাবি করেছেন টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভন ব্রায়ান্ট। মহাভারতেও এর উল্লেখ রয়েছে। বাৎস্যায়নের কামসূত্রে এই চুম্বন নিয়ে আস্ত পরিচ্ছেদই রয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে এই কামসূত্র লেখা হয়েছিল খ্রিস্ট জন্মের ৪০০ বছর আগে থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কোনো এক সময়ে। ভারতীয় সাহিত্য, মহাকাব্যেই চুম্বনের প্রথম উল্লেখ রয়েছে।

জুডাসের চুম্বন (‌প্রথম শতাব্দী)
‌ চুম্বন যে কেবল প্রেম-স্নেহের প্রকাশ করে তাই নয়। এর প্রমাণ জুডাসের চুম্বন। যিশুকে চুম্বন করেই তিনি চিনিয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বাসঘাতক জুডাস। যাতে সেনারা তাকে নিয়ে গিয়ে খুন করতে পারেন। সাহিত্যে জুডাসের সেই চুম্বনকে বলা হয় ‘‌মৃত্যুর চুম্বন’‌ বা ‌কিস অফ ডেথ। পরবর্তীকালে মাফিয়া, ভিলেনদের ঠাণ্ডা মাথার খুন দেখাতে এই ‘‌কিস অফ ডেথ’‌ অনুষঙ্গের ব্যবহার শুরু হয়। ‘‌গডফাদার ২’‌-তেও এমনটা দেখানো হয়েছে। আল পাচিনো ভাই ফ্রেডোকে দিয়েছিলেন সেই বিশ্বাসঘাতকতার পুরস্কার ‘‌কিস অফ ডেথ’‌।

ছবিতে প্রথম চুম্বন (‌১৮৯৬)
‌ প্রথম চুম্বনটা করেছিলেন মে আরইউন আর জন সি রাইস। একটি ছোট ছবি জন্য। ছবির নাম ছিল ‘‌মে আরউইন কিস’‌ বা ‘‌দ্য কিস’‌। সময়টা ১৮৯৬। নিউ জার্সির থমাস এডিসনস স্টুডিওতে গিয়ে ওই চুম্বনের দৃশ্যের শুট করেন। যদিও পর্দায় ওই চুমুর দৃশ্য দেখে দর্শকদের খুব একটি শিহরণ জাগেনি। রোমান্টিকও মনে হয়নি।

পর্দায় কৃষ্ণাঙ্গদের প্রথম চুমু (‌১৮৯৮)‌
সেন্ট সাটল এবং গার্টি ব্রাউন অভিনীত ‘‌সামথিং গুড–নিগ্রো কিস’‌ ছবিতে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গদের চুম্বন দেখানো হয়, ১৮৯৮ সালে। শিকাগোতে চুম্বন দৃশ্যের শুট করেছিলেন এক শ্বেতাঙ্গ। নাম উইলিয়াম সেলিগ। সিনেমার অধ্যাপক অ্যালিসন নাদিয়া ফিল্ডের মতে, ওই ছবির চুম্বন ছিল সত্যিই স্বতঃস্ফূর্ত। আনন্দদায়ক।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জয়ের দিন (‌১৯৪৫)
‌ ১৯৪৫ সালের ১৪ আগস্ট। জাপানকে পরাজিত করেছে মিত্রশক্তি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ। নার্স গ্রেটা জিমারের ম্যানহাটনের অফিসে রোগীদের উচ্ছ্বাস। অস্ট্রিয়ায় অভিবাসী গ্রেটা বুঝে পাচ্ছেন না কী করবেন। নার্সের পোশাকেই একছুটে চলে যান টাইমস স্কোয়্যার। সেখানে তখন বিজয়োৎসব চলছে। সকালে থেকেই মদ খাচ্ছিলেন নাবিক জর্জ মেনডোনসা। গ্রেটাকে অন্য এক নার্স বলে ভুল করেন। জয়ের আনন্দ প্রকাশ করতে তাকেই জাপটে ধরে চুমু খান। পিছনে তখন তার বান্ধবী। মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করেন আলফ্রেড আইসেনস্টায়েড এবং ভিক্টর জরগেনসেন। সেই ছবি এখন ইতিহাস। সেই নিয়েই বিতর্কও কম হয়নি। নারীবাদীরা সমালোচনা করেছেন। তাদের দাবি, গ্রেটার সম্মতি ছাড়াই জোর করে করা হয়েছিল চুম্বন। গ্রেটা নিজেও পরে একটি সাক্ষাৎকারে সেই কথাই বলেন।

কৃষ্ণাঙ্গ আর শ্বেতাঙ্গের চুম্বন (‌১৯৬৮)
‌ ইতিহাসে অন্যতম মাইলফলক বলে ধরা হয়। আমেরিকার একটি টেলভিশন শো ‘‌স্টার ট্রেক’‌-এ ছিল সেই দৃশ্য। উইলিয়াম শাটনার আর নিশেল নিকোল চুম্বন করছেন। টেলিব্রডকাস্টিং সংস্থা এনবিসি'র ভয় ছিল, সাদা চামড়ার আমেরিকানরা হয়তো বিষয়টি ভালো চোখে দেখবেন না। তাই ওই একই দৃশ্য দু’‌রকমভাবে শুট করা হয়েছিল। দ্বিতীয়টিতে চুম্বন রাখা হয়নি। কিন্তু শাটনার আর নিকোল চুম্বন ছাড়া টেকগুলো ইচ্ছেকৃত খারাপ করেন। ফলে বাধ্য হয়েই এনবিসি'কে ওই চুম্বনের দৃশ্যই সম্প্রচার করতে হয়।

‘‌সমাজতান্ত্রিক ভ্রাতৃত্বসুলভ’‌ চুম্বন (‌১৯৭৯)
‌ স্নায়ুযুদ্ধের সময় কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের প্রধানরা প্রায়ই একে অপরকে চুমু খেয়ে অভিবাদন জানাতেন। ঠোঁটে বা গালে। একে বলা হত ‘‌সোশালিস্ট ফ্রেটারনাল কিস’‌। সেই চুম্বনের একটি বিখ্যাত ছবি ধরা পড়েছে ফরাসি ফটোগ্রাফার রেগিস বোসুর ক্যামেরায় ১৯৭৯ সালে। সোভিয়েত ইউনিয়নের লিওনিল ব্রেজনেভ পূর্ব জার্মানির এরিখ হোনেকারের ঠোঁটে চুমু খাচ্ছেন। ইস্ট জার্মানিতে জার্মান ডেমোক্র‌্যাটিক রিপাবলিকের ৩০তম বার্ষিকী উদযাপনে গিয়ে এভাবেই হোনেকারকে অভিবাদন জানান ব্রেজনেভ। ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীর ভেঙে পড়ে। তখন পূর্ব জার্মানির দিকে দেওয়ালে এই ছবিটি এঁকেছিলেন রুশ শিল্পী দিমিত্র ভ্রুবেল। তিনি লিখেছিলেন, ‘হে ঈশ্বর, ‌এই ভয়ঙ্কর প্রেম সামলাতে সাহায্য কর আমায়!‌’‌
Blogger দ্বারা পরিচালিত.