জন্মদিনে ভদ্র: সেবছর মহালয়ায় ভোর হয়েছিল কায়স্থ ছেলের চণ্ডীপাঠে, আজ তা-ই বঙ্গ জীবনের অঙ্গ



Odd বাংলা ডেস্ক: মহালয়ার ভোরে আকাশবাণী ভবন থেকে সরাসরি চণ্ডীপাঠ করবেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র-সবকিছু যখন ঠিক হচ্ছে তখন কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে তাঁকে নিয়ে নানা কথা। কায়স্থের ছেলে হয়ে কিনা চন্ডীপাঠ করবে, সমাজ কি মেনে নেবে, লোকে তো ছিছিক্কার করবে। এত সমস্ত শুনে তিনি নিজেও আবেদন করেছিলেন কিন্তু পঙ্কজ কুমার মল্লিক এসব নিয়ে মোটেও বিচলিত নন, তিনি কেবল একটি কথাই বলেছিলেন যে, মহালয়ার সূর্যোদয় হবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চন্ডীপাঠ দিয়ে। মহালয়ার ভোর হয়েছিল কায়স্থ ছেলের চণ্ডীপাঠেই।

সালটা ১৯৩১, পঙ্কজ কুমার মল্লিকের জেদের কাছে হার মানলেন বীরেন্দ্র ভদ্র। চন্ডীপাঠ শুরু করতেই মোহিত হয়ে গেলেন দেবী বন্দনায়। তাঁর পাঠের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে 'বাজল তোমার আলোর বেণু', 'তব অচিন্ত্য রূপ জড়িত মহিমা', 'জাগো তুমি জাগো', 'বিমানে বিমানে'-এর মতো সমস্ত কালজয়ী গান। স্তোস্ত্র পাঠ করতে করতে চোখ দিয়ে, গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে তাঁ চোখের জল। বাকিরা বাকরুদ্ধ হয়ে শুনছেন সেই পাঠ। সেই সম্প্রচার শুনে সেযুগে তো বটেই আজও মানুষের গায়ে কাঁটা দেয়। পরের দিন সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, অমন হৃদয় ভোলানো চণ্ডীপাঠ কে করলেন? কেউ ভুলেও জানতে চাননি, যিনি পাঠ করলেন তিনি ব্রাহ্মণ না কায়স্থের সন্তান! ভাগ্যিস পঙ্কজ মল্লিকের জেদের কাছে হার মেনেছিলেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র! সকলের অলক্ষ্যে সেদিন তিনি সৃষ্টি করেছিলেন এক ইতিহাস। তাঁর আশীর্বাদে কালজয়ী হয়ে গিয়েছে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র-বাণী কুমার-পঙ্কজ মল্লিকের 'মহিষাসুরমর্দিনী'।

আরও পড়ুন- জানেন কি? ভারতে একসময়ে বিশ্বকর্মা পুজোর দিনটিকেই শ্রমিক দিবস হিসাবে পালন করা হত
সেই থেকে শুরু। তারপর ৮৯ বছর ধরে গঙ্গার বুক দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। বাঙালির জীবনযাত্রায় এসেছে আমুল পরিবর্তন।  কিন্তু মহালয়ার সকালে বাঙালি যেন আজও সেই প্রাচীনপন্থীই থেকে গিয়েছে। বাঙালির কাছে এ এমনই স্পর্শকাতর বিষয় যে তাঁরা মহানায়ক উত্তমকুমারকেও রেয়াত করেনি। ইন্দিরা গান্ধির জরুরি অবস্থার সময় উত্তম কুমার এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ওপর এই অনুষ্ঠানের দায়িত্ব এসে পড়েছিল। মহানায়কের বাড়িতে সেদিন নাকি ইঁট-পাটকেলও পড়েছিল। রাগে-অপমানে-অভিমানে আকাশবাণী ছেড়ে দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র, কারণ বেতার কর্তৃপক্ষের দুর্ব্যবহারে চরম আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। এহেন এক পরিস্থিতিতে সম্ভবত বোধোদয় হয়েছিল বেতার কর্মকর্তাদের। সসম্মানে তাঁরা আবার ফিরিয়ে আনেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রকে। পরে উত্তম কুমার নিজে তাঁর বাড়ি গিয়ে ক্ষমা চেয়ে এসেছিলেন তাঁর কাছে। যে বছর মহালয়ার ভোর হয়েছিল কায়স্থ ছেলের চণ্ডীপাঠে, তাই আজ হয়ে উঠেছে বঙ্গ জীবনের অঙ্গ।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.