জানেন কি জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আসলে একজন মাছ বিক্রেতা ?


 
Odd বাংলা ডেস্ক: সংসদ সদস্যদের ভোটে জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন ইয়োশিহিদে সুগা। গত সোমবারই জাপানে ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) অভ্যন্তরীণ ভোটে জয়ী হওয়ায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী হওয়া অনেকটাই নিশ্চিত ছিল ৭১ বছর বয়সী এ নেতার। গত বুধবার সংসদে নিম্নকক্ষের ভোটে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হওয়ায় শেষ বাধাটুকুও দূর হলো তার। শিনজো আবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুগা নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে তার পূর্বসূরির নীতিমালা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গত মাসে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করা আবে বুধবার সকালে মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠক করেন। শিনজো আবে বলেন, আট বছর ক্ষমতায় থেকে যা অর্জন করেছেন তাতে গর্বিত তিনি। বৈঠকের পর পর নিম্নকক্ষ ডায়েটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোটে সহজে জিতে যান সুগা। 
 
৪৬২ ভোটের মধ্যে ৩১৪টি গেছে তার পক্ষে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন ইয়োশিহিদে সুগা। সম্প্রতি শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন আবে। ২০১২ সালে শিনজো আবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন সুগা। আবের গোটা শাসনামলেই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব সামলেছেন। এসময় তার ক্ষমতাকে অনেকটা চিফ অব স্টাফ ও প্রেস সচিবের সমন্বয় বলা চলে। তবে ক্ষমতায় চূড়ায় পৌঁছানোর এ সুদীর্ঘ যাত্রাপথ মোটেও সুগম ছিল না ইয়োশিহিদে সুগার জন্য। জাপানের আকিতা অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় এক কৃষক পরিবারে জন্ম নিয়েছেন তিনি। 
 
 বাবা ছিলেন স্ট্রবেরি চাষি। হাইস্কুল পার করেই রাজধানী টোকিওতে পাড়ি জমান ইয়োশিহিদে সুগা। সেখানে পড়াশোনার খরচ জোগাতে কার্ডবোর্ড ফ্যাক্টরি ও মাছের বাজারে কাজ করেছেন তিনি। গ্রাজুয়েশন শেষে চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন সুগা, তবে সেখানে মন টেকেনি। বিশ্বকে বদলে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে পরে যোগ দেন রাজনীতিতে। আশির দশকের শেষ দিকে ইয়োকোহামার সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন ইয়োশিহিদে সুগা। সেসময় রাজনৈতিক যোগাযোগ বা অভিজ্ঞতা কোনোটাই খুব বেশি ছিল না তার। শুধু ছিল দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের মনোবল। স্ব-শরীরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা মুরু করেন তিনি। 
 
এভাবে দৈনিক ৩০০ বাড়ি করে মোট ৩০ হাজার বাড়ির দরজায় হাজির হয়েছিলেন সুগা। এলডিপির তথ্যমতে, ওই নির্বাচনী প্রচারণায় অন্তত ছয় জোড়া জুতা ক্ষয় হয়েছিল এ নেতার। প্রথম নির্বাচনে জেতার সেই দৃঢ় চেষ্টা আর পরিশ্রমের অভ্যাস আর কখনোই বদলায়নি ইয়োশিহিদে সুগার। প্রকাশ্যে না এসেও বহু আলোচিত চুক্তির কারিগর তিনি। হয়ে উঠেছেন জাপানের অন্যতম সফল রাজনৈতিক নেতা ও আদর্শ। একমাত্র সুগাই শিনজো আবের যোগ্য উত্তরসূরী হতে পারেন বলে মনে করছেন জাপানের রাজনীতিবিদরা। 
 
এদিকে বুধবার বিকেলেই নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করতে পারেন ইয়োশিহিদে সুগা। আবে সরকারের অনেক নেতাই তার মন্ত্রিসভায় থেকে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাপানে আমলাতান্ত্রিক সংস্কার, ডিজিটালাইজেশন, কৃষি ও পর্যটনে গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে নজর দিতে চেয়েছেন সুগা। এছাড়া জাপানের অর্থনীতি বিষয়ে শিনজো আবের ত্রিমাত্রিক কৌশল, যা আবেনোমিক্স নামে পরিচিত, সেটিও এগিয়ে নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.