নগ্ন শরীর, মুুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে- এভাবেই উত্তরপ্রদেশের গণধর্ষণের শিকার দলিত তরুণীকে উদ্ধার করেছিল তাঁর মা!


Odd বাংলা ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে গণধর্ষণ এবং নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর মঙ্গলবার দিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নির্যাতিতা তরুণী। গত ১৪ সেপ্টেম্বর যখন তাঁকে খোলা মাঠ থেকে উদ্ধার করে তখন তাঁর পরনে এক টা কাপড়ও ছিল না, আর তার মুখ থেকে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছিল। এরপর রাতারাতি পরিবারের অজান্তেই মেয়ের দেহ পুড়িয়ে দেয় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ, আর তার পরই একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় এমন নারকীয় ঘটনার কথা জানালেন নির্যাতিতার মা। 

তিনি আরও বলেন, মেয়েকে শেষবারের মতো দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তাঁরা, কিন্তু তাঁদেরকে না জানিয়েই, মেয়ের মৃত্যুরদিন রাতেই তাঁর দেহ জ্বালিয়ে দেয় পুলিশ। গত ১৫ দিন ধরে তাঁর মেয়ে এবং তাঁদের পরিবার যে কি করুণ অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে সেকথাই জানিয়েছেন নির্যাতিতার মা। 

গণধর্ষণের ঘটনা এমনই নারকীয় যে তা আপনাদের দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দিতে পারে। হাসরাথের তরুণীকে উদ্ধার করার পর তাঁর শরীরে একাধিক ফ্র্যাকচার পাওয়া গিয়েছে, মেরুদণ্ডে মারাত্মক আঘাত লাগার ফলে শরীর প্যারালাইসিস হয়ে যায়, জিহ্বার অর্ধেক অংশও কাটা অবস্থায় ছিল! একইভাবে রাজধানীতে চলন্ত বাসে প্যারামেডিকেল ছাত্রী জ্যোতি সিং-কেও গণধর্ষণ এবং পৈশাচিক অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছিল, যার ফলে একযোগে গর্জে উঠেছিল গোটা দেশ। 

হাসরাথের নির্যাতিতার মা জানান, 'আমরা মাঠে কাজ করছিলাম যখন ওরা ওকে টেনে নিয়ে যায়। আমি ঘাস কাটছিলাম এবং ও তা সংগ্রহ করতে চলে গিয়েছিল। এরপর আমি ফিরে তাকাতে ওকে আর দেখতে পাইনি, ওকে এদিক-ওদিক খুঁজে না পেয়ে আমি চিৎকার করতে শুরু করি, এব খানিক দুরে আমি ওর চপ্পলগুলি পাই এবং জমিতে টানা-হেঁচড়ার দাগ ছিল। সেই দাগ অনুসরণ করে আমি যখথন আমার মেয়েকে খুঁজে পেলাম তখন তার মুখ থেকে রক্ত ​​পড়ছে, পরনে কাপড় নেই... সে কথা বলতে পারছে না, তার জিভ ছিঁড়ে গিয়েছে। এরপর তিনি জানান, 'থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে তাদের স্থানীয় থানা থেকে আমাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়।  তিনি বলেছিলেন, 'আমরা প্রথমে হাথরাস এবং পরে আলীগড় গিয়েছিলাম; আমার মেয়ে কথা বলতে পারেনি তাই পুলিশ গণধর্ষণের মামলা দায়ের করেনি।'

তিনি আরও যোগ করেন যে, মঙ্গলবার রাতে যখন মেয়ের মৃতদেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, তখন তিনি আটকাতে গেলে পুলিশ তাঁকে লাঠি মারধর করে। পুলিশ তাঁদের ধাওয়া করে মারতে থাকে এবং সেই কারণে ভয় পেয়ে তিনি এবং বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা বাড়ির মধ্যে নিজেদের বন্দি করে ফেলেন। গোটা ঘটনায় যোগী রাজ্যের পুলিশের বিরুদ্ধে চরম অসহযোগীতার অভিযোগ এনেছেন নির্যাতিতার পরিবার। 

পরিবারের তরফে আরও অভিযোগ করা হয় যে, পুলিশ প্রথমে নির্যাতিতা আঘাতের বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেছিল। পুলিশ প্রথমে খুনের চেষ্টাক মামলাটি নথিভুক্ত করেছিল কিন্তু ঘটনার এক সপ্তাহ পরে যখন নির্যাতিতা কথা বলতে পারছিল তখনই তাঁর বিবৃতি দেওয়ার পরে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছিল। মঙ্গলবার এক প্রবীণ কর্মকর্তা বলেছিলেন যে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত নয়, বিষয়টি ফরেন্সিক তদন্তের পরই জানা যাবে। শুধু তাই নয়, নির্যাতিতার শরীরে এমন গুরুতর আঘাত থাকা সত্ত্বেও তাঁকে কেন বড় কোনও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল না, কেন সাতদিন ধরে তাঁকে জেনারেল ওয়ার্ডে ফেলে রাখা হল, সন্তানহারা মায়ের মুখে কেমল প্রশ্নই প্রশ্ন- যার উত্তর আজও অধরা!
Blogger দ্বারা পরিচালিত.