৫০০ বছর ধরে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে তেঁতুল গাছটি



Odd বাংলা ডেস্ক: ৫০০ বছর ধরে ঠাঁই দাড়িয়ে আছে একটি তেঁতুল গাছ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের পাঁচশ বছরের পুরানো একটি তেঁতুল গাছ এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে নাচোল উপজেলার বরেন্দ্র ভূমির শুড়লা গ্রামে অবস্থিত এ গাছটি। স্থানীয়দের জন্য শুধু ঐতিহ্যের নিদর্শনই নয় গাছটি, তাদের পরম যত্নে গাছে এখনো ফুল ফোটে, ফল ধরে। ৫০০ বছরের এই আদি গাছে আশ্রয় পেতে বাসা বাঁধে পাখি।

তেঁতুল জাতের বিবেচনায় দাবি করা যেতে পারে এটিই দেশের প্রাচীন তেঁতুল গাছ। স্থানীয়রা জানান, গাছটি ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলন ও সাঁওতাল বিদ্রোহের সাক্ষী। প্রতি বছর প্রজনন মৌসুমে অন্তত কয়েক’শ বক বাসা বাঁধে এ গাছে। ডিম পাড়ে ও বাচ্চা ফোটায়। ছানাগুলো বড় হয়ে এক সময় উড়ে চলে যায়। এভাবেই চলে এখানকার বকের জীবনচক্র। এ গ্রামের কেউ বক শিকার করে না। পুরো প্রজননকাল নিরাপদে কাটায় বকগুলো। প্রাচীন তেঁতুল গাছটি দেখেতে প্রায়ই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসে শুড়লা গ্রামে।

এলাকার প্রবীণ আদিবাসীরা জানান, জমিদার কুঞ্জু মোহন মৈত্রের কাচারি ও খামারবাড়ি ছিল এখানে। আর তেঁতুল গাছের নিচে ছিল বিরাট কালী মন্দির। কালী মন্দিরে বরেন্দ্র অঞ্চলসহ দেশের দূরদূরান্ত থেকে আদিবাসীরা আসতেন পূজা-অর্চনা করতে। জমিদারি উচ্ছেদের পর তেঁতুল গাছসহ কালী মন্দির হিন্দু জনসাধারণের দেবস্থান হিসেবে এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। সুরলা মৌজার সাবেক ৪৬৩ ও হাল ৫০২ দাগের ৮১ শতক জমি এই দেবস্থানের অন্তর্ভুক্ত। 

তবে ১৯৮১ সালে তত্কালীন মহকুমা প্রশাসন থেকে এলাকার জেকের আলী ও মজিবুর নামে দুই ব্যক্তিকে লিজ প্রদান করা হয়। ১৯৯৪ সালে সুরলা গ্রামের বিমল কুমার কুণ্ডু এই লিজের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সম্প্রতি প্রশাসন লিজটি বাতিল করে এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাছটির পাশে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়; যাতে লেখা রয়েছে ‘তেঁতুল গাছটি অতি প্রাচীন’। গাছটি একনজর দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে লোকজন প্রায়ই আসে সুরলা গ্রামে।

তেঁতুল পাছটির পাশে জেলা প্রশাসনের টানানো একটি সাইন বোর্ডে লেখা রয়েছে- বিশেষজ্ঞরা এ গাছের বয়স ‘কমপক্ষে ৫০০ বছর’ বলে মত দিয়েছেন। গাছটি  ‘ভৌতিক, জৈবিক, সামাজিক ও পরিবেশগত দিক থেকে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ এবং ‘অতিকায় প্রচীন’ বৃক্ষ হিসেবে সংরক্ষিত উল্লেখ করে গাছ এবং পাখির বাসার কোনো ক্ষতি না করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে বোর্ডে। অন্যথায় বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের সতর্কতাও জুড়ে দেয়া হয়েছে।



নেজামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল হক জানান, ২০০৩ সালের দিকে উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তেঁতুল গাছটি পরীক্ষা করান চাঁপাইনবাবগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক নূরুল হক। সে সময় বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে গাছটির বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি বলে নিশ্চিত করেন। তারপর থেকেই গাছটিকে প্রাচীনবৃক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে এর দেখভালের দায়িত্ব নেয় প্রশাসন। এছাড়াও গাছটির যাতে কোনো ক্ষতিসাধন করা না হয় সেজন্য জনসচেতনতায় গাছে একটি বোর্ড দেয়া হয়।


তিনি বলেন, প্রাচীন এ গাছ শুধু আমাদের এলাকার গর্বই নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্যও। শুড়লা গ্রামে ওই গাছের পাশে একটি বাড়িতে স্বামী ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন ৫৫ বছর বয়সী কল্পনা প্রামাণিক। কল্পনা বলেন, প্রায় ৩৫ বছর আগে পাশের আহুড়া গ্রাম থেকে বিয়ে করে এ গ্রামে আসেন তিনি। তারপর থেকেই তেঁতুল গাছটির দেখভাল করে আসছেন; নিজের ঘর-বাড়ির মতই পরম মমতায় প্রতিদিন গাছতলা পরিষ্কার করেন তিনি।

প্রায় ৫০০ বছর সময় বয়ে গেলেও শুড়লা গ্রামের ৭০ বছরের কেষ্টধর বর্মণের স্মৃতিতে তেঁতুল গাছটি যেন ঠিক আগের মতোই রয়েছে। তিনি বলেন, বাপ-ঠাকুরদারাও গাছটি নিয়ে যেমন গল্প করতেন, গাছটি এখনো তেমনই আছে। এই তেঁতুল গাছটি আমাদের গ্রামের গর্ব। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন গাছটি দেখতে এখানে আসে। এই গাছের জন্যই আজ দেশের মানুষ এ গ্রামকে আজ চেনে।

স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সেভ দ্য নেচার’র চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্যতম সমন্বয়ক ফয়সাল মাহমুদ বলেন, একটি গাছ শুধু অক্সিজেনই দেয় তা নয়, তাতে পাখিসহ নানা কিটপতঙ্গ বসবাস করে। প্রাণীকূলের বাস্তুসংস্থান তৈরি হয়। যা পরিবেশে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সে কারণে এ ধরনের সব প্রাচীন বৃক্ষ রক্ষা করা খুবই জরুরি।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.