ইসরায়েলে তরুণদের শুক্রাণু বিক্রির হিড়িক
Odd বাংলা ডেস্ক: করোনাভাইরাসের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেতে নানা দেশে করা হয় লকডাউন। লকডাউন-স্বাস্থ্যবিধিসহ নানা নিয়ম প্রণয়ন করায় বিশ্বজুড়ে আর্থিক সংকটের ধাক্কা লাগে। এতে ছাঁটাই করা কর্মীদের। অনেককে পাঠানো হয় বাধ্যতামূলক বিনা বেতনের ছুটিতে। সেই আর্থিক সংকটের ধাক্কা লেগেছে ইসরায়েলে। সেখানকার নানা পেশার তরুণরা আর্থিক সংকট দূর করতে সিমেন বিক্রি শুরু করেছে। ফলে হাসপাতালগুলোতে সিমেন বিক্রির হিড়িক পড়েছে।
ইসরায়েলের কয়েকটি সরকারি হাসপাতাল সূত্রের খবর, আগের তুলনায় ৩০০ শতাংশ সিমেন বিক্রির হার বেড়েছে। একজন সিমেন ‘দাতা’ প্রতিমাসে ৪ হাজার শেকেল-এর সিমেন বিক্রি করতে পারে।
সিমেন ‘দাতাদের’ অধিকাংশই পেশায় শিক্ষার্থী ও সামরিক বাহিনীর সদস্য। এরা করোনাকালে সৃষ্ট আর্থিক জটিলতায় পড়ে চাকরি হারিয়েছেন। অনেকে বেতন ছাড়া ছুটিতে রয়েছে। করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে পড়ে ইসরাইলের বেকারত্বের হার বেড়ে ২১ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা সংখ্যায় আট লাখ ৫৫ হাজারের বেশি।
ইসরাইলের সরকারি ও বেসরকারি স্পার্ম ব্যাংকগুলোতে একবার সিমেন দিলে দেড় হাজার শেকেল পাওয়া যায়। গত কয়েক সপ্তাহে সিমেন ‘দাতার’ হার ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
ইসরায়েলের বাসিন্দা ২৫ বছর বয়সী অ্যালন। তিনি জানান, করোনাকালে চাকরি হারিয়েছে। ওই চাকরিতে প্রায় এক লাখ শেকেল বেতন পেতেন তিনি। তাকে জোরপূর্বক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় পরিবারসহ বাসা ছাড়তে হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আয়ের নতুন উৎস খুঁজতে গিয়ে স্থানীয় রামবাম মেডিকেল সেন্টারের একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পান। সেখানে স্পার্ম ব্যাংকের জন্য ডোনার চাওয়া হয়েছিল।
অ্যালেন বলেন, এটি অর্থ আয়ের ভালো একটি সুযোগ। মাত্র কয়েক মিনিটে কোনো পরিশ্রম ছাড়াই আয় করতে পারি। মাসে তিন হাজার শেকেল (৮৭৯ মার্কিন ডলার) আয় করা যায়। বেকারত্ব অবস্থায় এটি অনেক ভালো আয়। আমার পরিচিত অনেক তরুণ রয়েছে যারা বেসরকারি স্পার্ম ব্যাংকে, হাসপাতালে সিমেনে বিক্রি করছে। এতে করোনাকালে আর্থিক সংকটে তারা টিকে আছে।
২৬ বছর বয়সী তেল আবিবের এক শিক্ষার্থী বলেন, একটি বেসরকারি স্পার্ম ব্যাংকে কয়েকবার স্পার্ম দিয়েছি। এতে পাঁচ হাজার শেকেল (এক হাজার ৪০২ ডলার) আয় করেছেন। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক লাখ ১৯ হাজার টাকা।
ওই যুবক বলেন, কখনো স্পার্ম ব্যাংকের কথা শুনিনি। তবে এক বন্ধুর কাছে শুনে সিমেন ‘ডোনেট’ করি। এটি ভালো আয়। প্রতিবার ‘ডোনেট’ করে এক হাজার থেকে দেড় হাজার শেকেল অর্থ পাই। যা যেকোনো কিছু থেকে ভালো আয়। এ অর্থে বাসা ভাড়া পরিশোধসহ নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছি।
বেসরকারি স্পার্ম ব্যাংকগুলো একবার ডোনেট করলে দেড় হাজার শেকল (৪৪০ ডলার) দেয়। এছাড়া শিক্ষাগত যোগ্যতা, সামরিক অভিজ্ঞতা ও বাবা-মায়ের পরিচিতির ওপর অর্থ প্রাপ্তির পরিমাণ নির্ভরও করে।
সংবাদ মাধ্যমের খবর, স্পার্ম গ্রহীতারা ব্যয়বহুল জেনেটিক পরীক্ষা ও ভালো মানের স্পার্মের জন্য সিমেন সংগ্রহকারী ব্যাংকগুলোকে প্রচুর অর্থ দেয়। এতে স্পার্ম ব্যাংকগুলো মোটা অংকের অর্থ আয় করে।
এদিকে, সরকারি হাসপাতালে এক জন ডোনার সপ্তাহে দুই বার স্পার্ম ডোনেট করতে পারেন। প্রতিবার ডোনেট করায় ৬০০ শেকেল দেয়া হয়। মাসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ হাজার ৮০০ শেকেল। সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, এ আয় থেকে সরকারকে কর দিতে হয় না।
মহামারির শুরুতে ইসরায়েলে লকডাউন শুরু হয়। সিমেন থেকে করোনা ছড়ানোর শঙ্কায় ডোনেশন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়। তবে লকডাউন উঠার পরই বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ডোনেশনের হার ১৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে দাঁড়ায়। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১০০ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০০ শতাংশে দাঁড়ায়।
ইসরায়েলের চিকিৎসক ও স্পার্ম ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ওফের ফেইনরো বলেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে স্পার্ম বিক্রি খুব ভালো সুযোগ। ডোনারের সংখ্যা বাড়ায় বেসরকারি স্পার্ম ব্যাংকের মতো আমরাও গ্রাহককে পছন্দের অনেক সুযোগ দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য সিমেন দাতাকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করা। এ সেবা নিশ্চিত করতে ডোনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে চাই আমরা।
ফেইনরোর পর্যবেক্ষণে আর্থিক সংকট মেটাতে স্পার্ম ডোনারের সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া ডোনার চেয়ে বিজ্ঞাপন ইচ্ছুকদের সঠিক জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছে।
গত মার্চে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন চিকিৎসাকে অপ্রয়োজনীয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে কার্যক্রমটি বন্ধ করে মন্ত্রণালয়টি। এপ্রিলের শেষ দিকে পুনরায় এ কার্যক্রম শুরু হয়।
ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন কি?
ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন হলো একটি প্রজনন চিকিৎসা। যেখানে ভ্রূণ তৈরির জন্য শুক্রাণু ও ডিম্বাণুকে একটি পরীক্ষাগারে মিলিত করা হয়। পরে একটি আইভিএফ শিশুকে গর্ভে ধারণ করতে সার্ভিক্সের মাধ্যমে সেটিকে জরায়ুতে স্থাপন করা হয়। আইভিএফ চিকিৎসা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা প্রজনন চিকিৎসা।
২০১৭ সালে ইসরাইলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক জরিপ অনুযায়ী, দেশটিতে জন্ম নেয়া পাঁচ শতাংশ শিশু আইভিএফ চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছে।
Post a Comment