নিজের স্তন ঢাকতেও ব্রাহ্মণদের দিতে হত কর, এই ভারতেই ছিল অভিশপ্ত আইন



Odd বাংলা ডেস্ক: আজ থেকে প্রায় দুশ’ বছর আগে ভারতের কিছু অঙ্গরাজ্যে হিন্দুদের মধ্যে এক প্রকার ট্যাক্স বা কর প্রচলিত ছিলো। করটির নাম ‘স্তন কর' বা 'Breast Tax’. এর আরেকটি নাম মুলাক্কারাম (Mulakkaram)। তখন নিয়ম ছিলো ব্রাহ্মণ ব্যতিত অন্য কোনো হিন্দু নারী তার স্তনকে ঢেকে রাখতে পারবে না। শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ শ্রেণীর হিন্দু নারীরা তাদের স্তনকে এক টুকরো সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে পারতো, বাকি হিন্দু শ্রেণীর নারীদেরকে প্রকাশ্যে স্তন উন্মুক্ত করে রাখতে হতো। তবে যদি কোনো নারী তার স্তনকে কাপড় দ্বারা আবৃত করতে চাইতো, তবে তাকে স্তনের সাইজের উপর নির্ভর করে ট্যাক্স বা কর দিতে হতো। এই নির্মম করকেই বলা হয় স্তন কর বা ব্রেস্ট ট্যাক্স। ১৮০৩ সালে নাঙ্গেলী (Nangeli) নামক এক নিম্ন বর্ণের ভারতীয় হিন্দু নারী তার স্তনকে আবৃত করে রাখে। যখন গ্রামের ট্যাক্স কালেক্টর তার থেকে স্তন কর চাইতে আসে, তখন নালেঙ্গী তা দিতে অস্বীকার করে এবং নিজের দুটি স্তনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে কলাপাতা দিয়ে মুড়ে ট্যাক্স কালেক্টরকে দিয়ে দেয়। তখন কাটা স্তন দেখে ট্যাক্স কালেক্টর অবাক হয়ে যায়। স্তন কেটে ফেলার কিছুক্ষণ পরেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য নাঙ্গেলীর মৃত্যু হয়। স্ত্রীর মৃত্যু শোকে নালেঙ্গীর স্বামীও সাথে সাথে আত্মহত্যা করে। এই ঘটনার পর থেকেই স্তন কর রোহিত হয়।



তবে স্তন কর রোহিত হলেও দক্ষিণ ভারতে নারীদের স্তন আবৃত করার জন্য বহু সংগ্রাম করতে হয়েছে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা পর্যন্ত করতে হয়েছে তাদের। ১৯ শতাব্দীর মাঝে এসে যখন কিছু হিন্দু নারী তাদের শরীরের উপরের অংশ আবৃত করার অধিকার দাবি করে, তখন হিন্দু পুরোহিতরা স্পষ্ট করে বলে দেয়- নীচু বর্ণের নারীদের শরীরের উপরের অংশ আবৃত করা ধর্ম-বিরোধী। বিষয়টি নিয়ে ১৮৫৯ সালে দক্ষিণ ভারতে একটি দাঙ্গা সংগঠিত হয়। এই দাঙ্গার উদ্দেশ্য ছিলো হিন্দু নারীদের শরীরের উপরের অংশ আবৃত করার অধিকার আদায় করা। এই দাঙ্গা ‘কাপড়ের’ দাঙ্গা হিসেবে পরিচিত।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.