পাকিস্তানে দুর্নীতির সঙ্গে সেনা কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে



Odd বাংলা ডেস্ক: চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের (সিপিইসি) চেয়ারম্যান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত থ্রি স্টার জেনারেল অসীম সালেম বাজওয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জেনারেল অসীম বাজওয়াকে নিয়ে অনুসন্ধানী সংবাদ পোর্টাল ‘ফ্যাক্ট ফোকাস’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, অসীম সালেম বাজওয়ার ভাই, স্ত্রী ও দুই ছেলের চারটি দেশে ৯৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের আওতায় পিৎজা ফ্র্যাঞ্চাইজিসহ ১৩৩টি রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ৩৯.৯ মিলিয়ন ডলার। গণমাধ্যমে দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন জেনারেল অসীম বাজওয়া। তবে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর পদ থেকে পদত্যাগ করলেও সিপিইসি'র চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েন তিনি। 

 গত দুই দশক ধরে পাকিস্তানের সিনিয়র মিলিটারি অফিসারদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের যে অভিযোগ রয়েছে অসীম বাজওয়ার দুর্নীতির খবর সেটাকে আরো স্পষ্ট করেছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর পদ থেকে বাজওয়ার ইস্তফা কেবল তাঁর নিজের নৈতিক অবস্থানকেই দুর্বল করে না বরং সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে আভিযোগ সেটাকে আরো দৃড় করে। নির্মাণাধীন সিপিইসি প্রকল্পে এরই মধ্যে কয়েক মিলিয়ন ডলারের আর্থিক অপব্যবহারের অভিযোগ উন্মোচিত হযেছে। এমতাবস্থায় দুর্নীতি ও আর্থিক কেলেঙ্কারীতে অভিযুক্ত একজন ব্যক্তির নির্মাণাধীন প্রকল্পে নেতৃত্বদানের বিষয়টি বোধগম্য নয়। পাকিস্তানে সেনাবাহিনীকে কেন্দ্র করে যখন কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তখন সাধারণ জ্ঞান দিয়ে আসলে সেটা ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয় না। গত মাসে ফ্যাক্টস ফোকাসে বাজওয়ার দুর্নীতি নিয়ে বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও এতদিন পর্যন্ত এটি পাকিস্তানের মূলধারার গণমাধ্যমের আড়ালে রয়ে গেছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর পদ থেকে ইস্তফা ও নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগের আত্মপক্ষ সমর্থন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাজওয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন মূলধারার গণমাধ্যমে সেটাও কাটছাঁট করে প্রকাশ করা হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, মূলত তদন্ত এড়ানোর জন্য এবং জনগণের চোখ ফাঁকি দিতে বাজওয়া গণমাধ্যমে এমন ঘোষণা দিয়েছেন। 

তিনি যতদিন কোনো পদের দায়িত্বে থাকবেন ততদিন তিনি ও তার পরিবারের অসৎ ব্যবসা চলবে। তবুও প্রাপ্তি এটাই যে, সেনাবাহিনীর আধিপত্যে থাকা দেশটিতে একজন অসীম ক্ষমতাধর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল দুর্নীতির অভিযোগ খণ্ডনের জন্য ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। পাকিস্তানে সেনাবাহিনীকে জবাবদিহি করতে ব্যর্থতার কারণ দেশটি ইতিহাসের অর্ধেক সময় সামরিক শাসনের অধীনে ছিল এবং বাকি অর্ধেক সময় সেনা সমর্থিত বেসামরিক সরকার দেশটির ক্ষমতায় ছিল। পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর নিজস্ব ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য এখন প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। যা চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর প্রকল্পের প্রায় দ্বিগুণ। সিপিইসি প্রকল্পে চিন ৬২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। যা বিদেশে চিনের এখন পর্যন্ত বৃহত্তম বিনিয়োগ। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজওয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ চিন-পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক ও ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে জটিলতা তৈরি করতে পারে। যদিও প্রাথমিকভাবে এটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ একটি ইস্যু, কিন্তু সিপিসিই প্রকল্পের প্রধানকে যখন এই ধরনের দুর্নীতির জন্য অভিযুক্ত করা হয়, তখন এটি দুই দেশের দৈত্যাকার প্রকল্পগুলোর জন্য একটি বড় সমস্যা। বাজওয়ার দুর্নীতির ঘটনাটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও তাতে চিনের হস্তক্ষেপের সুযোগ রয়েছে।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.