গরুর বাট থেকে কি সত্যিই সাপ দুধ খায়?
Odd বাংলা ডেস্ক: গোয়ালা সকাল বেলায় গেলেন গরুর দুধ দোয়াতে। অতঃপর তিনি দেখলেন, গরুর বাট শুকনো। তিনি ভাবলেন নিশ্চয়ই সাপে দুধ খেয়ে গেছে! প্রমাণ হিসেবে তিনি গরুর পেছনের পায়ে সাপের খোসা দেখেন। এছাড়াও গরুর বাটের কাছে ফুসকুড়ির মতো দাগকে সাপের দাঁতের দাগ বলে মনে করলেন।
এখন প্রশ্নে হলো, সত্যিই কি সাপ গরুর বাট থেকে দুধ খায়? চলুন তবে এই ঘটনাটি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা যাক। এখানে রহস্য দুইটি- ১. দাগ রহস্য আর ২. দুধ পান করার রহস্য।
প্রথমত, সাপ যখন বালি বা ভেজা মাটির উপর দিয়ে চলে, তখন সেখানে তার খোসার ছাপ পড়ে। অথচ সাপুড়ের হাতের উপর যখন সাপ থাকে তখন কিন্তু তাদের হাতে সাপের খোসার চিহ্ন দেখা যায় না। তাহলে লোমওয়ালা গরুর পায়ের চামড়াতে সে দাগ কি করে আসবে? এতো নিতান্তই কল্পনা। পা জড়িয়ে ধরলেও দুধ যে খেয়েছে তার প্রমাণ কি? বাটের দাগ? দুধ যখন চুষেই খাবে তাহলে বাট কামড়ে ধরার দরকারই বা কি? সাপ তার খাদ্য ব্যাঙ খেতে গেলেও তাকে দাঁত দিয়ে কামড় দেয় না।
তাছাড়া সাপের দাঁতের কথাই ধরেন। সাপের দাঁত এমন যে, শুধুমাত্র ছোবল মারলেই দাঁতের দাগ পড়বে। মুখ ঠেকালে বা জিহ্বা দিয়ে খেলে দাঁতের দাগ পড়ে না। সুতরাং বাটে ছোবল খেলে গরু বাঁচার কথা না। তাই বাটের দাগ সাপের দাঁতের দাগ না। তাহলে এবার ওই দাগ কিসের সেই উত্তর জেনে নিন। দুধ দোয়ানোর পরে নিয়ম হলো, জল দিয়ে বাট ধুয়ে তাতে তেল মালিশ করে দেয়া। এতে নোংরা গোয়ালে অবস্থিত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া বাটের ক্ষতি করতে পারে না।
তবে বেশিরভাগ গোয়ালারাই এই নিয়ম মানে না। তার উপর গোয়াল ঘর থাকে অনেক অপরিষ্কার। তাই বাটের কাছাকাছি ব্যাসিলাস বা মাইক্রোব্যাকটিরিয়াম জাতীয় ব্যাকটেরিয়া এবং সেই সঙ্গে কেন্ডিডা বা এপিডার্মোফাইটেন জাতীয় ছত্রাক বাসা বাঁধে। এর থেকে বাটের কাছের নরম চামড়ায় বিভিন্ন চর্মরোগ হয়। চামড়ায় ছোটছোট ফুসকুড়ি দানা বা ছিদ্র দেখা যায়। এগুলোকে মানুষ সাপের দাঁতের দাগ বলে ভুল করে। এতো গেল দাগ রহস্য।
দ্বিতীয়ত, তরল পদার্থ চুষে বা চেটে খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা সাপের শরীরে কি আদৌ আছে? সাপের জিহ্বা কাঠির মতো লম্বা এবং জিভের সামনের অংশটা দ্বিখণ্ডিত করে চেরা। সুতরাং চেটে খাওয়ার জন্য সাপের জিহ্বা উপযোগী নয়। আপনি নিজেই চিন্তা করুন, আপনার জিহ্বা সামনের অংশে দুই টুকরো হয়ে গেলে কি কিছু চেটে খেতে পারবেন?
কোনো তরল জিনিস চুষে খেতে হলে মুখের এবং বুকের ভেতরকার চাপ হঠাৎই অনেকটা কমিয়ে ফেলতে হয়। এই চাপ কমে যাওয়ার ফলে বাইরের তরল বায়ুমণ্ডলের চাপে গলার ভেতর চলে আসে। ড্রপারে চাপ দিয়ে যেভাবে শিশি থেকে ওষুধ ভরা হয়, ফাউন্টেন পেনে কালি ভরার মতো উপরে চাপ দিয়ে। মানুষের বেলায় বুক ও পেটের মাঝে মধ্যচ্ছদা নামে যে পর্দা থাকে সেটি হঠাৎই নীচের দিকে নেমে গিয়ে বুকের ভেতর চাপকে অনেকটা কমিয়ে ফেলে। এর ফলে মানুষ স্ট্র দিয়ে চুষে তরল পান করতে।
তবে সাপের কোনো মধ্যচ্ছদা নেই। তাই সাপের ক্ষেত্রে বুকের ভেতর চাপ হঠাৎই কমিয়ে ফেলা সম্ভব না। তাই কোনো তরল চুষে খাওয়াও তাদের পক্ষে সম্ভব না। তাহলে দুধ কলা দিয়ে সাপ পালার প্রবাদ এলো কি করে? এর কারণ আগে গরুর গোয়ালে অনেক খড়ের গাদা থাকতো। ইঁদুর, ব্যাঙ ও টিকটিকি জাতীয় প্রাণী খাবার পাওয়ার লোভে এবং খড়ের গাদায় গোবরে গা গরম করার লোভে গোয়ালে ঢুকে পড়তো। এদের আবার শিকার বানাতে সাপ যেতো গোয়াল ঘরে।
ধারণা করা হয়, ইঁদুর ধরার সময় গরুর পায়ের ক্ষুরের আঘাত থেকে বাঁচার জন্য সাপ আগে থেকেই গরুর পেছনের পা দুটি জড়িয়ে ধরে। আর অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরার পরে গরুর পা অবশ হয়ে গেলে তখনই সাপ পা ছেড়ে শিকার ধরতে যায়। তবে এই পা জড়ানোর চিহ্ন দেখে রাখালরা ধারণা করে, সাপ দুধ খেতে পা জড়িয়ে ধরেছে।
অন্যদিকে যদি কোনো গরুর সঙ্গে এই ঘটনাটি ঘটত তবে পরদিন সে দুধ দেয়াও বন্ধ করে দেয়। এর থেকে গোয়ালাদের ধারণা জন্মায়, দুধ সাপের এত প্রিয় যে সব দুধ সাপ খেয়ে ফেলেছে। এই বিষয়টিকে প্রতিবর্ত বলে। প্রতিবর্ত হলো জীবের (উদ্ভিদ ও প্রাণী) একধরনের ব্যবহার যা তার নিজের অজান্তেই ঘটে যায়। যেমন আপনার চোখে হঠাৎ আলো পড়লো আর আপনি চোখ বন্ধ করে ফেললেন। অথবা ভয় পেয়ে গলা শুকিয়ে গেল কিংবা হাত-পা ঘেমে গেল। গরুও তেমনই প্রকিবর্তের কারণে গরুও দুধ দেয়া বন্ধ করে দেয়।
Post a Comment