একজন নারীর তর্পণের অধিকার আছে? কী বলছে শাস্ত্র?


Odd বাংলা ডেস্ক: আমরা জানি শাস্ত্র তৈরি হয়েছে কাল ও স্থানের প্রয়োজনের নিরিখে। এই প্রয়োজন যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক, প্রাকৃতিক, তেমনই রাজনৈতিক বলা যেতে পারে।
মহাভারতেও মেয়েদের তর্পণের নিদর্শন আছে। মহাভারতে স্ত্রী পর্বে কৌরব রমণীদের তর্পণ করার বিশেষ উল্লেখ আছে।
বৈদিক যুগে মেয়েদের উপরে এত কড়াকড়ি ছিল না। তা ছাড়া, স্মৃতি যুগ থেকেই ধীরে ধীরে এই ব্যবস্থা বদলেছে। বদলেছে মেয়েদের প্রতি সামাজিক আচরণ। কালক্রমে শাস্ত্র যত কড়া হয়েছে, সে সঙ্গেই মেয়েরা হারিয়েছে একে একে সামাজিক অধিকার।
আর এই তর্পণ নিয়েই চলছে নানা বিতর্ক। আসলে তর্পণ কথাটি এসেছে ‘তৃপ’ আর তৃপ কথার অর্থ হল সন্তুষ্ট করা। পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তির জন্য জল নিবেদন করা হয়, একেই তর্পণ করা বলে। যার পিতা জীবিত আছেন তর্পণ তারা করতে পারবেন না। কারণ তর্পণ করা বলতে বোঝায় মৃত পূর্বপুরুষগণকে জলদান করা বা জলের দ্বারা কৃত পিতৃপুরুষ ও দেবতাদের তৃপ্তিবিধায়ক অনুষ্ঠান। এর অপর নাম পিতৃযজ্ঞ। পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতামহ, প্রমাতামহ, বৃদ্ধপ্রমাতামহ, মাতা, পিতামহী, প্রপিতামহী, মাতামহী, প্রমাতামহী ও বৃদ্ধপ্রমাতামহী এবং ত্রিভুবনের উদ্দেশ্যে জল দেওয়া হয়। পিতৃপক্ষের সময় তিলতর্পণ অনুষ্ঠিত হয় অর্থাৎ তিল-মেশানো জলে তর্পণ হয়। তর্পণ, শাস্ত্রমতে, নিত্যকর্তব্য।
তবে আজকের ব্যস্ত যুগে রোজ বাপ-ঠাকুরদাদের স্মরণ করা সম্ভব হয় না বলে লোকে পিতৃপক্ষে এবং বিশেষ করে, সর্বপিতৃ অমাবস্যায় যে দিনটিকে আমরা ‘মহালয়া’ বলে থাকি।
মহালয়ার দিনে প্রথমে দেব তর্পণ, তারপর মনুষ্য তর্পণ, ঋষি তর্পণ, দিব্য তর্পণ, যম তর্পণ তারপর পিতৃ তর্পণ করা হয়। স্বর্গের পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণের মাধ্যমে জলদান করেই পিতৃপুরুষের অবসান হয় এবং দেবীপক্ষের সূচনা হয়।
তিল তর্পণ পনেরো দিনের জন্য। তর্পণ শুরু হয় কৃষ্ণা প্রতিপদ তিথি থেকে। শেষ হয় মহালয়া অমাবস্যায়। যিনি পনেরো দিন তর্পণ করতে অসমর্থ তিনি ষষ্ঠী তিথি থেকে অমাবস্যায় করেন। এই রীতিতে যাদের অসুবিধে তারা অষ্টমী থেকে অমাবস্যা মোট আটদিন ধার্য। সেইভাবে একাদশী তিথি থেকে অমাবস্যা মোট পাঁচদিন তর্পণ করা যায়। আর একেবারেই অসমর্থ ব্যক্তির পক্ষে শুধুমাত্র একদিন অর্থাৎ অমাবস্যার দিন তর্পণ পুত্রের কর্তব্য।



বছরের 12 মাসে 24টি পক্ষ। শাস্ত্র বলছে, তারমধ্যে 2টি পক্ষ বিশেষ তাৎপর্য্যপূর্ণ। প্রথমটি পিতৃপক্ষ ও দ্বিতীয়টি দেবীপক্ষ। পিতৃপুরুষের কাছে আমরা ঋণী। তাই তাঁদের জল নিবেদনের জন্য একটি বিশেষ ক্ষণের প্রয়োজন। সেই বিশেষ ক্ষণটি হল মহালয়া। এই দিন পিতৃপুরুষের উদ্দেশে তর্পণ করা হয়। তাঁদের আত্মাকে তৃপ্ত করার জন্য তিল, জল, দান করা হয়।
তবে ধর্মশাস্ত্র সংখ্যায় অনেক। সব শাস্ত্রেই মতে একই নিয়ম নয়। বর্তমানে প্রচলিত শাস্ত্রের প্রবীণ পণ্ডিত মনে করেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়মকানুন মনুস্মৃতিতে বলা নিয়মানুসারেই মেনে চলা হয়। এই নিয়ম অনুসারে বিবাহিতা মহিলা স্বামীর তর্পণের সঙ্গী হতে পারেন মাত্র। এর বাইরে মেয়েদের তর্পণের কথা কোথাও উল্লেখ নেই। যাঁরা করেন, তাঁরা নিয়ম না মেনে করেন। তবে কি শাস্ত্রের বিধি ভেঙেই মেয়েরা তর্পণে যোগ দেন আজকাল।
প্রিয়জনেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর ইচ্ছেটুকুও হয়ে দাঁড়িয়েছে বিতর্কের বিষয়। অনেকেই আবার বলেন যে শাস্ত্রে কোথাও লেখা নেই যে মেয়েরা তর্পণ করতে পারবে না। শ্রাদ্ধে যেমন শ্রদ্ধা জানানো হয়, তর্পণও তা-ই। মেয়েরা শ্রাদ্ধ করতে পারলে তর্পণ করবে না কেন? আমার বক্তব্য শাস্ত্রের নামে যখন-তখন নিয়ম ভাঙা আর গড়া হচ্ছে। সেই ভাঙা গড়ার মাঝে এখনও অপ্রাসঙ্গিক থেকে যায় মেয়েদের এই সামান্য অধিকারের কথাও। কিন্তু কেন?
আজকের সমাজে এখনও কন্যাভ্রূণ হত্যা রোখার নামে চলে রাজনীতি। এখনও মেয়েরা পিতার স্মরণ করতে গেলে পড়েন সামাজিক রোষের মুখে।
আজকাল সব জায়গায় স্ত্রী শক্তির আরাধনা ঘিরে চলে বাণিজ্য, রাজনীতি, সমাজনীতির, উৎসব, থিম, প্রসেশান, প্রতিযোগীতা। সবকিছু অশুভকে ভুলে উৎসবে মেতে ওঠে মেয়েরাও।
এখানেই একটা প্রশ্ন সেটা হল পুত্র সন্তান না থাকলে কী পিতা জল পাবে না? অনেকের মতে কোনো পিতার যদি পুত্র সন্তান না থাকে তাহলে কন্যাও শুধু একমাত্র পিতার জন্য তর্পণ করতেই পারে।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.